রসায়নে প্রতীকের ব্যবহার

মৌলিক পদার্থগুলো মিলেই তৈরি হয় পৃথিবীর সব পদার্থ, যা কিছু আমরা দেখি

বিজ্ঞানে যতগুলো ভাগ আছে, এর মধ্যে গণিতের বাহাদুরি সবচেয়ে বেশি। গণিত দিয়েই বিজ্ঞানের সবকিছু লিখিত হয়, সবকিছু পঠিত হয়। সে পদার্থবিজ্ঞান বলি, রসায়ন বলি আর জীববিজ্ঞান। সব জায়গাতেই কোনো কিছু প্রকাশ করতে, কোনো কিছু বোঝাতে চাই গণিত। হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা মানুষের অত্যন্ত শক্তিশালী একটা ভাষা থাকলেও বিজ্ঞানের প্রকাশটা যে গণিত দিয়েই হয়, এর কারণটা গাণিতিক সুবিধা। গণিতের আছে সুশৃঙ্খল যৌক্তিক পদ্ধতি, যা দিয়ে যেকোনো জটিল বিষয়কে কিছু গাণিতিক প্রতীক দিয়ে প্রকাশ করা যায়। এই পদ্ধতি অন্য সবাই যে ব্যবহার করবে, এটাই স্বাভাবিক। রসায়নেও তাই এর ব্যবহার হয়। গাণিতিক পদ্ধতি মেনে রসায়নে প্রতীকের ব্যবহার, প্রক্রিয়ার ব্যবহার বিপুল। রসায়ন পড়তে গেলে তাই আপনাকে প্রতীক চিনতে হবে।

রসায়নের সুবিধা হলো এতে মৌলিক পদার্থের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত মৌলিক পদার্থ মাত্র ১১৮টি। মৌলিক পদার্থগুলো মিলেই তৈরি হয় পৃথিবীর সব পদার্থ, যা কিছু আমরা দেখি। এক বস্তু যে বিক্রিয়া করে আরেক বস্তুতে পরিবর্তিত হয়, নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া না হলে মৌলিক পদার্থে কোনো পরিবর্তনই হয় না। অর্থাৎ মৌলিক পদার্থের নানা সংমিশ্রণই ভিন্ন ভিন্ন পদার্থ। এ যে গণিতের ১০টি অঙ্কের মতো। ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯—মাত্র এই ১০টি অঙ্ক দিয়েই প্রকাশ করা যায় দুনিয়ার তাবৎ সংখ্যা। তেমনি রসায়নে ১১৮টি মৌলিক সংখ্যার জন্য ১১৮টি প্রতীক বরাদ্দ করলেই দুনিয়ার সব পদার্থকে প্রকাশের একটা উপায় বাতলে দেওয়া যাবে।

রসায়নের অন্য অনেক কিছুর মতো এই ক্ষেত্রেও আলকেমির অবদান আছে। আলকেমিতে প্রতীকের ব্যবহার ছিল শুধু সহজ বা যৌক্তিক করার জন্যই নয়, আলকেমি করাকে তো খুব একটা ভালো চোখে দেখা হয়নি, তাই অনেককেই লুকিয়ে করতে হতো এই চর্চা। তবে বিভিন্ন আলকেমিস্টদের মধ্যে একটা যোগাযোগ তো থাকতই। নিরাপদে ও সুরক্ষার সঙ্গে যোগাযোগের জন্যও নানা প্রতীকের ব্যবহার সে সময় ছিল। এসব প্রতীক থেকেই ধীরে ধীরে বর্তমানের প্রচলিত রাসায়নিক প্রতীকের উদ্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন
বর্তমানে যে প্রচলিত পদ্ধতি, এই পদ্ধতির পেছনে মূল অবদান বার্জেলিয়াসের। তখনকার দিনে ঊনবিংশ শতকে বিজ্ঞানের মূল ভাষাই ছিল লাতিন। তাই রাসায়নিক বস্তু ও প্রক্রিয়াগুলো লাতিন হরফ দিয়েই তিনি সংক্ষেপ করতে শুরু করেন।
আলকেমির বিভিন্ন প্রতীকের একটা তালিকা
ছবি: উইকিপিডিয়া

