কীভাবে এল মেনথল?

কিন্তু জানেন কি, এই মেনথল আসলে পুদিনা পাতার নির্যাস? আর এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অভিশাপের কাহিনি

মেনথল বা মিন্ট আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। সর্দি, কাশি, মাথাব্যথানাশক থেকে শুরু করে লজেন্স, কোমল পানীয়, টুথপেস্ট অব্দি এর বিস্তার। কিন্তু জানেন কি, এই মেনথল আসলে পুদিনা পাতার নির্যাস? আর এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অভিশাপের কাহিনি। অভিশাপ শুনেই আঁতকে ওঠার কিছু নেই। কারণ, শাপে বরও তো হয়। আর তার সঙ্গে যদি একটু প্রেমকাহিনি জড়িয়ে থাকে, তবে তো কথা-ই নেই।

গ্রিক পুরাণ মতে, মিন্ট খুবই সুন্দর একটা নদীর নাম। গ্রিক দেবী নিম্পফের (nymph) নাম দেয় মিনথি (Minthe)। ঘটনাচক্রে গ্রিক দেবতা হেডাসের সঙ্গে প্রেম হয়েছিল তাঁর। হেডাসের বউ ছিলেন প্রোসফোনি। প্রোসফোনি এই প্রেম সহ্য করতে না পেরে অভিশাপ দিয়ে মিনথিকে ছোট এক গাছে পরিণত করে দেন। মানুষ মিনথিকে যাতে পায়ে মাড়িয়ে যায়, সেটাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু হেডাস এতে খুব কষ্ট পান। সহানুভূতি হিসেবে তিনি মিনথি নামের সেই ছোট গুল্মকে এক সুন্দর সুবাসে ভরে দেন। এতে সাধারণ মানুষ মিনথিকে না মাড়িয়ে তার সুবাসের প্রশংসা করতে শুরু করে। পুরাণ মতে, এরপর থেকেই নাকি এই গাছের পাতাকে বিভিন্ন উপায়ে কাজে লাগাতে শুরু হয়। তবে পুরাণের কথা বাদ দিলেও প্রাচীন গ্রিসে সুন্দর সুগন্ধি রূপে এর প্রচুর ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। আবার ধারণা করা হয়, প্রায় দুই হাজার বছর আগেও জাপানে এর ব্যবহার ছিল। মধ্যযুগে ইউরোপেও মিন্ট বা মেনথলের ব্যবহার খুব জনপ্রিয় ছিল। তারা এটাকে ভিনেগারের সঙ্গে মিশিয়ে মাউথওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করত।

মেনথল আসলে পুদিনা পাতার নির্যাস
এরপর ওয়াশিংটন শেফিল্ড নামের একজন দাঁতের চিকিত্সক প্রথম মেনথল ব্যবহার করে টুথপেস্ট উদ্ভাবন করেন। ভাগ্যিস, তিনি এটি করেছিলেন, নইলে স্বাদহীন টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজতে কেমন লাগত, ভাবা যায়!

১৮৭০ দশকের দিকে লন্ডনের এক কোম্পানি এই মিন্ট ফ্লেভার ব্যবহার করে অ্যালটিডস (Altoids) নামের লজেন্স বাজারজাত করে। স্মিথ অ্যান্ড কোম্পানি নামের সেই কনফেকশনারি রাতারাতি খুব নাম কামিয়ে ফেলে সামান্য মেনথলকে কাজে লাগিয়ে! এরপর ওয়াশিংটন শেফিল্ড নামের একজন দাঁতের চিকিত্সক প্রথম মেনথল ব্যবহার করে টুথপেস্ট উদ্ভাবন করেন। ভাগ্যিস, তিনি এটি করেছিলেন, নইলে স্বাদহীন টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজতে কেমন লাগত, ভাবা যায়! এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেনথলের জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার বাড়তে থাকে।

আসলে মেনথল হচ্ছে পুদিনা পাতার নির্যাস বা তেল দিয়ে তৈরি। এটি একধরনের জৈব যৌগ। ১৭৭১ সালে গাম্বিয়াস প্রথমবার এই তেল তৈরি করেন। পরীক্ষাগারে থাইমল (thymol) বা থ্রি-হাইড্রোক্সি-পি-সাইমেন (3-hydroxy-p-cymene) নামের যৌগের হাইড্রোজেন সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে মেনথল তৈরি করা যায়। মেনথল আমাদের চামড়ার কোল্ড-সেন্সেটিভ রিসেপ্টরকে (ঠান্ডা সংবেদী কোষ) সক্রিয় করে। সে জন্যই মিন্ট ফ্লেভারড যেকোনো কিছু মুখে দিতেই খুব ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভব হয়।

ভাগ্যিস, হেডাসের বউ এই অভিশাপ দিয়েছিলেন। তাইতো মিনথি থেকে এত কাজের মেনথল পাওয়া গিয়েছিল। নইলে আমাদের জীবনের অনেক কিছুই হয়তো পানসেই রয়ে যেত। একেই বলে শাপে বর!

লেখক: প্রাক্তন শিক্ষার্থী, লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

* লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার অক্টোবর ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত