পৃথিবীর কোনো মানুষ বর্তমানে বাস করে না

মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে শুরু হয়েছে সময়ের যাত্রা। এরপর থেকে সময় শুধু চলছে, কখনো থামেনি। সময়কে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তাই মানবজীবনে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে সময় সব জায়গায় সমানভাবে চলে না। কোথাও দ্রুত, কোথাও বা ধীরে। এগুলো সবই বিজ্ঞানের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়। চলুন, সময়ের এই আজব আচরণ নিয়ে ৭টি তথ্য জানা যাক। এগুলো শুনে অদ্ভুত মনে হলেও সবগুলোই সত্যি...

আলবার্ট আইনস্টাইনছবি: সংগৃহীত

১. পায়ের চেয়ে মুখে সময় দ্রুত চলে

শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে। কিন্তু ঘটনা সত্যি। আপনি যদি দাঁড়িয়ে থাকেন, তাহলে পায়ের চেয়ে শরীরের ওপরের যে কোনো অংশে সময় দ্রুত চলবে। কারণ, আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে, আপনি পৃথিবীর কেন্দ্রের যত কাছে থাকবেন, সময় হবে তত ধীরে হবে। এটা কিন্তু শুধু তাত্ত্বিক কথা নয়। পরিমাপ করেও দেখা হয়েছে। আপনি যদি মাউন্ট এভারেস্টের ওপরে থাকেন আর আপনার বন্ধু নিচে থাকে, তাহলে দুজনের মধ্যে সময়ের পার্থক্য হবে প্রায় ১৫ মাইক্রোসেকেন্ড। এক সেকেন্ডের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ সময়কে বলে এক মাইক্রোসেকেন্ড।

২. সেকেন্ড মানে আপনি যা জানেন তা নয়

সাধারণত আমরা এক মিনিটের ৬০ ভাগের এক ভাগকে সেকেন্ড বলি। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে এটা সেকেন্ডের সংজ্ঞা নয়। সহজে বোঝার জন্য আমরা এক মিনিটের ৬০ ভাগের এক ভাগ সময়কে সেকেন্ড বলি। ঐতিহাসিকভাবে আবার এক দিনের ৮ লাখ ৬৪ হাজার ভাগের একভাগ সময়কেও সেকেন্ড বলে। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে শূন্য কেলভিন তাপমাত্রায় একটা অনুত্তেজিত সিজিয়াম ১৩৩ পরমাণুর ৯,১৯২,৬৩১,৭৭০টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে, তাকে এক সেকেন্ড বলে।

৩. আপনি দ্রুত চললে সময় ধীরে চলবে

আমাদের সঙ্গে সময় বিপরীতে আচরণ করে। আমি যদি দ্রুত চলি সময় অমনি ধীর হয়ে যাবে। যত দ্রুত চলবো, সময় তত ধীর হবে। ধরুন, আমি আলোর গতির ৯৯ ভাগ গতিতে পৃথিবী থেকে সাইরাস নক্ষত্রমণ্ডলে ঘুরতে গেলাম। যাত্রা শুরুর আগে আমার বয়স ২০ বছর এবং আমার বাবার বয়স ছিল ৪৫ বছর। সাইরাস থেকে ঘুরে আসতে আমার আড়াই বছর লাগল। অর্থাৎ আমি যখন পৃথিবীতে ফিরব, তখন আমার বয়স হবে ২২.৫ বছর। কিন্তু এই আড়াই বছরে আমার বাবার বয়স হবে ৬২ বছর। মানে আমার আড়াই বছরে বাবাসহ পৃথিবীর সবার বয়স বেড়েছে ১৭ বছর। আমি যেহেতু অনেক দ্রুত ভ্রমণ করেছি, তাই আমার জন্য সময় চলেছে ধীরে। কিন্তু আমার বাবা পৃথিবী থাকায় তার সময় আমার তুলনায় দ্রুত চলেছে।

৪. ডাইনোসরদের বছর হতো ৩৭০ দিনে

পৃথিবীতে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে ডাইনোসরদের রাজত্ব ছিল। বছরে ডাইনোসররা বর্তমানের চেয়ে প্রায় ৫ দিন বেশি রাজত্ব করতে পারত। কারণ, তখন বছর হতো ৩৭০ দিনে। প্রতি ১০০ বছরে মাত্র ১ দশমিক ৭ মিলিসেকেন্ড করে বাড়ে দিনের দৈর্ঘ্য। প্রতি সেকেন্ডের ১ হাজার ভাগের এক ভাগকে বলে এক মিলিসেকেন্ড। ফলে বছরের দৈর্ঘ্য কমে ৩৬৫ দিন হয়েছে।

৫. ২৪ ঘণ্টায় একদিন নয়

একদিন বলতে আমরা সাধারণত ২৪ ঘণ্টা বুঝি। এ হিসাবটাও সহজে বোঝার জন্য। আসলে একদিন বলতে পৃথিবীর নিজ অক্ষের ওপর একবার ঘুরে আসার সময়কে বোঝায়। পৃথিবী বর্তমানে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪.২ সেকেন্ডে একবার নিজ অক্ষের চারপাশে ঘোরে। অর্থাৎ একদিন হয় ওই ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪.২ সেকেন্ডে, ২৪ ঘণ্টায় নয়।

৬. আমরা কেউ বর্তমানে বাস করি না

আমরা যা-ই দেখি না কেন, তা অতীত। সকালে পূব আকাশে যে সূর্যটা দেখি, তাও অতীতের অবস্থা। কারণ, সূর্যোদয় হওয়ার প্রায় ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড পরে আমরা তা দেখি। অর্থাৎ, সূর্য যদি হঠাৎ উধাও হয়ে যায়, তাহলে আমরা ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড পরে তা টের পাবো। আপনার থেকে ১০ হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরও অতীতের ছবি আপনি দেখছেন। তা যত কম সময়ের হোক না কেন!

৭. মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে সময় গণনা করছেন

গোবেকলি তেপে খোদাই করা বিশ্বের প্রাচীনতম ক্যালেন্ডার
ছবি: মার্টিন সোয়েটম্যান

সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ১৩ হাজার বছরের পুরোনো ক্যালেন্ডারটি খুঁজে পাওয়া গেছে তুরস্কের গোবেকলি তেপে অঞ্চলে। তখনকার মানুষ পৃথিবীতে কোনো ধূমকেতু আঘাত হানার তারিখ লিখে রাখতে এই ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল। এটাই এখন পর্যন্ত পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ক্যালেন্ডার। সে হিসেবে মানুষ কয়েক হাজার বছর ধরে সময়ের হিসাব রাখছে।

সূত্র: বিবিসি ও বাজফিড ডট কম