শুরুতে আমরা একটু আলকেমির প্রতীকগুলো দেখে নিতে পারি। প্রাচীন ধারণা অনুযায়ী চারটি মৌলের জন্য ছিল চারটি প্রতীক। বাতাস, মাটি, আগুন ও পানি বোঝানো হতো ত্রিভুজ দিয়ে, একটা ত্রিভুজকেই ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে চারভাবে। সাতটা ধাতুকে সংযুক্ত করা হতো সাতটা গ্রহের সঙ্গে। সিসাকে শনির সঙ্গে, টিনকে বৃহস্পতির সঙ্গে, লোহাকে মঙ্গল, স্বর্ণকে সূর্য, কপারকে শুক্র, পারদকে বুধ ও রুপাকে চাঁদের সঙ্গে। দেখাই যাচ্ছে সূর্য আর চাঁদকে তখন গ্রহ ধরা হতো। এই সাতটার জন্য আলাদা আলাদা প্রতীক ছিল। গ্রহগুলোর জন্য প্রচলিত প্রতীকের সঙ্গে মিল রেখেই ছিল এসব মৌলের প্রতীক।

এমন অন্য পদার্থ বা প্রক্রিয়ার জন্যও আলকেমিতে প্রতীক ছিল। এই প্রতীকগুলো বিভিন্ন ছবির আকৃতির, কোনোটা বৃত্তের মতো, কোনোটা ত্রিভুজ, কোনোটা নতুন চাঁদ। সেসব থেকে আস্তে আস্তে রাসায়নিক প্রতীকের উদ্ভব ঘটতে থাকে।

বর্তমানে যে প্রচলিত পদ্ধতি, এই পদ্ধতির পেছনে মূল অবদান বার্জেলিয়াসের। তখনকার দিনে ঊনবিংশ শতকে বিজ্ঞানের মূল ভাষাই ছিল লাতিন। তাই রাসায়নিক বস্তু ও প্রক্রিয়াগুলো লাতিন হরফ দিয়েই তিনি সংক্ষেপ করতে শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন মৌলের জন্য এক বা একাধিক লাতিন হরফ ব্যবহার করতে থাকেন। আলকেমিতে যে ছবি দিয়ে বিভিন্ন মৌলের প্রতীক বোঝানো হতো, এখানেই আসলে পার্থক্য হয়ে গেল রসায়নের প্রতীকে।

তখন থেকে শুরু করে বর্তমানেও প্রতিটি মৌলের জন্য এক বা একাধিক লাতিন হরফ বরাদ্দ। যেমন আমাদের অতিপরিচিত মৌল অক্সিজেনকে প্রকাশ করা হয় O দিয়ে, লোহাকে প্রকাশ করা হয় Fe দিয়ে। অক্সিজেনের ইংরেজি নাম অক্সিজেনই, তাই ইংরেজি নামের সঙ্গে বেশ মিলে যায় O, নামের প্রথম অক্ষর হিসেবে। কিন্তু লোহার ইংরেজি আয়রন থেকে I কিন্তু আসেনি, এসেছে লাতিন নাম ফেরাম থেকে Fe।

আরও পড়ুন
১১৮টি মৌলের প্রতীকই আসলে মনে রাখার প্রয়োজন হয় না। বারবার ব্যবহৃত হয়, এমন ৩০-৪০টি মৌলের প্রতীকই সাধারণত সবাই শেখে, এই প্রতীকগুলো জানা থাকলেই রসায়নের অধিকাংশ প্রক্রিয়া বোঝা যায়।
লাতিন হরফ থেকেই তো উদ্ভব ইংরেজি হরফের। এখন আসলে আমরা যখন রাসায়নিক প্রতীক লিখি, তখন ইংরেজি হরফেই লিখি। মৌলের সংখ্যা ১১৮টি। কিন্তু ইংরেজি প্রতীক তো মাত্র ২৬টি

সব প্রতীকই যে লাতিন থেকেই এসেছে, তা কিন্তু নয়, অন্য ভাষা থেকেও এসেছে। যেমন আরবি থেকে এসেছে পটাশিয়ামের প্রতীক K, জার্মান থেকে এসেছে টাংস্টেনের প্রতীক W।

লাতিন হরফ থেকেই তো উদ্ভব ইংরেজি হরফের। এখন আসলে আমরা যখন রাসায়নিক প্রতীক লিখি, তখন ইংরেজি হরফেই লিখি। মৌলের সংখ্যা ১১৮টি। কিন্তু ইংরেজি প্রতীক তো মাত্র ২৬টি। এই সমস্যার সমাধান দিতেই একাধিক বর্ণ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত মৌলের নামের প্রথম বর্ণ ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে লেখা হয়, সঙ্গে নামের মধ্যে অন্য কোনো বর্ণ ছোট হাতের অক্ষরে লেখা হয়। যেমন Ferrum থেকে Fe, Helium থেকে He, Einsteinium থেকে Es ইত্যাদি।

