একবার ভেবে দেখুন, চোখের ভ্রু মাথার চুল বা মুখের দাড়ি-গোঁফের মতো বাড়ছে। তাহলে কী হতো? প্রতি মাসে বা সপ্তাহান্তে চোখের ভ্রু কাটতে সেলুনে যেতে হতো সবাইকে। কিন্তু আমাদের সৌভাগ্যই বলতে হবে, ভ্রু চুল বা দাড়ির মতো বাড়ে না। তাই নিয়মিত কাটতেও হয় না।
হিসেবে দেখে গেছে, প্রতি মাসে মানুষের মাথার চুল প্রায় আধ ইঞ্চি করে বাড়ে। এভাবে প্রতিবছর একেকটি চুল প্রায় ৬ ইঞ্চি বাড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, চুলের বয়স বেশি হলে তার বৃদ্ধির পরিমাণও একসময় কমতে থাকে। মূলত কোষ বিভাজনই চুল বৃদ্ধির কারণ। নতুন কোষ তৈরি হয়ে তা চুলের গোড়ায় জায়গা করে নেয়। এভাবে চুল ক্রমান্বয়ে লম্বা হতে থাকে। সুস্থ মানুষের মাথায় গড়ে ১০ লাখ চুল থাকে। প্রতি ১ থেকে ৬ বছর পর এসব চুল মাথা থেকে ঝরে যায়। এজন্য স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন মানুষের মাথা থেকে গড়ে ৪০-৫০টি চুল ঝরে পড়ে। ঝরে যাওয়া এসব চুলের জায়গা দখল করে নতুন জন্মানো চুল। কিন্তু যাদের মাথায় আর নতুন চুল গজায় না, তাদের মাথায় টাক পড়তে দেখা যায়।
মাথার চুলের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বৃদ্ধির ৩টি পর্যায় রয়েছে। এ পর্যায়গুলোকে বলা হয় যথাক্রমে ক্যাটাজেন, অ্যানাজেন এবং টেলোজেন পর্যায়। ক্যাটাজেন হচ্ছে চুলের প্রথম পর্যায়। এ পর্যায়ে দেহকোষে নতুন চুল জন্মায়। এরপর শুরু হয় অ্যানাজেন পর্যায়। এ পর্যায়ে কোষ বিভাজন বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় চুলের বৃদ্ধি। যেমন আগেই বলেছি, মাথার চুলের অ্যানাজেন পর্যায় সাধারণত ২ থেকে ৬ বছর। শেষ বা টেলোজেন পর্যায়ে চুলের গোড়ায় সম্পূর্ণ নতুন চুল গজায় এবং পুরাতন চুল ঝরে পড়ে।
মাথার চুলের চেয়ে চোখের ভ্রু ও পাপড়ি এবং হাত বা পায়ে চুল অনেক দ্রুত বেড়ে ওঠে। অর্থাৎ এসব এলাকার চুলের অ্যানাজেন বা বৃদ্ধি পর্যায় অনেক দ্রুত। মাত্র কয়েক মাসেই এসব চুল সম্পূর্ণ বৃদ্ধি পায়। তার পরপরই টেলোজেন পর্যায় শুরু হয়ে যায়। এ সময় নতুন ভ্রু পুরাতনের জায়গা দখল করতে থাকে। এ কারণে চোখের ভ্রু বা পাপড়ি দ্রুত পড়ে যায় এবং সেখানে নতুন চুল গজায়। তাই মাথার চুল অনেক বড় হলেও চোখের ভ্রু বা পাপড়ি বেশি বড় হতে দেখা যায় না।