বিজ্ঞান বা ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে গেলে বেশির ভাগ মানুষই খুব সিরিয়াস হয়ে যান। সহজ ভাষায় কৌতূহল জাগানো আলাপ হয়তো চলে, তবে সিরিয়াস সেই আলাপে অনেকেরই বোধ হয় মন বসে না। ঠিক এ ধরনের আগ্রহীদের জন্য দারুণ একটি সিরিজ রয়েছে। নামটাই মজার: কাঙ্ক অন আর্থ!
শুনতে অদ্ভুত শোনালেও ‘কাঙ্ক’ আসলে এই সিরিজের সঞ্চালক চরিত্রটি নাম। ফিলোমিনা কাঙ্ক। চরিত্রটি যিনি করেছেন, বাস্তবে তাঁর নাম হলো ডায়ান মরগান। সিরিজটির ক্যাটাগরি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘মকুমেন্টারি’; অর্থাৎ মক বা বিদ্রূপাত্মক ঘরানার ডকুমেন্টারি। সেই বিদ্রূপের ধাঁচটি আনতেই বোধ হয় সঞ্চালক চরিত্রটির এমন নাম।
এই সিরিজের ধাঁচটি এমন—সঞ্চালক পৃথিবীর সেই আদ্যিকালের ইতিহাস থেকে আলাপ করতে করতে ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন। আলাপের ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখানো হয় ভিডিওচিত্র। প্রাচীন গুহাচিত্র থেকে শুরু করে রেনেসাঁ, প্রিন্টিং প্রেস উদ্ভাবন বা বাষ্প ইঞ্জিন, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা—কী নেই!
এই সিরিজের ধাঁচটি এমন—সঞ্চালক পৃথিবীর সেই আদ্যিকালের ইতিহাস থেকে আলাপ করতে করতে ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন। আলাপের ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখানো হয় ভিডিওচিত্র। প্রাচীন গুহাচিত্র থেকে শুরু করে রেনেসাঁ, প্রিন্টিং প্রেস উদ্ভাবন বা বাষ্প ইঞ্জিন, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা—কী নেই! এই ভিডিওচিত্র ও আলাপের ফাঁকে ফাঁকে হাজির হন বিখ্যাত ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা। ইরাকি-ব্রিটিশ তাত্ত্বিক পদার্থবিদ জিম আল-খালিলি, ব্রিটিশ আর্ট ঐতিহাসিক ও এক্সিবিশন কিউরেটর মার্টিন কেম্প, ব্রিটিশ আগ্নেয়াস্ত্রবিষয়ক ইতিহাসবিদ জোনাথন ফারগুসন, যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ কলেজের বিজ্ঞানের ইতিহাসবিষয়ক লেকচারার প্যাট্রিসিয়া ফারার মতো অনেকে। তাঁদের সঙ্গে সঞ্চালক মজা করেন। রসিকতা করে এমন সব প্রশ্ন করেন, যা শুনে রীতিমতো পিলে চমকে যাবে আপনার!
একটা উদাহরণ দিই। গুহাচিত্র নিয়ে আলাপ করছেন কাঙ্ক। এর মধ্যেই তিনি কিছু গুহাচিত্র দেখিয়ে বলেন, ‘ধীরে ধীরে মানুষ এরকম গুহাচিত্র আঁকতে শুরু করে—মানুষ বনাম গরুর টুডি যুদ্ধ। গুহাবাসীদের কাছে এগুলো ছিল ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস পার্ট সেভেনের মতো রোমাঞ্চকর!’
এরপর ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ পল জি বনকে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘কোনো গুহাচিত্রকে কি চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়া হয়েছে? সেটার স্বত্ব বোধ হয় তারা চাইলেও পেত না, তাই না?’
পল জবাব দেন, ‘চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়েছে গুহাচিত্র আঁকা শেষ হওয়ার বহু বহুকাল পরে।’
কাঙ্ক বলেন, ‘তাহলে এমন কোনো গুহাচিত্র নেই, যা দেখে মানুষ ভেবেছে, “আরে, এ তো দুর্দান্ত ঘটনা। এটার চলচ্চিত্র বানাতে আমাদের স্টিভেন স্পিলবার্গকে দরকার!”’
পল বলেন, ‘গুহার কোনো একটি চিত্র দেড় ঘণ্টার গল্প বলবে, সেরকম গল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন।’
আরেকটি দৃশ্যে কাঙ্ক পলকে জিজ্ঞেস করেন, ‘প্রাচীন মানুষ কি আমাদের মতোই ছিল? তারা কি আমাদের মতো একই মাংসের তৈরি ছিল, নাকি “বিফ” বা “পর্ক”-এর মতো কোনো ব্র্যান্ড নাম ছিল তাদের মাংসের?’
আরেকটি দৃশ্যে কাঙ্ক পলকে জিজ্ঞেস করেন, ‘প্রাচীন মানুষ কি আমাদের মতোই ছিল? তারা কি আমাদের মতো একই মাংসের তৈরি ছিল, নাকি “বিফ” বা “পর্ক”-এর মতো কোনো ব্র্যান্ড নাম ছিল তাদের মাংসের?’
পল জবাব দেন, ‘যতদূর জানি, তাদের শুধু হাড় পাওয়া গেছে, আর সেগুলো আমাদের হাড়ের মতোই।’
অর্থাৎ কাঙ্ক বিদ্রূপাত্মক ঢঙে উদ্ভট সব প্রশ্ন করেন বটে, বিশেষজ্ঞরা এসব প্রশ্নের জবাব দেন ঠিক একাডেমিকভাবে, সঠিকভাবে, ভাবগাম্ভীর্য ঠিক রেখেই।
এভাবে মজায়-আনন্দে রসিকতায় পাঁচ পর্বের এই ছোট্ট সিরিজে আপনি মানবসভ্যতার গল্পটা শুনতে পারবেন, হাসতে হাসতে ঢুকে যাবেন রেনেসাঁয়, যন্ত্রযুগের সূচনার গল্প শুনবেন, জানবেন আধুনিক সভ্যতার বড় বিষয়গুলো।
পাঁচ পর্বের এই সিরিজ দেখা যাবে নেটফ্লিক্সে। এ ছাড়াও ইন্টারনেটের নানা কোণায় ছড়িয়ে থাকা আরও বহু উপায় তো রয়েছেই। বিজ্ঞান ও মানুষের ইতিহাস জানতে আগ্রহীদের সিরিজটি ভালো লাগবে, এমন আশা বোধ হয় করাই যায়।