চাঁদটা যেন সবসময় আমার সঙ্গে সঙ্গে চলে। ছোটবেলায় রাতের আকাশে চাঁদ দেখলে এ কথাই মনে হতো বারবার। কিন্তু দিনের বেলা সূর্যের আলোয় আর চাঁদ দেখা যায় না। তাহলে কি দিনের বেলা চাঁদমামার ছুটি?
অনেকে বলবেন, মোটেও না। দিনের বেলায়ও অনেকসময় চাঁদ দেখা যায়। আসলেও তাই। জোছনা রাত নিয়ে আমাদের যত ব্যাকুলতাই থাকুক না কেন, চাঁদ দিন-রাত বোঝে না। রাতের মতো দিনেও ‘মাঝেমধ্যে’ উঁকি দেয় মাঝ আকাশে। অনেকেই হয়তো বিষয়টি খেয়াল করেছেন। বিশেষ করে শরতের পড়ন্ত বিকেলে মেঘের ফাঁকে প্রায়ই দেখা মেলে শুভ্র চাঁদের। একটু আগে যে ‘মাঝেমধ্যে’ বলেছি, কথাটা হয়তো ঠিক হলো না। আসলে মাসের বেশির ভাগ দিনই দিনের আকাশে চাঁদ থাকে, যদিও আমরা হয়তো সেভাবে খেয়াল করি না। কিন্তু কীভাবে?
মাসের শুরুর দিকে চাঁদের আকার ছোট থাকে। অর্থাৎ উজ্জ্বলতাও অনেক কম থাকে এ সময়। তখন দিনের আকাশে অনুজ্জ্বল চাঁদ দেখা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায় এ কারণে। আর ভরা পূর্ণিমার চাঁদ একটু দেরীতে গোধূলীলগ্নে ভেসে ওঠে দিগন্তে। তাই এ সময়ে দিনে দেখা চাঁদ দেখা কঠিন।
পৃথিবী প্রতিনিয়ত বিরতিহীনভাবে ঘুরছে নিজ অক্ষে। ফলে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২ ঘন্টা সময় ধরে দিগন্তরেখার ওপরে থাকে চাঁদ। এই সময়ের মধ্যে আমরা সাধারণত রাতের অংশে চাঁদকে দেখি। রাতে দেখি, কারণ, চাঁদের নিজের কোনো উজ্জ্বলতা নেই। সূর্যের আলো প্রতিফলন করে চাঁদমামা। অবধারিতভাবেই তাই সূর্যের চেয়ে চাঁদের উজ্জ্বলতা কম। সে জন্য উজ্জ্বল সূর্যের আলোয় চাঁদকে সব সময় দেখা যায় না। রাতে সূর্যের আলোর অনুপস্থিতিতে নিজের সবটুকু রূপ নিয়ে আকাশে আলো ছড়ায় চাঁদ।
তবে চাঁদকে কতটা দেখব, সেটা নির্ভর করে মূলত চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্যের পারস্পরিক অবস্থানের ওপর। বিশেষ করে দিনের বেলার জন্য কথাটা আরও বেশি সত্যি। তার ওপর চাঁদের কক্ষপথটা এমন যে এটা ঘুরতে ঘুরতে অনেক সময় পৃথিবী থেকে খানিকটা দূরে চলে যায়। আবার কখনো কিছুটা এগিয়ে আসে। ফলে চাঁদের আকারেও কিছুটা তারতম্য দেখা যায়। মোদ্দাকথা হলো, যেখান থেকে দেখছি, পৃথিবীর সে অংশ থেকে চাঁদের যেটুকু আলোকিত অংশ দেখা যায়, সেটাকেই আমরা সে সময়ে চাঁদের আকার বলি। বাংলায় একে চাঁদের ‘তিথি’ও বলা হয়।
যেমন মাসের শুরুর দিকে চাঁদের আকার ছোট থাকে। অর্থাৎ উজ্জ্বলতাও অনেক কম থাকে এ সময়। তখন দিনের আকাশে অনুজ্জ্বল চাঁদ দেখা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায় এ কারণে। আর ভরা পূর্ণিমার চাঁদ একটু দেরীতে গোধূলীলগ্নে ভেসে ওঠে দিগন্তে। তাই এ সময়ে দিনে দেখা চাঁদ দেখা কঠিন। আসলে, চাঁদ প্রতিদিন পঞ্চাশ মিনিট দেরিতে ওঠে। তাই শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়ার চাঁদ ওঠে ভোরবেলা, আর অস্ত যায় সন্ধ্যাবেলা, সূর্যাস্তের একটু পর। দিনে সূর্যের তীব্র আলোর কারণে আমরা সেই চাঁদ দেখতে পাই না। সন্ধ্যায় শুধু অস্তগামী চাঁদ দেখা যায় খুব সামান্য সময়ের জন্য। অনেক সময় দেখাই যায় না। এ ছাড়া বাকি সময় দিনের অনেকটাজুড়ে আকাশে থাকে চাঁদ। আসলে চাঁদ যখন নিজের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর খুব কাছে চলে আসে, তখন যদি দিনের বেলাতেয় চাঁদের উজ্জ্বলতা আকাশের চেয়ে কিছুটা বেশি হয়, সে সময় চাঁদ দিনের আকাশেও দেখা যায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে এর দেখা পেতে পারেন নীল আকাশের পটে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন মানে, আবহাওয়া, আকাশের অবস্থা ইত্যাদির কথা বলছি।
সব ঠিক থাকলে দিনের আকাশেও দেখবেন, চাঁদমামা আপনার সঙ্গে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোচ্ছে।