স্মার্টফোনের ওয়েদার অ্যাপে দেখাচ্ছে, দিনের তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচণ্ড গরম পরিবেশ। কিছুক্ষণ রোদে হাঁটলেই ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা। অথচ আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার চেয়ে বাইরের তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি কম। তারপরও কেন গরম লাগে?
দেহের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সবচেয়ে ভালো কাজ করে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায়। এজন্য একে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। কখনো দেহের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে কমলে বা বাড়লে শরীর তা জানান দেয়। শীত লাগে, কিংবা গরমে আইঢাই অবস্থা হয়। অনেক সময় আবার অসুস্থ হয়ে পড়ি আমরা। দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যগ্রহণ।
বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত খাবার খেতে হয় আমাদের। খাবারের মাধ্যমে কোষ পুষ্টি ও শক্তি পায়। দেহকোষ তখন নিজে বাড়ে, বিভাজিত হয়। চলে দক্ষযজ্ঞ। কোষের নানা কার্যক্রমের কারণে দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে দেহ সেই তাপ পরিবেশে বের করে দেয়। দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার সঙ্গে পরিবেশের তাপমাত্রার একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে।
পানি যেমন উঁচু জায়গা থেকে নিচু জায়গার দিকে প্রবাহিত হয়, তাপ তেমনি বেশি তাপমাত্রার অঞ্চল থেকে কম তাপমাত্রার অঞ্চলে যায়। কোষের কার্যক্রম দেহে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলতে থাকে। ফলে বিরতিহীনভাবে তাপ উৎপন্ন হয় দেহে। বাড়ে দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা। আগেই বলেছি, দেহের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হলে সেটা নানাভাবে দেহ করে দেয়। সমস্যা হলো, এই বের করে দেওয়ার হার সবসময় সমান হয় না। মানে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পরিবেশে দেহ যত দ্রুত ঠান্ডা হয়, ৩০ ডিগ্রিতে তত দ্রুত ঠান্ডা হতে পারে না। কারণ, এ অবস্থায় পরিবেশের তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি। তাই দেহের তাপ ছাড়ার হার কমে যায়। আর দেহ থেকে তাপ অপেক্ষাকৃত ধীরে বের হলে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যায় খানিকটা। ফলে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি হলেও, পরিবেশের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে আমাদের গরম লাগে। হাঁসফাঁস লাগে।
তাপমাত্রা ছাড়া অবশ্য আরও বিষয় আছে। বাতাসের আর্দ্রতা, শারীরিক সমস্যাসহ আরও কিছু কারণে গরমের অনুভূতি কম-বেশি হতে পারে। আবার সব মানুষের দেহের তাপমাত্রা একই থাকে না। মানুষভেদে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেও তারতম্য হয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস ম্যাগাজিন