ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি চিত্র প্রদর্শনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেটা অ্যান্ড ডিজাইন ল্যাবের আয়োজনে গত ২৫ মে, শনিবার এ আয়োজনের পর্দা উঠেছে। শেষ হবে ৬ জুন, বৃহস্পতিবার। দিনের যেকোনো সময় এ প্রদর্শনী দেখা যাবে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ডেমো পাসপোর্ট তৈরি করতে চাইলে যেতে হবে বিকাল ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে।
ডেমো পাসপোর্ট মানে, কারো ছবি ও তথ্য ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি কৃত্রিম পাসপোর্ট। এর কোনো ব্যবহারিক প্রয়োগ নেই। অর্থাৎ, এই পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশ যাওয়া যাবে না। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারসাজি দেখতে পারবেন স্বচক্ষে। মজার এই ডেমো পার্সপোর্ট তৈরির কাজ করছে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী থেকে ছবি, নাম, বিভাগের নাম ইত্যাদি নেওয়া হয়। এরপর তথ্যগুলো ইনপুট দিয়ে তৈরি করা হয় পাসপোর্ট। পাসপোর্টে ব্যবহারকারীর ছবির জায়গায় শুধু অবয়বটি নেওয়া হয়। এরপর অবয়বে রঙের প্রলেপ দিয়ে বিমূর্ত একটি ছবি তৈরির মাধ্যমে পাসপোর্টের কাজ শেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে এই ছবি দেখে বোঝার উপায় নেই, এটা আপনি নাকি অন্য কেউ। মূলত নাম দেখে নিজের ডেমো পাসপোর্টটি চিনতে পারবেন।
আসলে ব্যবহারকারীর ছবির বদলে রঙিন দৃষ্টি নন্দন যে ছবি পাসপোর্টে দেখা যায়, সে ছবিতে কোথায় কতটুকু রং কী পরিমাণে ব্যবহৃত হবে, তা নির্ধারণ করা হয় ব্যবহারকারীর বিভাগের বায়ুদূষণ, শব্দদূষণের ওপর। তবে এই তথ্য দেওয়া হয় র্যান্ডম ডেটা থেকে। ধরুন, আপনি ডেমো পাসপোর্ট তৈরি করবেন। প্রথমে আপনার ছবি ও তথ্য ব্যবহার করে একটা কিউআর কোড দেওয়া হবে। সেই কোডটি স্ক্যান করলে নিচের ছবির মতো একটা ডেমো পাসপোর্ট পাবেন। এটা নির্ধারিত হয়েছে ঢাকা বিভাগের তাপমাত্রা, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু একই সময়ে যদি আপনার বন্ধুও এই পাসপোর্ট তৈরি করে, তাহলে তার ডেটা আর আপনার ডেটা এক হবে না। কারণ, আগেই বলেছি, এটা র্যান্ডমভাবে ইনপুট দেয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তাই একই বিভাগে একই সময়ে দুজন মানুষ ডেমো পাসপোর্ট তৈরি করলেও সব তথ্য মেলে না।
উদাহরণ দিই। ধরুন, আপনি যখন ডেমো পাসপোর্ট করছেন, তখন সেখানকার তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু আপনার পাসপোর্টে তা প্রকাশ নাও পেতে পারে। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা র্যান্ডমভাবে ইনপুটে দেওয়া ২০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্য থেকে যেকোনো একটি সংখ্যা বেছে নিতে পারে। অর্থাৎ সেটা ২৫ ডিগ্রিও হতে পারে, আবার ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসও হতে পারে। একইভাবে বাকি তথ্যগুলোও র্যান্ডমভাবে বসে। তবে এটা ঠিক যে, আপনার শহরের তাপমাত্রা এখানে প্রকাশিত তাপমাত্রার কাছাকাছি হবে। আসলে, এই র্যান্ডম তথ্য জেনারেট করা, বিমূর্ত ছবি তৈরি, আপনার শহরের কোনো স্থাপনার তথ্য থেকে পাসপোর্টের বাঁয়ের পৃষ্ঠা (ছবিতে ওপরের অংশ) তৈরি ইত্যাদি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা করছে—সেটা দেখাতেই এই মজার পাসপোর্ট। তবে এসব ফাংশনের অন্য ধরনের ব্যবহার রয়েছে, যা বিভিন্ন বড় বড় সফটওয়্যারে দেখা যায়। এখানে শুধু তার ডেমো বা নমুনাটুকুর দেখা মিলবে এই মজার পাসপোর্টে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এই ডেমো পাসপোর্ট তৈরির এই কাজটি করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেটা অ্যান্ড ডিজাইন ল্যাব। ডেমো পাসপোর্টে ব্যবহৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পূর্ণ তাঁদের নিজেদের তৈরি।
এ প্রদর্শনী সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম জাবের বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কীভাবে ভালো কিছু করা যায়, সেই চেষ্টাই আমরা করছি। মানুষকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে আমরা এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি।’
এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে রয়েছে আজিজ শারাফির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি চিত্র প্রদর্শনী। তিনি এআই ব্যবহার করে দেশের সংস্কৃতি সঙ্গে মিল রেখে অনেকগুলো ছবি তৈরি করেছেন। যেমন রিকশা জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে। আজিজ শারাফি তাঁর ছবিতে নানাভাবে সেই সংস্কৃতিই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।