ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধান

মহাবিশ্বের বিশালতায় কোটি কোটি গ্যালাক্সি ও মহাশূন্যের মাঝে নিতান্ত সাধারণ এক গ্যালাক্সির নাম মিল্কিওয়ে। তার সর্পিলাকার বাহুগুলোর একটিতে; মিল্কিওয়ের কেন্দ্রেও নয়, এক পাশে একটি সাধারণ নক্ষত্র সূর্য। সেই সূর্যের আটটি গ্রহের একটি পৃথিবী। এই পৃথিবীর কোটি প্রাণের একটি মানুষ।

এ রকম গ্রহ মহাবিশ্বে কত কোটি রয়েছে, সেই চিন্তাটা করা সহজ; বিশালতাটুকু অনুভব করা যায় মনোযোগ দিয়ে ভাবলে। তবে বিপুলা মহাবিশ্বের বিশাল পরিসরের জন্য কাগজে-কলমে হিসাব করা কঠিন। বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত সামনে রেখে বলা যায়, সূর্য ছাড়াও অন্যান্য নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণরত প্রায় সাত হাজার গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে ইতিমধ্যেই। এত বিশাল মহাবিশ্বে কোথাও প্রাণ নেই—এ কথা তাই জোর দিয়ে বলা চলে না। যদিও এ রকম কোনো ভিনগ্রহী প্রাণের সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি।

না পেলে কী হবে, প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধান করে চলেছে। বহু কিংবদন্তি রয়েছে এ নিয়ে, লেখা হয়েছে শত শত বিজ্ঞান কল্পকাহিনি, নির্মিত হয়েছে হাজারো সায়েন্স ফিকশন মুভি। এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল, অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরের প্রাণ। সেই প্রাণের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান প্রচেষ্টাটা কেমন? এ নিয়েই রেজাউর রহমানের মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধান।

প্রস্তাবনা ও কিংবদন্তিতে ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধানের সাধারণ পরিচয় পর্বের পর তৃতীয় অধ্যায়টিতে তাই এই সংজ্ঞায়ন উঠে এসেছে বিস্তৃত পরিসরে। জীবের দেহ বাড়ে, শ্বাসপ্রশ্বাসের পাশাপাশি তার খাবার গ্রহণ ও তা হজম করে শক্তি উৎপাদন করতে হয়। প্রজননের বিষয়টি জীবের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন

ভিনগ্রহের প্রাণ শুনলেই মনে অদ্ভুতুড়ে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি ভেসে ওঠে বিজ্ঞান কল্পগল্পের কল্যাণে। তবে ভিনগ্রহের প্রাণ হতে পারে এককোষী, হতে পারে অপরিচিত অন্য কোনো রকম। সে জন্য প্রাণকে সংজ্ঞায়িত করা প্রয়োজন। প্রস্তাবনা ও কিংবদন্তিতে ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধানের সাধারণ পরিচয় পর্বের পর তৃতীয় অধ্যায়টিতে তাই এই সংজ্ঞায়ন উঠে এসেছে বিস্তৃত পরিসরে। জীবের দেহ বাড়ে, শ্বাসপ্রশ্বাসের পাশাপাশি তার খাবার গ্রহণ ও তা হজম করে শক্তি উৎপাদন করতে হয়। প্রজননের বিষয়টি জীবের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বৈজ্ঞানিক এই ভিত্তিগুলো নিয়ে আলোচনার পরের অধ্যায়ে উঠে এসেছে জীবনের একক ‘কোষ’-এর কথা। পরের অধ্যায়টিতে লেখক দেখিয়েছেন, মহাবিস্ফোরণের পর, মহাবিশ্ব যেখানে একই নিয়ম মেনে চলে বলে ধারণা করেন বিজ্ঞানীরা; সেখানে জীবনের সূত্রপাতও হওয়া উচিত একইভাবে। পরের অধ্যায়গুলোতে প্রাণের টিকে থাকার লড়াই ও জৈব রাসায়নিক উপাদান নিয়ে আলোচনা রয়েছে। বইটির শেষ তিন অধ্যায়ে আছে মঙ্গলে প্রাণ রয়েছে কি না, তার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কথা, পক্ষে-বিপক্ষের তর্ক-বিতর্কের কথা। আছে সেটির (সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ভিনগ্রহের প্রাণের খোঁজ, বহুদূর মহাকাশ থেকে আসা ওয়াও সিগন্যালসহ আরও অনেক কিছু।

আরও পড়ুন
সহজ ভাষায় এসব বিষয় জানতে-বুঝতে, বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিটুকু আত্মস্থ করতে বইটি বেশ সহায়ক। লেখক রেজাউর রহমান একদিকে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে কাজ করেছেন, অন্যদিকে পিএইচডি করেছেন চেক বিজ্ঞান একাডেমি—প্রাগ থেকে কীটতত্ত্বে।

মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধানে

রেজাউর রহমান

প্রকাশক: প্রথমা

প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী

পৃষ্ঠা: ৭২

প্রথম প্রকাশ: ২০০৯

দাম: ২০০ টাকা

সহজ ভাষায় এসব বিষয় জানতে-বুঝতে, বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিটুকু আত্মস্থ করতে বইটি বেশ সহায়ক। লেখক রেজাউর রহমান একদিকে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে কাজ করেছেন, অন্যদিকে পিএইচডি করেছেন চেক বিজ্ঞান একাডেমি—প্রাগ থেকে কীটতত্ত্বে। নানা ধরনের প্রাণ নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত গবেষণার পরিধি ও বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে ভূমিকা একদিকে আলোচনায় গভীরতা যেমন এনেছে, অন্যদিকে সহজে প্রকাশে হয়েছে সহায়ক। প্রচলিত ভাষায় যাকে বলে ‘এলিয়েন’, সেই ভিনগ্রহী প্রাণের মহাজাগতিক অনুসন্ধানে আগ্রহীদের জন্য বইটি নিঃসন্দেহে সুপাঠ্য। পাওয়া যাচ্ছে প্রথমা ডটকম, প্রথমার বইয়ের দুনিয়াসহ অনলাইন-অফলাইন বুকশপগুলোতে।

*লেখাটি ২০২৪ সালে বিজ্ঞানচিন্তার জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন