আমরা সবাই এখন জানি যে শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য কাচের থার্মোমিটার না হলেও চলে। একটি ছোট ইলেকট্রনিক যন্ত্র কপালের সামনে ধরলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেই যন্ত্রের পর্দায় ত্বকের তাপমাত্রা দেখা যায়। এটিই ইনফ্রারেড থার্মোমিটার। এই ইলেকট্রনিক যন্ত্র ইনফ্রারেড রশ্মি সেন্সর ব্যবহার করে কপালের ধমনিতে প্রবাহিত রক্তের তাপমাত্রা দেখায়। অফিস বা অনুষ্ঠানস্থল যেখানেই জনসমাগম বেশি, সেখানে এই বিশেষ থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়। করোনার জন্য সতর্কতার একটি বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে এটা এখন সব দেশে প্রচলিত। যদি জ্বর থাকে, তাহলে অনুষ্ঠানস্থল বা কর্মক্ষেত্রে তাঁর যাওয়া ঠিক হবে না বলে পরামর্শ দেওয়া হয়। তখন করোনা টেস্ট পজিটিভ কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। কারণ, করোনার একটি প্রধান উপসর্গ জ্বর, সেই সঙ্গে কাশি, শরীরব্যথা, খাওয়ায় অরুচি প্রভৃতি তো আছেই। সমস্যা হলো জ্বর মাপার জন্য কতটা সময় দেওয়া যায়। এটা গুরুত্বপূর্ণ। দেরি করা তো যাবে না। এখানে তাই কাচের প্রথাগত থার্মোমিটার চলবে না। মুহূর্তের মধ্যে পরীক্ষা করে ফলাফল জানতে হবে। ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের ব্যবহার এখানে সবচেয়ে কার্যকর। আজকাল কপালের তাপমাত্রা ছাড়াও একটি স্ট্যান্ডে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার লাগিয়ে রাখা হয়। এর লেন্সের সামনে হাতের তালু ধরলেও তাপমাত্রা জানা যায়। কপালের মাঝামাঝি অংশ বা হাতের তালু ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের লেন্স থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে রাখতে হয়। এ ব্যবস্থায় সাধারণত মুখের ভেতরের তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পার্থক্য হতে পারে। কারণ, বাইরের পরিবেশের প্রভাবে ত্বকের ও শরীরের ভেতরের প্রকৃত তাপমাত্রা কমবেশি হওয়া স্বাভাবিক। ইনফ্রারেড থার্মোমিটারে সাধারণত ৯৬ থেকে ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়।
তাহলে কাচের থার্মোমিটারের দরকার কী
একটা দারুণ প্রশ্ন। যেখানে একটা বোতাম টিপে চট করে জ্বর মাপা যায়, সেখানে অন্তত দুই মিনিট ধরে বগলের নিচে বা জিবের নিচে কাচের থার্মোমিটার লাগিয়ে কেন আমরা জ্বর মাপি। তাহলে অনেক কিছুর মতো, কি কাচের থার্মোমিটার অচল হয়ে যাবে? না, সেটা হয়তো হবে না। কারণ, কাচের থার্মোমিটারে শরীরের সঠিক তাপমাত্রা বা কোর টেম্পারেচার জানতে পারি। তবে বগলের নিচে তাপমাত্রা ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের তাপমাত্রার কাছাকাছি হয়ে থাকে। সামান্য পার্থক্য অবশ্য থাকে। বগলের নিচের অংশেও যেহেতু বাইরের আবহাওয়ার তাপমাত্রার প্রভাব পড়ে, সে জন্যই এ রকম হয়। কিন্তু জিবের নিচে থার্মোমিটার অন্তত দুই মিনিট রাখলে শরীরের কোর টেম্পারেচার মোটামুটি জানা যায়। জিবের কোমল টিস্যু ও শিরাবিন্যাস এমন যে কাচের থার্মোমিটার ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ পায় এবং প্রায় নিখুঁত তাপমাত্রা জানা যায়। সাধারণত হাতের নিচে প্রাপ্ত তাপমাত্রার চেয়ে জিবের নিচে এক-দেড় ডিগ্রি ফারেনহাইট বেশি থাকে। আর তা ছাড়া দুই মিনিট রাখতে হয়, না হলে প্রকৃত তাপমাত্রা হয়তো আসবে না। এত ঝামেলা সত্ত্বেও কাচের থার্মোমিটার টিকে থাকবে। ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করে যদিও সহজে রক্তচাপের মাত্রা জানা যায়, এমনকি একই সঙ্গে হৃৎস্পন্দনের পরিমাপও জানতে পারি, তারপরও চিকিৎসক সাধারণত প্রচলিত অ্যানালগ যন্ত্রে পারদস্তম্ভ দেখে রক্তচাপ মাপেন। এর একটি কারণ, এ পদ্ধতিতে সঠিক পরিমাপ পাওয়া যায়। ঠিক একই কারণে কাচের থার্মোমিটারে পারদস্তম্ভের মাত্রা দেখে জ্বর মাপার পদ্ধতি হয়তো আরও বেশ কিছু বছর টিকে থাকবে।