তরমুজ লাল হয় কেন

তরমুজের মিষ্টি স্বাদ আর লাল রঙের জন্য প্রায় সবার কাছেই ফলটি জনপ্রিয়। বাজারে এখন তরমুজের ছড়াছড়ি। দেহের পানির অভাব পূরণে তরমুজের জুরি মেলা ভার। একটি তরমুজের মধ্যে প্রায় ৯২-৯৮% পানি থাকে। পানিশূন্যতা দূর করতে পর্যাপ্ত পানি পানের পাশাপাশি তরমুজ খাওয়া যেতে পারে। তার আগে চলুন, জেনে নেওয়া যাক এই ফলে কী কী রাসায়নিক উপাদান থাকে।

প্রথমে তরমুজের একটা মজার ইতিহাস বলি। তরমুজ নিয়ে একটা মারাত্মক বিতর্ক আছে।  তরমুজ ফল, নাকি সবজি? যারা তরমুজকে ফল হিসেবেই জানেন, তাঁরা হয়তো এই ইতিহাস জানার পর একটু নড়েচড়ে বসবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যে ২০০৭ সালে তরমুজকে নিজেদের ‘স্টেট ভেজিটেবল’ করার জন্য এক গণভোটের আয়োজন করেন। কারণ, তরমুজ নাকি অনেকটাই শসা বা কুমড়ার মতো! কথাটা কিন্তু ভুল নয়।

আরও পড়ুন

তরমুজ মূলত কিউকারবিটেসি পরিবারের উদ্ভিদ। এই পরিবারের সদস্যের মধ্যে আছে শসা আর কুমড়া। কিন্তু সত্য হলো, বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই এই পরিবারের উদ্ভিদগুলোকে ফল বলেন। ফলে তরমুজের বদলে তর্কটা হওয়া উচিত ছিল, কুমড়া আসলে ফল কি না! চীনারা তরমুজকে ব্যবহার করে সবজি হিসেবে, আবার রুশরা সবজির মতো ভাজি করে খায় তরমুজ। অনেকে বানায় আচার। যাই হোক, তরমুজ ফল নাকি সবজি, সেই বিতর্ক দূরে রেখে আপাতত এর ভেতরের রসায়নটা একটু দেখে নিই।

আগেই বলেছি তরমুজ কিউকারবিটেসি পরিবারের একটা লতানো উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম সিট্রুল্লাস ল্যানাটাস (Citrullus lanatus)। ইংরেজি নাম ওয়াটারমেলন। তরমুজের রং, গন্ধ আর স্বাদের পেছনে আছে বেশ কিছু রাসায়নিকের কারসাজি। তরমুজের রং দিয়েই শুরু করা যাক। এই ফলের ভেতরে উজ্জ্বল গোলাপি বা লাল টুকটুকে রঙের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। এই রঙের জন্য দায়ী লাইকোপিন নামে একটি যৌগ।

লাইকোপিন হলো ক্যারোটিনয়েড জাতীয় যৌগ। বিটা ক্যারোটিন যেমন গাজর আর কমলার রঙের জন্য দায়ী। আবার এই লাইকোপিন পাকা টমেটোতেও পাওয়া যায়। টমেটোর লাল রঙের জন্যেও দায়ী এই যৌগটি। তবে তরমুজে টমেটোর চেয়ে বেশি লাইকোপিন থাকে। প্রতি গ্রাম তরমুজে আনুমানিক ৭২ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত লাইকোপিন থাকতে পারে। আর কাঁচা টমেটোতে সর্বোচ্চ ৪২ মাইক্রোগ্রাম থাকে। ১৯১০ সালে সুইস রসায়নবিদ রিচার্ড এম. উইলস্টাটার এবং হেনরিখ এইচ. এসচার প্রথম টমেটো থেকে এই লাইকোপিন নামে রঞ্জক পদার্থটি আলাদা করেন। এটি একটা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও বটে।

তরমুজের সুগন্ধটাও কিন্তু আসে এর ভেতরের কিছু জটিল রাসায়নিক যৌগ থেকেই। আমরা যখন তরমুজ কাটি, তখন এর ভেতরের বিভিন্ন ফ্যাটি অ্যাসিডের এনজাইম্যাটিক অক্সিডেশনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় ৩,৬-ননাডিয়েনাল নামে জটিল এক অ্যালডিহাইড যৌগ। এই যৌগই  তরমুজের সুগন্ধের জন্য দায়ী। এজন্য একে ওয়াটারমেলন অ্যালডিহাইডও বলা হয়। এই জৈবযৌগ তরমুজকে সতেজ রাখতে কাজ করে। আবার অনেক সময় তরমুজ কাটার পর আমরা তাজা ঘাসের গন্ধ পাই। কারণ, তরমুজে ৩-হেক্সেনাল নামে আরেকটা যৌগ থাকে। একই যৌগ সাধারণত তাজা ঘাসেও পাওয়া যায়।

আর তরমুজের মিষ্টি স্বাদের পেছনেও রয়েছে রসায়ন। গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ আর সুক্রোজের বাহারি রকমের মিষ্টতা তরমুজের স্বাদকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

সূত্র : মেন্টাল ফ্লস, কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট, আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি

লেখক : শিক্ষার্থী, কৃষিবিজ্ঞান বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

আরও পড়ুন