আইইউবিতে অনুষ্ঠিত হলো গ্যালাক্সির বিবর্তনবিষয়ক একাডেমিক আলোচনা সভা। গত ২৮ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) নির্মীয়মাণ সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি, স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড এস্ট্রোফিজিকসে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এটিই এই সেন্টারের প্রথম আলোচনা সভা। এতে বক্তব্য রাখেন কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল ফেলো সৈয়দা লাম্মীম আহাদ। আয়োজনটি করেছেন আইইউবির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও সহকারী অধ্যাপক খান মুহাম্মদ বিন আসাদ।
সৈয়দা লাম্মীম আহাদের বক্তব্যের বিষয় ছিল—উচ্চ ঘনত্বের পরিবেশে গ্যালাক্সিদের বিবর্তন: হাইড্রোডায়নামিক সিমুলেশন ও বহুতরঙ্গ পর্যবেক্ষণ থেকে উপলব্ধি। এই গবেষক কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটারলু সেন্টার ফর এস্ট্রোফিজিকসে গবেষণা করছেন বর্তমানে। তাঁর বক্তব্যে তিনি নিজের পিএইচডি গবেষণা সহজ ভাষায় তুলে ধরেন পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, প্রকৌশল ও কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। এতে শিক্ষার্থীরা তাঁর কাজ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা পেয়েছেন।
এ ধরনের আলোচনা সভাকে ইংরেজিতে বলা হয় কোলোকুইয়াম (Colloquium)। অর্থাৎ একাডেমিক আলোচনা সভা বা কনফারেন্স। আইইউবিতে অনুষ্ঠিত কোলোকুইয়ামে উপস্থিত ছিলেন আইইউবির অফিস ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের রিসার্চ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনসের পরিচালক অধ্যাপক আরশাদ মোমেন, ভৌত বিজ্ঞান বিভাগে স্ট্রিং থিওরি নিয়ে গবেষণারত সহকারী অধ্যাপক জুয়েল কুমার ঘোষসহ আরও অনেকে। এ ছাড়া প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী ও গবেষক এতে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি আরও দশ জন অংশ নিয়েছেন অনলাইনে। খান মুহাম্মদ আসাদের ‘অ্যাটমস্ফিয়ারিক অ্যান্ড স্পেস ফিজিকস’ নামে চলমান কোর্সের ১৭ জন শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন তাঁদের ফাইনাল পরীক্ষার সিলেবাসের অংশ হিসেবে।
সৈয়দা লাম্মীম আহাদ আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের চারটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ—সিমুলেশন, পর্যবেক্ষণ, যন্ত্র ও তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। পদার্থবিজ্ঞানের প্রাসঙ্গিক সব সমীকরণ ব্যবহার করে তাত্ত্বিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের বিভিন্ন যুগের বিভিন্ন অংশ সুপারকম্পিউটারে সিমুলেট করেন। অন্য দিকে পর্যবেক্ষণের কাজে নিবেদিত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এসব সিমুলেশনের সঙ্গে তাঁদের পর্যবেক্ষণের মিল খোঁজার জন্য তৈরি করেন বিভিন্ন ধরনের দুরবিন। এ দুরবিনের ডেটা আবার সুপারকম্পিউটারে বিশ্লেষণ করা হয়। লাম্মীম আহাদ তাঁর ২০২১ সালের পেপারে১ এমনই একটি বড় মাপের সিমুলেশনের সঙ্গে পর্যবেক্ষণের তুলনা তুলে ধরেন। ‘হাইড্রান্জিয়া’ নামে এই সিমুলেশন তৈরি করতে অনেক উচ্চ ক্ষমতার সুপারকম্পিউটারেরও লেগেছে প্রায় এক বছর। বিজ্ঞানীরা প্রায় এক দশক পরিশ্রম করে এমন একটি সিমুলেশনের জন্য প্রাসঙ্গিক সব সমীকরণ প্রস্তুত করেন। এ সিমুলেশনের উপাত্ত ব্যবহার করে পরবর্তী এক থেকে দুই দশক কাজ করতে পারেন গবেষকেরা। লাম্মীম আহাদও সে কাজই করেছেন। তাঁর কাজের মাধ্যমে জানা গেছে, হাইড্রান্জিয়া সিমুলেশনে পাওয়া বিভিন্ন গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্য বাস্তবতার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। ক্লাস্টারের ভেতরে ডার্ক ম্যাটার বা গুপ্তবস্তুর ভর ও গ্যালাক্সিদের সব তারার ভরের বিবর্তনে যে ভিন্নতা বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই জানতেন, তাও তিনি সিমুলেশনে খুঁজে পেয়েছেন।
এরপর লাম্মীম আহাদ তাঁর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে প্রকাশিত দুটি গবেষণাপত্র নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেন। অনেক গ্যালাক্সি ক্লাস্টারে এমন নক্ষত্র পাওয়া যায়, যারা কোনো নির্দিষ্ট গ্যালাক্সির অংশ নয়, বরং আন্তঃগ্যালাক্টিক স্থানে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করে। এ সব নক্ষত্র থেকে পাওয়া আলোকে বলা হয় ইন্ট্রাক্লাস্টার লাইট বা আইসিএল। ক্লাস্টারের বদলে গ্যালাক্সি গ্রুপে (কয়েক শ গ্যালাক্সি) এমন নক্ষত্র পাওয়া গেলে সেগুলোকে বলে ইন্ট্রাগ্রুপ লাইট বা আইজিএল। এক্স-রে দুরবিন দিয়ে গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের আন্তঃগ্যালাক্টিক গ্যাস দেখা যায়। কিন্তু এই গ্যাস অনেক সময়ই ক্লাস্টারের ডার্ক ম্যাটারের বিন্যাসের সঙ্গে মেলে না। সে তুলনায় আইসিএল ডার্ক ম্যাটার বিন্যাসের সঙ্গে বেশি মেলে। ডার্ক ম্যাটার যেহেতু সরাসরি দেখা যায় না, তাই আইসিএল বা আইজিএলের মাধ্যমে ডার্ক ম্যাটারের বিন্যাস বোঝা যেতে পারে।
টিকা১: https://ui.adsabs.harvard.edu/abs/2023MNRAS.518.3685A/abstract