মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ৭ বিস্ময়কর ছবি

মহাকাশ থেকে পৃথিবীর এই ছবিগুলো তোলা হয়েছে ল্যান্ডসেট প্রকল্পের সাহায্যে। এ প্রকল্পে মোট ৮টি স্যাটেলাইট রয়েছে। প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের যৌথ উদ্যোগে। ১৯৭২ সালে স্যাটেলাইটগুলো উৎক্ষেপণ করা হয়। আর এ প্রকল্পের ৯ম স্যাটেলাইটটি চলতি বছর সেপ্টেম্বরে উৎক্ষেপণ করা হবে। নাসার আর্থ অবজারভেটরি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এ স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর ৯০ লাখের বেশি ছবি তুলেছে। এর মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি ছবি ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রে। এরকম ৭টি বিস্ময়কর সুন্দর ছবি নিয়ে এ আয়োজন।

যেখানে বালিয়াড়ি শেষ

ল্যান্ডসেট ৮ স্যাটেলাইটের সাহায্যে ছবিটি তোলা হয়েছে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর। ছবিতে বিশ্বের একমাত্র উপকূলীয় মরুভূমি ‘নামিব মরুভূমি’ ও পাথুরে পর্বতমালা ‘নামিব-নওক্লুফট পার্ক’-এর ছবি দেখা যাচ্ছে। আলাদা রঙের পর্বতমালা ও মরুভূমি এতে এক জায়গায় এসে মিশেছে। ছবির দুটি স্থানই নামিবিয়ায়। এর মধ্যে নামিব মরুভূমি প্রায় ২৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে। এই মরুভূমিতে রয়েছে আয়রন অক্সাইড। ফলে বালি লালচে-কমলা রঙের দেখাচ্ছে।

বর্ণিল ইউকন-কুসকোকিম

ছবিটি ইউকন-কুসকোকিম ব-দ্বীপের। আসলে ইউকন ও কুসকোকিম দুটি আলাদা নদী। এগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে বেরিং সাগরে এসে পড়েছে। ব-দ্বীপটি এখানেই। এই ব-দ্বীপের আয়তন প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার। ২০২১ সালের ১৯ মে ল্যান্ডসেট ৮ স্যাটেলাইটের সাহায্যে ছবিটি তোলা হয়েছে। ছবিতে সবুজ অঞ্চলে রয়েছে জীবন্ত গাছপালা। হলুদ অঞ্চলে শুধু মাটি এবং বাদামি অঞ্চলের সাহায্যে মৃত গাছপালার অঞ্চল বোঝানো হচ্ছে।

রাশিয়া রহস্যময়!

উত্তর রাশিয়ার মারখা নদীর আশপাশের পাহাড়ে এই উদ্ভট ঢেউ দেখা যায়। মহাকাশ থেকে ছবিটি দেখে মনে হয়, প্যাটার্নগুলো যেন গাঢ় ডোরা কাটা। লাইভ সায়েন্স-এর তথ্যানুসারে, ওই অঞ্চলে কেন এমন রহস্যময় প্যাটার্ন তৈরি হয়, তা জানে না স্বয়ং নাসাও। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বৃষ্টিপাত বা তুষার গলার কারণে এমনটা হতে পারে। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর ল্যান্ডসেট ৮ স্যাটেলাইটের সাহায্যে ছবিটি তোলা হয়েছে। আর এই প্যাটার্নের মাঝে সাপের মতো আঁকাবাঁকা যে লাইন দেখা যাচ্ছে, তা মারখা নদী।

মাটি ও পানির পার্থক্য

যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার আটচাফালা ব-দ্বীপ থেকে এই আকর্ষণীয় ছবিটি তুলেছে ল্যান্ডসেট ৮। তবে ছবিটা যতটা রঙিন দেখা যাচ্ছে, মূল ছবিটা তত রঙিন নয়। মূল ছবির রং খানিকটা পরিবর্তন করা হয়েছে। আসলে মাটি ও পানির পার্থক্য দেখানো হয়েছে এখানে। ১৯৮২ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে নেওয়া এই অঞ্চলের ১০ হাজার ল্যান্ডসেট ছবির মধ্যে এটি একটি। মার্কিন ভূতত্ত্ববিষয়ক জার্নাল জিওফিজিকাল রিসার্চ লেটারস-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে ছবিটি। এটি তোলা হয়েছিল ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর।

নানা রঙের উত্তর চীনের জিনসেং খামার

২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ল্যান্ডসেট ৮ স্যাটেলাইটের সাহায্যে তোলা হয়েছে এ ছবি। এটি উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংজিয়াং প্রদেশের কৃষিজমির ছবি। এতে নীল, বেগুনি ও হলুদ কাঠামোর যে কাভারগুলো দেখা যাচ্ছে, তা আসলে প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের কাভারের এই শেডগুলোর নিচে বেড়ে উঠছে আদার মতো দেখতে ছোট গাছের মূল। এগুলো সরাসরি সূর্যের আলোয় বাঁচতে পারে না বলেই এমন শেডের ব্যবস্থা।

ছবির মতো সুন্দর পেনসিলভেনিয়া পাহাড়

এই ছবিটিও ল্যান্ডসেট ৮ স্যাটেলাইটের সাহয্যে তোলা হয়েছে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর। ছবিতে দুটি টেকটোনিক প্লেটের সীমানায় গঠিত দুটি বিকৃত পর্বতমালার একীভূত চিত্র দেখানো হয়েছে। এই অঞ্চলটি ভ্যালি অব রিজ প্রদেশ নামে পরিচিত। এই প্রদেশটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে আলবামা পর্যন্ত প্রসারিত। 

রক্তহৃদ!

রক্তের মতো লাল এই হ্রদ তানজানিয়ায় অবস্থিত। ছবিটি ল্যান্ডসেট ৮-এর সাহায্যে ২০১৭ সালের ৬ মার্চ তোলা হয়েছে। এটি একটি ক্ষারীয় হ্রদ। এই হ্রদের পাশেই অবস্থিত আগ্নেয়গিরি থেকে আসা সোডিয়াম কার্বনেট ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট লবনের গলিত মিশ্রণের কারণে হ্রদটি এমন লাল দেখায়। এখানকার গড় তাপমাত্রা বছরে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বছরে মাত্র ৫০০ মিলিমিটারেরও কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ অঞ্চল পৃথিবীর সবচেয়ে কঠোর পরিবেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। 

সূত্র: লাইভ সায়েন্স