সহজ ভাষায় মহাবিশ্বের নানা রহস্য

মহাবিশ্বকে মোটা দাগে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক, ম্যাক্রো ইউনিভার্স ও দুই, মাইক্রো ইউনিভার্স। ম্যাক্রো ইউনিভার্স মানে, চারপাশে আমরা যা দেখি—স্বচক্ষে অথবা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে—তা হতে পারে আপনার বাসার চেয়ারটি অথবা আকাশের মেঘ, মহাকাশে নক্ষত্র বা গ্যালাক্সি ইত্যাদি। আর মাইক্রো ইউনিভার্স মানে পরমাণু বা আরও ছোট ক্ষুদ্র জগৎটি। দুটি জগতেই ঘটে চলেছে অবিশ্বাস্য, বিস্ময়কর সব ঘটনা। সে রকম বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে একগুচ্ছ প্রবন্ধের সংকলন সরোজ নাগের মহাবিশ্বের ইতিকথা

আমাদের গ্যালিক্সিটির নাম মিল্কিওয়ে। সবচেয়ে কাছের, আমাদের গ্যালাক্সি থেকে ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সি অ্যান্ড্রোমিডা। কালের আবর্তে দুটো গ্যালাক্সিতে হতে পারে সংঘর্ষ। কী ঘটবে সে সময়? ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর থেকে বেরোতে পারে না কিছুই। সেই কৃষ্ণগহ্বরই প্রচণ্ড শক্তিতে বাইরের দিকে ছড়িয়ে দেয় আলোকধারা—জেট। কৃষ্ণগহ্বর শুধু গিলেই নেয় না, জন্ম দেয় নক্ষত্রের। এই কৃষ্ণগহ্বর থেকে বিকিরণ হতে পারে—হকিং বিকিরণ।

মহাবিশ্বের বিশালতার মাঝে শুধু গ্যালাক্সি বা কৃষ্ণগহ্বর নয়, রয়েছে মহাজাগতিক রশ্মি, বিভিন্ন গ্রহাণু, নিউট্রন তারা, ওয়ার্মহোলসহ আরও অনেক কিছু। এরকম প্রায় ৬১টি নিবন্ধ রয়েছে বইটির প্রথম অধ্যায়ে। অধ্যায়টি নাম দেওয়া হয়েছে ‘বৃহত্তর মহাবিশ্ব’।

একনজরে

মহাবিশ্বের ইতিকথা

সরোজ নাগ

প্রকাশক: প্রান্ত প্রকাশন

প্রচ্ছদ: দেওয়ান আতিকুর রহমান

প্রথম প্রকাশ: ২০২৪

পৃষ্ঠা: ৪৪৭

দাম: ৬৫০ টাকা

‘ক্ষুদ্রতর মহাবিশ্ব’ নামের দ্বিতীয় অধ্যায়টিতে রয়েছে প্রোটনের ভেতরের জগতের কথা, রয়েছে হিগস বোসন ও ডব্লিউ বোসনের মতো কণাদের কথা, উপপারমাণবিক কণার অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য স্পিনের নানা দিক, কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্টসহ মোট ১৮টি বহুবিধ বিষয়।

বইটির প্রতিটি নিবন্ধ আলাদা। কলেবরে গড়পড়তা ২-৪ পৃষ্ঠার মতো। আলোচনার প্রয়োজনে কিছু অধ্যায়ের কলেবর অবশ্য ৮-১০ পৃষ্ঠাও হয়েছে। সাধারণ প্রাথমিক ধারণার জন্য আগ্রহী পাঠক বইটি পড়তে পারেন। তবে অধ্যায়গুলোতে আলোচনার খুব বেশি গভীরে যাওয়া হয়নি। বলা ভালো, সে উদ্দেশ্য মাথায় রেখে লেখাই হয়নি বইটি। প্রাথমিক ধারণা দেওয়াই এর লক্ষ্য। এর উদাহরণ হিসেবে ১০৭ পৃষ্ঠায় ‘হাবল ধ্রুবক’ অনুচ্ছেদের কথা বলা যায়। এটি প্রথম অধ্যায়ের ২১তম নিবন্ধ ‘বর্তমান বিজ্ঞানে কসমোলজির সীমাবদ্ধতা’ নিবন্ধের অংশ। এতে বলা হয়েছে, ‘মহাবিশ্ব কত দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে তা বর্ণনা করার একটি মাপকাঠি হলো হাবল ধ্রুবক। এর অসংগতি বছরের পর বছর ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিরক্ত করে চলেছে।’ এরপর ‘হাবল ধ্রুবকের মানের প্রভেদ’ নামে একটি চিত্র আছে। এই চিত্রটির যথেষ্ট ব্যাখ্যা অনুচ্ছেদটিতে নেই, তবে প্রাথমিকভাবে পাঠক একটা ধারণা পাবেন, বুঝবেন এর বিভিন্ন মান পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি হাবল ধ্রুবক কী, এর ইতিহাস, কীভাবে পরিমাপ করা হয়, সংশ্লিষ্ট সূত্র ও ব্যাখ্যা যোগ করলে অনুচ্ছেদটি পরিপূর্ণ হতো।

এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ছবিগুলো অনেকক্ষেত্রে ঝাপসা, ইংরেজিগুলো বাংলা করা হয়নি। এ সব বিষয়ে আরও কিছুটা যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন, বিশেষ করে বিজ্ঞানের বইতে। তবে বইটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভালো দিক, বেশির ভাগ নিবন্ধের শেষে প্রয়োজনীয় তথ্যসূত্র সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে গবেষণাপত্রও রয়েছে। এতে আগ্রহী পাঠক আরও জানতে তথ্যসূত্র অনুসরণ করতে পারেন।

বইটির ভাষা সহজ। সবাই পড়তে পারবেন। দুই মলাটে বিজ্ঞানের নানাবিধ বিষয়ের প্রাথমিক ধারণা পাওয়ার জন্য বইটি পাঠকের পছন্দ হতে পারে। প্রান্ত প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বইটি পাওয়া যাবে অনলাইন-অফলাইনের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে।