শীতকালে শিশির জমে কেন

শিশির তৈরি হয় ঘনীভবন প্রক্রিয়ায়। বাষ্প বা গ্যাসীয় পদার্থ তরলে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ার নামই ঘনীভবন। বাতাসের আর্দ্রতা ঠান্ডা বা ঘনীভূত হয়ে ছোট ছোট পানির কণায় রূপান্তরিত হয়। এই পানির কণাকেই আমরা শিশির হিসেবে চিনি। এখন প্রশ্ন হলো, বাতাসের আর্দ্রতা বা বাতাস ঠান্ডা হয় কীভাবে?

পৃথিবীর তাপের প্রধান উৎস সূর্য। দিনের বেলায় সূর্যের তাপে পৃথিবীর উপরিভাগ উত্তপ্ত হয়। ফলে ভূপৃষ্ঠের পানি বাষ্প হয়ে মিশে যায় বাতাসে। দিনের শেষে রাত নামলে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়ে আসে। ফলে ঠান্ডা হয়ে যায় আমাদের চারপাশে বিভিন্ন বস্তু। বস্তু যত ঠান্ডা হয়, ততই শীতল হতে থাকে এর চারপাশের বাতাস ও বাতাসের আর্দ্রতা। আর্দ্রতা আর কিছুই নয়। বাতাসে মিশে থাকা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। যাহোক, ঠান্ডায় ঘনীভূত হয়ে আর্দ্রতা পরিণত হয় ছোট ছোট পানির কণা অর্থাৎ শিশির কণায়। একই ঘটনা আমরা দেখি ফ্রিজ থেকে বের করা ঠান্ডা পানির বোতলে। সেখানেও বিন্দু বিন্দু পানি জমে। এগুলো আসে কিন্তু বাতাসের জলীয় বাষ্প থেকে। তাই এটাও এক ধরনের শিশির।

শীতকালে উত্তর গোলার্ধে সূর্যের আলো কিছুটা তীর্যকভাবে পড়ায়, ভূ-পৃষ্ঠ কম উত্তপ্ত হয়। ঠান্ডা বাতাসে স্বাভাবিকভাবেই আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকে ।

যে তাপমাত্রায় বাতাসের জলীয় বাষ্প পানির কণায় পরিণত হয়, তাকে বলে ডিউ পয়েন্ট বা শিশির বিন্দু তাপমাত্রা। ভূপৃষ্ঠের অবস্থান, আবহাওয়া এবং দিনের দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে ডিউ পয়েন্ট ভিন্ন হতে পারে। শুষ্ক অঞ্চলের চেয়ে আর্দ্র অঞ্চল, যেমন ক্রান্তীয় কিংবা উপকূলীয় এলাকায় তুলনামূলক বেশি শিশির তৈরি হয়।

শীতকালে উত্তর গোলার্ধে সূর্যের আলো কিছুটা তীর্যকভাবে পড়ায়, ভূ-পৃষ্ঠ কম উত্তপ্ত হয়। ঠান্ডা বাতাসে স্বাভাবিকভাবেই আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকে । তবে, রাতের সন্ধ্যা থেকে সকালে তাপমাত্রা অনেক কম হওয়ার বাতাসের জলীয়ের বাষ্পের বড় একটা অংশ ঘনীভূত হয়ে শিশিরে পরিণত হয়।

তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়াও শিশির তৈরিতে বাধা দেয়। তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে ওই অঞ্চলে বায়ুমণ্ডল বরফ বিন্দুতে পৌঁছায়। ফলে সেখানে জলীয়বাষ্প আর ঘনীভূত হয়ে পানির কণায় পরিণত হয় না। সাবলিমেটস, অর্থাৎ সরাসরি বাষ্প থেকে কঠিন বরফে পরিণত হয়।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি