প্রায় ৩৮০ থেকে ৭৫০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যর তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ ধরা পড়ে আমাদের চোখে। একে বলা হয় দৃশ্যমান আলো। আমরা যতো রঙ দেখি তা নির্ভর করে আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের উপরে। অর্থাৎ পদার্থবিজ্ঞানের হিসেবে রঙ নিছকই একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ ছাড়া আর কিছু নয়।
কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে একথা পুরোপুরি খাটে না। রঙ আমাদের অনুভূতির সাথে যুক্ত। সবারই কোনো না কোনো পছন্দের রঙ আছে। পছন্দের সেই রঙ আমাদের জীবনের অনেক সিদ্ধান্তকে সরাসরি প্রভাবিত করে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের পছন্দের রঙ থাকে কেন? এর পিছনের কারণটা কী?
আদিমযুগে বেঁচে থাকার জন্য রঙ বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার ছিলো বলে মনে করেন অনেক বিজ্ঞানী। প্রকৃতির বিভিন্ন রঙ দেখে বিপদ বা পরিস্থিতি বুঝতে নিত তখনকার মানুষ। আকাশের রঙ নীল রঙ মানে সুন্দর আবহাওয়া। আবার কালো হওয়ার অর্থ দূর্যোগ বা রাত। রাত মানেই বিপদের নানা আশঙ্কা। প্রকৃতির সবুজ রঙ মানে খাবারের সম্ভাবনা। অন্যদিকে অসুস্থতা, মানুষের বর্জ্যের রঙ ফ্যাকাশে বা ম্যাড়ম্যাড়ে হলুদ, রক্তের রঙ টকটকে লাল। তাই, এরকম রঙকে বিপদজনক হিসেবে ধরা হতো।
রঙের প্রতি সংবেদনশীলতা আমাদের জেনেটিক বিষয়। জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই আমাদের মধ্যে রঙের ব্যাপারে পছন্দ-অপছন্দ তৈরি হওয়া শুরু করে। শিশুদের বেলায় দেখা যায়, তারা অনুজ্জ্বল রঙের চেয়ে বেশি পছন্দ করে উজ্জ্বল রঙ।
রঙ পছন্দ-অপছন্দের জন্য শুধু জেনেটিক কারণই দায়ী নয়, পারিপার্শ্বিকতা, সংস্কৃতি এসব বিষয়ও বড় প্রভাব ফেলে। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে যেমন মেয়েদের মধ্যে ছোট থেকেই গোলাপী রঙ পছন্দের প্রবণতা দেখা যায়, তেমনি ছেলেদের মাঝে গোলাপী রঙ পছন্দের বিষয়কে দেখা হয় নেতিবাচক হিসেবে। তাই ছেলেদের পছন্দের রঙের তালিকা থেকে গোলাপী বাদ পড়ে শুরুতেই।
এছাড়া মানুষের ব্যাক্তিগত মানসিকতার ওপরেও রঙের পছন্দ-অপছন্দ নির্ভর করে। অর্থাৎ, পছন্দের রঙ থাকার পিছনে অনেকগুলো ফ্যাক্টর একসাথে কাজ করে
ব্যাক্তিভেদের এই ফ্যাক্টরগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়। আবার পরিস্থিতি অনুযায়ীও ফ্যাক্টর বদলে যায়। তাই, পছন্দের রঙে এতো বৈচিত্র্য পৃথিবীজুড়ে। আর এই বৈচিত্র্য আছে বলেই, পৃথিবীটা এতো রঙিন, এতো সুন্দর।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: সায়েন্স ফোকাস