এক বর্ণ দিয়ে একটা মৌলের প্রতীক, এমন মৌল আছে ১৪টি। বাকি ১০২টি মৌলের প্রতিটি প্রতীকের জন্য দুইটি বর্ণ বরাদ্দ। A, D, G, E, J, L, M, Q, R, T, X ও Z—এই ১২টি বর্ণ দিয়ে কোনো মৌলের নাম নেই। কোন মৌলের প্রতীক কী, তা জানতে সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পর্যায় সারণি দেখা। আবার অনেক সময় সংক্ষেপ করার জন্য পর্যায় সারণিতে মৌলের পুরো নামটাই থাকে না, শুধু প্রতীকটি দেওয়া হয়।

১১৮টি মৌলের প্রতীকই আসলে মনে রাখার প্রয়োজন হয় না। বারবার ব্যবহৃত হয়, এমন ৩০-৪০টি মৌলের প্রতীকই সাধারণত সবাই শেখে, এই প্রতীকগুলো জানা থাকলেই রসায়নের অধিকাংশ প্রক্রিয়া বোঝা যায়। বিশেষ বিশেষ অবস্থায় অপ্রচলিত কোনো প্রতীক ব্যবহারের দরকার পড়লে পর্যায় সারণি দেখে নেন অধিকাংশ রসায়নবিদই।

এ তো গেল মৌলগুলোর নাম। কিন্তু পৃথিবীর সব পদার্থ তো মৌলিক পদার্থ নয়, আদতে মৌলিক পদার্থই খুব কম। অধিকাংশই যৌগিক পদার্থ। যৌগিক পদার্থগুলো আবার মৌলিক পদার্থের মিশ্রণে তৈরি। কিন্তু এখানে একটা ইউনিক ব্যাপার আছে। যৌগিক পদার্থগুলো মৌলের পরমাণুগুলোর নির্দিষ্ট উপায়ে যুক্ত হয়েই তৈরি হয়। উদাহরণ দিলে ভালো বোঝা যাবে।

আরও পড়ুন
সবচেয়ে পরিচিত এবং দরকারি যৌগ হলো পানি। পানি তৈরি হয় অক্সিজেন আর হাইড্রোজেন মিলে। যদি ভর হিসাব করা হয়, তবে দেখা যাবে ১৮ গ্রাম পানিতে ২ গ্রাম হাইড্রোজেন এবং ১৬ গ্রাম অক্সিজেন থাকে

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যৌগের কথা

পানি (H2O): পানির গুরুত্ব আলাদা করে বলার কিছু নেই। আসলে আমাদের জীবনের প্রধান যৌগ পানি। পানি ছাড়া প্রাণের উপস্থিতি এখনো বিজ্ঞান কল্পনা করতে পারে না। আমাদের শরীরের সবটুকু পানি যদি আলাদা করা হয়, তা হবে মোট ভরের ৬০ ভাগ।

খাবার লবণ (NaCl): রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। শুধু খাবারেই নয়, পরিষ্কার করার কাজেও ব্যবহার হয়। বলা হয় লবণের ১৪ হাজার নির্দিষ্ট ব্যবহার আছে।

সোডিয়াম হাইড্রোজেন কার্বনেট বা বেকিং সোডা (NaHCO3): বেকিং সোডা শুধু রান্নাঘরের বস্তুই নয়, প্রসাধন ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ব্যবহার আছে।

সুক্রোজ বা চিনি (C12H22O11): সুক্রোজ বা চিনি আমরা খাই, কিন্তু একই ধরনের আরও যৌগ উৎপন্ন হয় গাছের পাতায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়, যা পৃথিবীর সব প্রাণীর খাদ্যের উৎস।

সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট (NaClO): ব্লিচিং পাউডার নামে চেনে অনেকেই। ব্লিচ ব্যবহার করে মূলত রং দূর করা হয়। এ ছাড়া জীবাণুমুক্ত করা, দুর্গন্ধ রোধেও কার্যকরী পদার্থ।

হাইড্রজেন পার–অক্সাইড (H2O2): হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড খুব সহজেই ভেঙে অক্সিজেন আর পানিতে পরিণত হতে পারে। তাই জীবাণুমুক্ত করায় হাইড্রোজেন পার–অক্সাইডের বিপুল ব্যবহার আছে। ব্লিচের মতোই কাজ খানিকটা, কিন্তু হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড ব্যবহার করা যায় খাদ্যদ্রব্যেও। মাংস বা অন্যান্য খাদ্য, মাউথওয়াশের জন্য হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড ব্যবহার করা যায়।

