বিজ্ঞানচিন্তার স্টলে শিশুদের দিনভর উল্লাস

বর্ণমেলায় হাসির ঝিলিক বুথে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকেরাছবি: জাহিদুল করিম

‘সকালে স্কুলে গিয়েছিলাম শহীদ মিনারে ফুল দিতে। স্কুলের অনুষ্ঠান শেষ করে বান্ধবীরা বলল, চলো বর্ণমেলা থেকে ঘুরে আসি। সবার সঙ্গে প্রথমবার এলাম বর্ণমেলায়। মেলায় প্রবেশের পর দেখলাম, শুরুর দিকের একটি স্টলে অনেক ভিড়। সেখানে গিয়ে দাঁড়াতে দেখি, সবাই বিজ্ঞানচিন্তার স্টলে সুডোকু, পাজল, ট্যানগ্রাম, কুইজের মতো আকর্ষণীয় সব খেলা খেলছে। বেশ কিছুক্ষণ পর আমি সুযোগ পাই ছবি দেখে বিজ্ঞানী চেনা খেলায়। সেখানে সাত বিজ্ঞানীর ছবি ছিল। আমি সেখান থেকে চারজন বিজ্ঞানীর নাম বলতে পেরেছি। পুরস্কার হিসেবে আমাকে বিজ্ঞানচিন্তার ২৫ সালের জানুয়ারি সংখ্যা দেওয়া হয়। বেশ কয়েক ধরনের চকলেটও পেয়েছি। আমি দারুণ খুশি!’ ধানমন্ডি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার বর্ণমেলায় এসে নিজের আনন্দের কথা এভাবেই জানান।

বিজ্ঞানচিন্তার ওয়েবসাইটে আগে থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, বর্ণমেলায় থাকছে বিজ্ঞানচিন্তা। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে শিশু-কিশোররা মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে আসে ধানমন্ডির সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে। দিনভর সেখানে আয়োজিত হয় নানামাত্রিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বর্ণমেলার এবারের আয়োজন সাজানো হয় শিশুদের কেন্দ্র করে। সে জন্য বিজ্ঞানচিন্তার স্টলেও ছিল সব বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য নানা আয়োজন। আর বিজয়ীদের দেওয়া হয় বিজ্ঞানচিন্তা নতুন সংখ্যা, চকলেট, ম্যাঙ্গোবার, আইসক্রিম, বিস্কুট, কাপকেক, জুসসহ আরও অনেক কিছু। যারা সব কটি খেলায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছে, তারা বিশেষ পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে এবারের বইমেলায় প্রকাশিত বিজ্ঞানের বই। বই জেতার সুযোগ পেয়েছে মাত্র দুজন­।

আরও পড়ুন
জার থেকে একটি করে কাগজ তোলে। কাগজে লেখা প্রশ্নের উত্তর দিলেই মিলবে মজার মজার পুরস্কার। মহাকাশ, গণিত, জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানচিন্তা সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রশ্ন ছিল জারে।
বর্ণমেলা
ছবি: সৌরভ দাশ

বিজ্ঞানচিন্তার স্টলে সবার আগ্রহ ছিল মূলত পাজল, ট্যানগ্রাম ও কুইজে। নালন্দা হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র দিব্য নাথ পাজল ও ট্যানগ্রাম মিলিয়ে জিতে নেয় বিজ্ঞানচিন্তার দুটি সংখ্যা। সে বলে, ‘পাজলটি মেলাতে আমার বেশিক্ষণ সময় লাগেনি। তবে ট্যানগ্রামটি শেষ করতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগেছে। লাইনে দাঁড়ানো সবাই বলছিল, তাড়াতাড়ি শেষ করো। আমি নার্ভাস হয়ে পড়ি। তাও শেষ করি। পাজল ও ট্যানগ্রাম মিলিয়ে আমি জিতে নিয়েছি দুটি বিজ্ঞানচিন্তা।’

স্টলে কুইজ খেলার জন্য ছিল একটি জার। অংশগ্রহণকারীরা জার থেকে একটি করে কাগজ তোলে। কাগজে লেখা প্রশ্নের উত্তর দিলেই মিলবে মজার মজার পুরস্কার। মহাকাশ, গণিত, জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানচিন্তা সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রশ্ন ছিল জারে। স্কলার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির জুবায়ের ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রথমে কুইজে অংশগ্রহণ করি। জার থেকে কাগজ তুলে দেখি, প্রশ্ন এসেছে, এখন পর্যন্ত কতজন মানুষ চাঁদে পা রেখেছেন? একটু ভেবে উত্তর দিই দশ জন। আমাকে বলা হয়, আর একবার সুযোগ দিচ্ছি, ভেবে উত্তর দাও। তখন উত্তর দিই, ১২ জন। এবারে উত্তর সঠিক হয়। পুরস্কার পাই একটি আইসক্রিমের কুপন। খুব মজা লেগেছে কুইজ খেলে।’

স্টলে সুডোকু রাখা ছিল। আগ্রহীরা নিজেদের সুডোকুর কাগজ সংগ্রহ করে। সমাধান করে স্টলে জমা দেয় সেগুলো। সেখান থেকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। পরে তারা পুরস্কার বুঝে নেয় স্টল থেকে। এভাবে মজার মজার খেলা খেলে সারাদিন কাটে শিশু-কিশোরদের।

আরও পড়ুন
বর্ণ-রঙের খেলা, গ্রামবাংলার বিভিন্ন রকম ঐতিহ্যবাহী খেলা, বর্ণমালা ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরার আয়োজন, বর্ণ ও ভাষার নকশায় করা পোশাক, বই, খাবারসহ বিভিন্ন অনুষঙ্গের প্রদর্শনী...
আরও পড়ুন
ম–তে ‘মা’
ছবি: জাহিদুল করিম

শুধু বিজ্ঞানচিন্তাই নয়, দিনভর বর্ণমেলায় ছিল নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন, যাতে এ প্রজন্মের সামনে আমাদের ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য ছিল বর্ণের নকশা তৈরির প্রতিযোগিতা ‘বর্ণ কারিগর’, সুন্দর হাতের লেখার প্রতিযোগিতা ‘বর্ণলিখন’, ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা ‘বর্ণাঙ্কন’, প্রিয়জনের (দাদা–দাদি, নানা–নানি) কাছে চিঠি লেখা প্রতিযোগিতা এবং ‘ফিরে যাই দুরন্ত শৈশবে মেতে উঠি গানের উৎসবে’ আয়োজন। আরও ছিল বর্ণ-রঙের খেলা, গ্রামবাংলার বিভিন্ন রকম ঐতিহ্যবাহী খেলা, বর্ণমালা ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরার আয়োজন, বর্ণ ও ভাষার নকশায় করা পোশাক, বই, খাবারসহ বিভিন্ন অনুষঙ্গের প্রদর্শনী, ভাষা ও বর্ণের গান, কবিতা, পাপেট বা মাপেট শো এবং বর্ণের ডাকটিকিট প্রদর্শনীর মতো আকর্ষণীয় বিষয়। দেশ সেরা লেখক, শিল্পী, গায়ক, বুদ্ধিজীবীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।

প্রথম আলোর আয়োজনে বর্ণমেলায় পৃষ্ঠপোষকতা করে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড মেরিল বেবি। এ আয়োজনের প্রচার সহযোগী ছিল এটিএন বাংলা।