এই শতাব্দীর বিশের দশকে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। এই দুই দশকে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের অর্জিত সাফল্য মানব ইতিহাসের অতীত সামগ্রিক সাফল্যের প্রায় সমান।
কিন্তু নতুন মৌলের আবিষ্কার হঠাৎ থেমে গেল। অথচ পর্যায়বৃত্ত সারণিতে তখনও কয়টি ‘শূন্য’ ঘর অপূর্ণ রয়েছে। সেগুলো হলো ৪৩, ৬১, ৮৫ ও ৮৭ নম্বর।
প্রথম অচেনা: সপ্তম দলের মৌল, পারমাণবিক সংখ্যা ৪৩, সারণিতে ম্যাংগানিজ ও রেনিয়ামের মধ্যবর্তী।
দ্বিতীয় অচেনা: বিরল মৃত্তিক মৌলবর্গের স্যাঙাত, পারমাণবিক সংখ্যা ৬১।
তৃতীয় অচেনা: হ্যালোজেনদের মধ্যে সবচেয়ে ভারি, আয়োডিনের অগ্রজ। চারিত্র্যে দুর্বল ধাতব প্রবণতার অস্তিত্ব থাকায় তা রসায়নবিদদের কাছে বিস্ময়কর হওয়ার সম্ভাবনা। হ্যালোজেন আর ধাতু! দু-মুখো মৌলের কী আশ্চর্য দৃষ্টান্ত! বড় বাড়ির ৮৫ নং ঘরটি এর জন্য অপেক্ষারত।
চতুর্থ অচেনা: মৌলটি কৌতূহলোদ্দীপক! এটি অসম্ভব রাগী, ধাতুরাজ্যে সক্রিয়তম এবং হাতের তাপে গলনক্ষম। ক্ষার ধাতুর মধ্যে সবচেয়ে ভারি। পারমাণবিক সংখ্যা ৮৭।
অমীমাংসিত সমস্যাগুলো স্তূপে জমা হলো আরও একটি: ‘৪৩, ৬১, ৮৫ ও ৮৭ নম্বর রাসায়নিক মৌলের রহস্যময় অন্তর্ধান’। পুলিশি পরিভাষায় ‘নৈরাশ্যজনক ঘটনা’।
এই অচেনাদের বিবরণ বিজ্ঞানীরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। শার্লক হোমস সিগারেটের ছাই অথবা জুতার একটু কাদা থেকে অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারতেন। কিন্তু সামান্যতম অচেনা পদার্থ শনাক্তকরণে রসায়নবিদদের সূক্ষ্ম পদ্ধতির তুলনায় তা কিছুই নয়।
চতুর ওই গোয়েন্দাটির ভাগ্য কখনোই তাঁকে বঞ্চনা করেনি। কিন্তু রাসায়নিকদের কপালে তা ঘটেনি। রহস্যময় এই অচেনাদের খুঁজে বের করে তাদের যথাস্থানে রাখার চেষ্টায় রসায়নবিদরা বার বার ব্যর্থ হয়েছেন।
তাদের খোঁজা হয়েছে সিগারেটের ছাইয়ে, গাছপালার ভস্মে, দুষ্প্রাপ্যতম অস্বাভাবিক সব খনিজে, জাদুঘরের সেরা প্রদর্শনীসম্ভারে, সাগর ও মহাসাগরের জলরাশিতে। কিন্তু বৃথা!
এই অচেনাদের বিবরণ বিজ্ঞানীরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। শার্লক হোমস সিগারেটের ছাই অথবা জুতার একটু কাদা থেকে অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারতেন।
অমীমাংসিত সমস্যাগুলো স্তূপে জমা হলো আরও একটি: ‘৪৩, ৬১, ৮৫ ও ৮৭ নম্বর রাসায়নিক মৌলের রহস্যময় অন্তর্ধান’। পুলিশি পরিভাষায় ‘নৈরাশ্যজনক ঘটনা’।
আমাদের গ্রহের সরল পদার্থের তালিকা থেকে ওই মৌলগুলো অপসারণে প্রকৃতিরও কোনো ভূমিকা থাকা সম্ভব। হয়তো এটিও তার অন্যতম উদ্ভট খেয়াল...
বস্তুত, তা জাদু বলেই প্রতীয়মান হয়। অথচ বলা হয়, অলৌকিক ঘটনা বলে কিছু নেই। তা হলে বড় বাড়ির চার চারটি ঘর খালি কেন? তার কোনো কারণ তো তখনও জানা ছিল না।
শেষে এগুলোও অবশ্য ভর্তি হয়েছিল। তবে কৃত্রিম মৌল সংশ্লেষণে বিজ্ঞানীদের সাফল্যের পর।