অ্যাসিটোন (CH3)2CO): রসায়নবিদদের কাছে অ্যাসিটোনের বিপুল চাহিদা। যেকোনো কিছু দ্রবীভূত করার দরকারে অ্যাসিটোন খুবই কার্যকরী। দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায় বলে ল্যাবরেটরিতে যেকোনো অ্যাপারেটাস পরিষ্কার করতে অ্যাসিটোন ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে নেইলপলিশ রিমুভার হিসেবে ব্যবহার হয়। নেইলপলিশ রিমুভারের যে মিষ্টি গন্ধ, সেটা অ্যাসিটোনেরই।

মিথেন (CH4): বাসাবাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে যে গ্যাস সাপ্লাই দেওয়া হয়, তা মূলত মিথেন। মিথেনের সঙ্গে একই ধরনের আরও কিছু অ্যালকেন থাকে। মিথেন নিজেও অ্যালকেন গ্রুপের সদস্য। একটা অণুতে কার্বন আর হাইড্রোজেন সংখ্যা বাড়লেই অন্য অ্যালকেনগুলো অর্থাৎ ইথেন, বিউটেন বা অকটেন পাওয়া যায়।

কার্বন ডাই–অক্সাইড (CO2): কার্বন ডাই–অক্সাইড আমরা নিশ্বাস ত্যাগের সময় বাতাসে ছাড়ি। বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে কোষের মধ্যে কার্বোহাইড্রেটগুলো পোড়াতে গিয়ে কার্বন ডাই–অক্সাইড উৎপন্ন হয়। একইভাবে আগুন দিয়ে যখন আমরা কিছু পোড়াই, সাধারণত সব ক্ষেত্রেই কার্বন ডাই–অক্সাইড উৎপন্ন হয়। আগুন নেভানোর জন্য কার্বন ডাই–অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। কারখানাতে নানা জিনিসের উৎপাদনে বিক্রিয়ক হিসেবে কার্বন ডাই–অক্সাইড ব্যবহৃত হয়, এ ছাড়া কার্বনেটেড পানীয়গুলোতে মূলত উচ্চচাপে কার্বন ডাই–অক্সাইড দ্রবীভূত করা হয়।

অ্যামোনিয়া (NH3): অ্যামোনিয়া ঝাঁজালো দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস। জীবাণুমুক্ত করা ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদনে অ্যামোনিয়া একটি বিক্রিয়ক। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সার ইউরিয়া উৎপাদনে অ্যামোনিয়া প্রধান কাঁচামাল। এ জন্য ইউরিয়া থেকে অনেক সময় প্রস্রাবের মতো ঝাঁজালো গন্ধ আসে, কারণ প্রস্রাবেও অ্যামোনিয়া থাকে।

আরও পড়ুন
আমরা তো হাইড্রোজেনের প্রতীক জানি, H। আবার অক্সিজেনের প্রতীক O। দুটো মিলে যেহেতু হয় পানি, তাই পানিকে প্রকাশ করা হবে H ও O দিয়ে। এ ক্ষেত্রে একটা পানির অণুতে কয়টি হাইড্রোজেন এবং কয়টি অক্সিজেন পরমাণু আছে, তা ছোট করে প্রতীকের পাশে (সাবস্ক্রিপ্ট) লিখে দেওয়া হবে।

