পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি যদি হঠাৎ থেমে যায়?

এর আগে লিখেছি, চাঁদ যদি চুরি হয়ে যায়, তাহলে কী হতে পারে সে বিষয়ে। আজকের প্রশ্নটিও সে রকম একটি কল্পিত বিষয়। কিন্তু তাই বলে একেবারে হালকা নয়। স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন তাদের ২০১৮ সালের অক্টোবর সংখ্যায় এ বিষয় নিয়ে লিখেছে।

পৃথিবীর দুটি গতি। একদিকে সে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। প্রায় ৩৬৫ দিনে সে একবার সূর্য প্রদক্ষিণ করে। অন্যদিকে সে নিজ অক্ষরেখার চারদিকে ২৪ ঘণ্টায় একবার করে ঘুরে আসছে। এটাই পৃথিবীর আহ্নিক গতি। এই আহ্নিক গতি নিয়েই কথা। এই গতি কিন্তু কম নয়। আমরা সেটা টের পাই না। কারণ, মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে পৃথিবী ঘুরছে তার ওপরের সবকিছু নিয়ে। পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছি আমরা সবাই। ঘরবাড়ি, গাছপালা এমনকি বাতাস—সবকিছু। বিষুবরেখা অঞ্চলে পৃথিবীর আহ্নিক গতি সবচেয়ে বেশি। ঘণ্টায় এক হাজার মাইলের চেয়েও বেশি। এখন যদি সে থেমে যায়?

মহাসাগরের পানি উথালপাতাল শুরু করবে। সৃষ্টি হবে প্রলয়ংকরী সুনামি। আর বাতাসের ঝাপটায় ভূপৃষ্ঠের সবকিছু উড়ে যাবে। মোটকথা, পৃথিবী আর আমাদের সেই প্রিয় পৃথিবী থাকবে না। দুমড়েমুচড়ে একেবারে শেষ হয়ে যাবে
আরও পড়ুন

প্রথমেই যা ঘটবে, তা অকল্পনীয়। যেহেতু পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ঘুরছে, তাই পৃথিবী থেমে গেলে সঞ্চিত ভরবেগের প্রভাবে মানুষজন, ঘরবাড়ি সবকিছু সাংঘাতিক গতিতে পূর্ব দিগন্তের দিকে ছিটকে পড়বে। ভূত্বকের নিচের শিলারাশির ঘর্ষণে সৃষ্টি হবে ভূমিকম্প। মহাসাগরের পানি উথালপাতাল শুরু করবে। সৃষ্টি হবে প্রলয়ংকরী সুনামি। আর বাতাসের ঝাপটায় ভূপৃষ্ঠের সবকিছু উড়ে যাবে। মোটকথা, পৃথিবী আর আমাদের সেই প্রিয় পৃথিবী থাকবে না। দুমড়েমুচড়ে একেবারে শেষ হয়ে যাবে। প্রশ্ন হলো, এ রকম ঘটনার আশঙ্কা কতটা? এ রকম কি সত্যিই ঘটতে পারে? এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রায় অসম্ভব। কারণ, আহ্নিক গতির কারণে পৃথিবীর সবকিছুর মধ্যে যে পরিমাণ ভরবেগ সঞ্চিত হবে, তাকে থামাতে হলে ঠিক সেই পরিমাণ বা তারও বেশি শক্তির প্রয়োজন হবে। এত বিপুল শক্তির জোগান দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা পৃথিবীতে নেই। এখন বাইরের কোনো উৎস থেকে যদি সেই শক্তি আসে। সে রকম মহাজাগতিক দুর্ঘটনা তো ঘটতেই পারে। যদি সে রকম কিছু ঘটে, তাহলে তা হবে মহাবিপর্যয়।

* লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার অক্টোবর ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত