উদ্ভাবক নিকোলা টেসলার জীবন, কিংবদন্তী ও বাস্তবতা

নিকোলা টেসলা: ভুল সময়ে জন্ম নেয়া এক কিংবদন্তী উদ্ভাবক, আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ, প্রচ্ছদ: আদনান আহমেদ রিজন, পৃষ্ঠা: ১২৮, মূল্য: ২৮০ টাকা

টেসলা নামটি সর্বপ্রথম কোথায় শুনেছেন? বর্তমান এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অনেকেই হয়তো নামটি প্রথম শুনে থাকবেন ইলন মাস্কের ‘টেসলা’ গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির নাম হিসেবে। একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, আসল ঘটনা তা নয়। নামটি আপনি প্রথম শুনেছেন পদার্থবিজ্ঞান বইতে, চুম্বকক্ষেত্রের একক হিসেবে—টেসলা! যাকে (T) দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কে এই টেসলা?

ইন্টারনেটের দুনিয়ায় তাঁকে নিয়ে প্রচলিত আছে হাজারো কিংবদন্তী। কেউ বলেন তিনি বিজ্ঞানী, কেউ বলেন উদ্ভাবক, আবার কেউ বলেন দুটিই। টেসলা যে উদ্ভাবক, এ নিয়ে কোনো তর্ক নেই অবশ্য। তর্কটা তিনি বিজ্ঞানী কি না, তা নিয়ে। এই প্রশ্নের মীমাংসা হয়নি আজও। হবেই বা কীভাবে? যেকোনো প্রশ্নের সত্যিকার মীমাংসা হতে হলে, সমাধানটা মেনে নিতে হবে আপনাকে। টেসলার কিংবদন্তী এত বিস্তৃত, একেকজনের কাছে তাঁর পরিচয় একেকরকম। কিন্তু ওর ভেতরে বাস্তবতা কতটুকু? সেই বিষয়টিই এ বইতে বুঝতে চেষ্টা করেছেন লেখক।

প্রথম অধ্যায়ে তিনি পাঠককে সংক্ষেপে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন টেসলার সঙ্গে। দ্বিতীয় অধ্যায়টির বিষয়বস্তু টেসলার জনপ্রিয়তা। ইন্টারনেটে টেসলা এত জনপ্রিয় হলেন কীভাবে? ছোট্ট এই অধ্যায়টির সূত্র ধরেই এসেছে তৃতীয় অধ্যায়। টেসলাকে নিয়ে প্রচলিত কিংবদন্তীর কতটা বাস্তব?—এটাই এ অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয়। কিংবদন্তীগুলো শুনে থমকে যাবেন আপনিও।

প্রচলিত আছে, অল্টারনেট কারেন্ট (এসি) টেসলার আবিষ্কার। আপনি কি থতমত খেয়ে ভাবছেন, হ্যাঁ, তাই তো! উঁহু, অল্টারনেট কারেন্টের আবিষ্কারক টেসলা নন। হিপোলাইট পিক্সি ১৮৩২ সালে প্রথম এসি জেনারেটর উদ্ভাবন করেন।

‘ট্রান্সফরমারের উদ্ভাবক কে?’—এই প্রশ্নের জবাবেও আপনার মুখে যদি টেসলার নাম চলে আসে, থেমে যান। উত্তর সঠিক হয়নি! ইন্ডাকশন কয়েল, রাডারসহ আরও নানা উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িয়ে যায় টেসলার নাম। কেউ কেউ বলেন, টেসলা নাকি তারহীন বিদ্যুৎ দিতে চেয়েছিলেন সবাইকে বিনামূল্যে। এমনকি টেসলা ভবিষ্যৎ দেখতে পেতেন বলেও প্রচলিত আছে। এরকম উদ্ভট ও ভুল প্রচলিৎ কিংবদন্তীগুলোর ব্যবচ্ছেদ করেছেন লেখক এ বইতে। আলোচনা করেছেন টেসলা ও এডিসনের দ্বৈরথ নিয়ে। তুলে এনেছেন এর ভেতরের বাস্তবতা। এইটুকু হলো বইটির প্রথম অংশ।

বইটির দ্বিতীয় অংশে লেখক আত্মপ্রকাশ করেছেন অনুবাদক হিসেবে। আগ্রহী পাঠকের জন্য বাংলায় হাজির করেছেন টেসলার আত্মজীবনী—‘মাই ইনভেনশনস : দ্য অটোবায়োগ্রাফি অব নিকোলা টেসলা’।

টেসলা নিজের গল্পটা যেভাবে শুনিয়েছেন, সেভাবেই হাজির করেছেন লেখক তাঁর গল্পটা বাংলায়। পড়ে মনে হবে না অনুবাদ। ভাষান্তরের ফলে সৃষ্ট কোনো জড়তা নেই ভাষায়। ঝরঝরে ভাষায় টেসলার জীবনের নানা পর্বের গল্প জানা যাবে বইয়ের এ অংশে। তাঁর প্রথম আবিষ্কারের প্রচেষ্টা, কর্মজীবন, এডিসনের সঙ্গে দ্বৈরথ বিষয়ে তাঁর মন্তব্য—সবই আছে এতে।

এ বইতে পাঠক টেসলাকে আবিষ্কার করবেন নতুন করে। জানবেন ‘টেসলা-মিথ’-এর বাস্তবতা। আর, বইয়ের পাতায় পাতায় সংযোজিত ছবিগুলো ধারণা দেবে, জীবনের বিভিন্ন ধাপে টেসলা কেমন ছিলেন। দেখা যাবে, প্রচারবিমুখ বলে খ্যাত টেসলার অনেক ছবিই তোলা প্রচারের উদ্দেশ্যে। (অবশ্যই, প্রয়োজনে প্রচারণা খারাপ কিছু নেই। প্রচারণা মানেই খারাপ, এরকম দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না ভাবতে অনুরোধ করব পাঠককে।)

টেসলা এক রহস্যময় চরিত্র। লেখক আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ এই চরিত্র ভেঙে দেখিয়েছেন পাঠককে। তুলে এনেছেন টেসলার জীবনের আঁক-বাঁকগুলো। বইয়ের শেষে এসে পাঠক যেন নিজেই বুঝতে পারেন, টেসলাকে ছিলেন।

১২৮ পৃষ্ঠার ছোট এই বইটি প্রকাশ করেছে আদর্শ। পাওয়া যাবে বইমেলায় আদর্শ-এর স্টলে ও অফলাইন-অনলাইন সব বইয়ের দোকানে।