সূর্যের গ্রহগুলোর মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণ ধারণের উপযুক্ত বায়ুমণ্ডল আছে। এই বায়ুমণ্ডল কোটি কোটি বছরের বিশেষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম দিকে লাখ লাখ আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত ঘটত। তরল লাভার সঙ্গে প্রচুর বাষ্পও বের হতো। বাষ্প তো আসলে পানি, যার উপাদানগুলো হলো ২ ভাগ হাইড্রোজেন ও ১ ভাগ অক্সিজেন পরমাণু। অগ্ন্যুৎপাতে আরও বের হতো কার্বন ডাই–অক্সাইড ও অ্যামোনিয়া। ১টি কার্বন ও ২টি অক্সিজেন পরমাণু নিয়ে কার্বন ডাই–অক্সাইড অণু এবং ১টি নাইট্রোজেন ও ৩টি হাইড্রোজেন পরমাণু নিয়ে অ্যামোনিয়া অণু গঠিত। লক্ষ করলে দেখব, এসব অণু–পরমাণু নিয়েই মূলত বায়ুমণ্ডল গঠিত। অবশ্য আরও কিছু ছোটখাটো গ্যাসীয় অণু বাতাসে রয়েছে। ওগুলোও এসেছে সেই অগ্ন্যুৎপাতের সময় গলিত লাভার সঙ্গে। এখন প্রশ্ন হলো, আগ্নেয়গিরি থেকে তো মুক্ত অক্সিজেন বের হয়নি। তাহলে পৃথিবীর বাতাসে এত অক্সিজেন এল কীভাবে? অক্সিজেন এসেছে কার্বন ডাই–অক্সাইড ও বাষ্পীয় পানি থেকে। আমরা আগেই দেখেছি, এদের উপাদানে অক্সিজেন রয়েছে। এই অক্সিজেন গ্যাসীয় অণুগুলো থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে আসল ভূমিকা রেখেছে মহাসাগরের পানি ও প্রাথমিক স্তরের ব্যাকটেরিয়া। সূর্যের আলোও সেখানে ভূমিকা রেখেছে। সাগরের পানিতে কার্বন ডাই–অক্সাইডের একটি বড় অংশ দ্রবীভূত হয়। সেখান থেকে ব্যাকটেরিয়া সূর্যের আলো ও কার্বন ডাই–অক্সাইড নিয়ে শুধু কার্বনটুকু কাজে লাগায় ও অক্সিজেন মুক্ত করে। অন্যদিকে সূর্যের আলো অ্যামোনিয়ার অণু ভেঙে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন আলাদা করে। হাইড্রোজেনের ঘনত্ব খুব কম। হালকা বলে বেশ কিছু হাইড্রোজেন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল উপেক্ষা করে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায়।
প্রাণীরা বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন ডাই–অক্সাইড ত্যাগ করে। বিপরীতে উদ্ভিদ কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে। এই দুই গ্যাসীয় উপাদানের অনুপাতের হেরফের হলে বিপর্যয় দেখা দেবে। কারণ, বনভূমি কমে গেলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়, দেখা দেয় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অ্যামোনিয়া থেকে যায়। বাতাসে এখন প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ অক্সিজেন ও বাকি ৪ ভাগের সামান্য কম নাইট্রোজেন। এ ছাড়া রয়েছে ১ শতাংশের মতো কার্বন ডাই–অক্সাইড। সামান্য কিছু হিলিয়াম, আরগন, ক্রিপটন, নিয়ন, জেনন প্রভৃতি নিষ্ক্রিয় গ্যাসও আছে। পৃথিবীর আদি যুগে এসব গ্যাসের পরিমাণ কিন্তু ছিল খুবই কম। কালের বিবর্তনে পরিমাণ বাড়তে থাকে। গ্যাসগুলোর বর্তমানের এই নির্দিষ্ট অনুপাতে পৌঁছাতে প্রায় ৫০০ কোটি বছর লেগেছে। বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলোর এই অনুপাত পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য একেবারে আদর্শ। প্রাণী ও উদ্ভিদের ব্যবহারের জন্য গ্যাসগুলো এক অভাবনীয় অনুপাতে অবস্থান করছে। প্রাণীরা বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন ডাই–অক্সাইড ত্যাগ করে। বিপরীতে উদ্ভিদ কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে। এই দুই গ্যাসীয় উপাদানের অনুপাতের হেরফের হলে বিপর্যয় দেখা দেবে। কারণ, বনভূমি কমে গেলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়, দেখা দেয় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি। তখন পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়। এই প্রতিকূল প্রক্রিয়া এখনই শুরু হয়ে গেছে। সৌরমণ্ডলের অন্যান্য গ্রহে কিছু বায়ুমণ্ডল থাকলেও সেখানে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন কম বা একেবারেই নেই। মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল খুবই হালকা। গ্রহগুলোর বাইরে মহাশূন্যে বাতাস থাকতে পারে না, কারণ বাতাস ধরে রাখার জন্য দরকার অভিকর্ষ বল। কোনো বস্তুপিণ্ড তথা ভর ছাড়া তো অভিকর্ষ বল থাকে না। তাই পদার্থবিহীন মহাশূন্যে কোনো বাতাস নেই।