রসায়ন পড়তে গেলে এই মৌলগুলোর নাম এবং প্রতীক দরকার সবচেয়ে বেশি।

সবচেয়ে পরিচিত এবং দরকারি যৌগ হলো পানি। পানি তৈরি হয় অক্সিজেন আর হাইড্রোজেন মিলে। যদি ভর হিসাব করা হয়, তবে দেখা যাবে ১৮ গ্রাম পানিতে ২ গ্রাম হাইড্রোজেন এবং ১৬ গ্রাম অক্সিজেন থাকে। মজার ব্যাপার হলো, হাইড্রোজেন মাত্র দুই গ্রাম হলেও এই যৌগের ক্ষুদ্রতম একক একটা অণু নিলে সেখানে হাইড্রোজেন পাওয়া যাবে দুটি, অক্সিজেন পাওয়া যাবে একটি। ভরের হিসাবে হাইড্রোজেন খুবই ছোট, অক্সিজেনের ১৬ ভাগের ১ ভাগ। যাহোক, আমরা তো হাইড্রোজেনের প্রতীক জানি, H। আবার অক্সিজেনের প্রতীক O। দুটো মিলে যেহেতু হয় পানি, তাই পানিকে প্রকাশ করা হবে H ও O দিয়ে। এ ক্ষেত্রে একটা পানির অণুতে কয়টি হাইড্রোজেন এবং কয়টি অক্সিজেন পরমাণু আছে, তা ছোট করে প্রতীকের পাশে (সাবস্ক্রিপ্ট) লিখে দেওয়া হবে। তার মানে পানির সংকেত H2O। কিন্তু একটা পরমাণু থাকলে তা আর লেখা হয় না, ধরে নেওয়া হয় কোনো সংখ্যা লেখা না থাকলে একটা পরমাণুই আছে। তাই পানির অণুর আসল সংকেতটা হলো H2O।

আরও পড়ুন
একজন প্রশিক্ষিত রসায়নবিদ শুধু সংকেত দেখেই ওই পদার্থ সম্পর্কে অনেক কিছু বুঝতে পারেন, পদার্থটা কেমন হতে পারে, অন্য পদার্থের সংস্পর্শে কেমন ধর্ম দেখাবে ইত্যাদি ইত্যাদি

এখানে বলে রাখা উচিত, মৌলের যে সংক্ষিপ্ত প্রকাশ, একে বলে প্রতীক। কিন্তু যৌগের সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে বলে সংকেত।

এখন রসায়নে প্রতীকের একটা ক্ষমতা সহজেই বোঝা যাবে। একটা সংকেত দেখে চট করে বুঝে ফেলা যায় এই পদার্থটার মূলে কী কী আছে। শুধু কী আছে, তা–ই নয়, একটা অণুতে কতগুলো পরমাণু আছে, কোন পরমাণু কয়টা, তা–ও বলে ফেলা যায় সহজেই। এই পদ্ধতির ব্যবহার সুদূরপ্রসারী। একজন প্রশিক্ষিত রসায়নবিদ শুধু সংকেত দেখেই ওই পদার্থ সম্পর্কে অনেক কিছু বুঝতে পারেন, পদার্থটা কেমন হতে পারে, অন্য পদার্থের সংস্পর্শে কেমন ধর্ম দেখাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

এবার কয়েকটা যৌগের সংকেত দেখা যেতে পারে। বালুর সংকেত SiO2। একটা সিলিকন আর দুটি অক্সিজেন পরমাণু মিলে তৈরি হয় বালু। সে সিলিকন ব্যবহার করে বানানো হয় সিলিকন চিপ, সব ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির প্রধান উপাদান। একই সিলিকনই কিন্তু সৌরকোষে ব্যবহৃত হয়। আরেকটা অতিপরিচিত যৌগ কার্বন ডাই–অক্সাইড, যদিও একে আমরা দেখি না, কিন্তু প্রতিনিয়ত নিশ্বাসের সঙ্গে ছাড়ছি। আক্ষরিক অর্থেই প্রতি নিশ্বাসে মিশে আছে কার্বন ডাই–অক্সাইড, এর সংকেত CO2। একটা কার্বন আর দুটি অক্সিজেন মিলে হয় এই কার্বন ডাই–অক্সাইড। অতি জরুরি আরেকটা যৌগ হলো গ্লুকোজ।

তাই বহুল ব্যবহৃত প্রতীকগুলো চিনে নেওয়ার পর সহজেই আপনি একটা সংকেত দেখে বুঝে ফেলতে পারবেন, ওই পদার্থের মূলে কী আছে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, অনেক প্যাকেটজাত দ্রব্যের উপাদানের তালিকায় নামের সঙ্গে সংকেতও দেওয়া থাকে। যা খাচ্ছেন প্রতিদিন, ব্যবহার করছেন প্রতিমুহূর্তে, তার রাসায়নিক গঠনটা দেখে নেওয়া কিন্তু চমৎকার ব্যাপার। প্যাকেটের গায়ে না থাকলেও চট করে গুগল করেও দেখে নিতে পারেন।

লেখক: একাডেমিক কাউন্সেলর, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি

সূত্র: দ্য লাস্ট উইল অ্যান্ড টেস্টামেন্ট, বাসিল ভ্যালেন্টাইন, ১৬৭০

*লেখাটি ২০২০ সালে বিজ্ঞানচিন্তার আগস্ট সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন