নভোচারীরা ভাসমান অবস্থায় থাকেন কেন

পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রায় ৯০ ভাগই মহাশূন্যযান পর্যন্ত পৌঁছায়। তাহলে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিভ্রমণরত মহাকাশযানের ভেতরে নভোচারীরা কেন ভেসে থাকেন? কেন পৃথিবীর আকর্ষণে মাটিতে পড়ে যান না? তাঁদের ওপর তো পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অন্তত ১০ শতাংশ কাজ করছে। সেই আকর্ষণ অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে কেন? এর সহজ উত্তর হলো, মহাশূন্যে পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী কোনো বস্তু ওজন হারায়, তাই ভেসে থাকে, মাটিতে পড়ে না। কিন্তু এত উঁচুতে থাকে বলেই কি বস্তু ওজন হারায়? না, তা নয়। আসল কারণ হলো, ওরা পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে বটে, কিন্তু এই পরিভ্রমণ আসলে পৃথিবীর দিকে পড়ন্ত বস্তু হিসেবে হচ্ছে। আর আমরা জানি, ওপর থেকে পড়ন্ত কোনো বস্তুর ওজন থাকে না। যেমন আমরা যখন উঁচু কোনো ভবনের ২০–৩০ তলা থেকে লিফটে দ্রুত নিচে নামতে থাকি, তখন বুক ঢিপ ঢিপ করে। মনে হয়, আমাদের ওজন কমে যাচ্ছে এবং প্রায় ওজনহীন অবস্থায় মাটিতে পড়ছি। আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকেই এটা আমরা বলতে পারি।

আরেকটি মজার উদাহরণ দেখুন। আমরা একটা ভারী ক্রিকেট বল ছুড়ে মারলাম। কিছু দূর গিয়ে সেটা মাটিতে পড়বে। এরপর আরও জোরে ছুড়ে মারলাম। বলটা আরও একটু দূরে গিয়ে মাটিতে পড়বে। আরও জোরে, আরও জোরে ছুড়ে মারলাম... একসময় দেখা যাবে, বলটা উঁচু আকাশে উঠে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে, মাটিতে পড়ছে না; অর্থাৎ ঘূর্ণমান অবস্থায় বলটি ওজন হারায়, তাই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে মাটিতে পড়ে না। এর মানে হলো, কক্ষপথে পরিভ্রমণরত বস্তু ওজন হারায়। সে জন্যই বলা যায়, রকেটের ভেতরে মহাকাশচারীরা ওজন হারান, ভেসে বেড়ান।

*টুডে আই ফাউন্ড আউট ওয়েব পেজে প্রকাশিত কয়েকটি লেখায় এসব বিষয়ে আরও মজার অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।

*লেখাটি ২০২৩ সালে বিজ্ঞানচিন্তার জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন