প্রশ্ন আছে, প্রশ্ন? সমাধান মিলবে বিজ্ঞানে

ছোটবেলা থেকেই আমাদের মনে অসংখ্য প্রশ্ন জাগে। উত্তর জানতে কেউ ক্লাসে প্রশ্ন করে, কেউ-বা বইপত্র ঘাঁটাঘাটি করে, আবার কেউ নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে। এটা কেন হচ্ছে? কীভাবে কাজ করে? কখনো উত্তর পায়, কখনো পায় না। প্রশ্নগুলো নিজের মাথাতেই ঘুরতে থাকে। অনেকে হয়তো ভাবেন, প্রযুক্তির এই যুগে সব প্রশ্নেরই তো উত্তর রয়েছে গুগলের কাছে। শুধু সার্চ করতে হবে। তবে নিজের মাথায় আসা প্রশ্নগুলোর উত্তর ও জ্ঞানের পিপাসা মেটানোর ভালো উপায় হলো বই পড়া। কারণ গুগলে ভুল ও সঠিক—দুই ধরনের উত্তর তো থাকেই, আবার উত্তরের সবটা অনেক সময়ই এক জায়গায় মেলে না। ঠিক এখানেই এগিয়ে আছে বই। এতে উত্তরগুলো যেমন গোছানো হয়, তেমনি যাচাই করে নেওয়া হয় বিষয়গুলো। আর সেই বই যদি হয় আমাদের মাথায় আসা নানা প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে, তাহলে তো কথাই নেই। এবারের বইমেলায় কাজী আকাশের তেমনি একটি বই এসেছে—মাথায় যত প্রশ্ন আসে

বইটির প্রচ্ছদে রয়েছে বিশাল এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন, যেন আমাদের মনের গভীরে জমে থাকা প্রশ্নগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছে। সর্বকালের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন মহাকর্ষ বল আবিষ্কার করেছিলেন একটি সাধারণ প্রশ্ন থেকে। ‘আপেলটি ওপরে না গিয়ে নিচে পড়ল কেন?’ তাঁর মনে উঁকি দেওয়া এই ছোট, সাধারণ, উদ্ভট প্রশ্নটিই ধীরে ধীরে মহাবিশ্বের গভীর রহস্য উন্মোচন করেছে। অন্যদিকে কিশোর আইনস্টাইন মনে মনে কল্পনা করেছিলেন, আলোর পিঠে চেপে বসলে ব্যাপারটা কেমন হবে? অতৃপ্ত কৌতূহল ও প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম ভিত্তি—থিওরি অব রিলেটিভিটি। বইটির ভূমিকায় বিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রশ্ন করা ও এর উত্তর খুঁজে বের করার গুরুত্ব আলোচনা করেছেন বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার।

এতজন গ্রিক পন্ডিত থাকতে থেলিসকেই ইতিহাসের প্রথম বিজ্ঞানী মনে করা হয়, তা অনেকেরই অজানা। কীভাবে সেই যুগে থেলিস বিজ্ঞান চর্চা করেছিলেন, তাও আমাদের অজানা। কিংবা শীতকালে বাংলাদেশে বরফ পড়ে না...

কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়, ইতিহাসের প্রথম বিজ্ঞানী কে? তিনি এক কথায় উত্তর দেবেন, গ্রিক পন্ডিত থেলিস। কিন্তু কেন এতজন গ্রিক পন্ডিত থাকতে থেলিসকেই ইতিহাসের প্রথম বিজ্ঞানী মনে করা হয়, তা অনেকেরই অজানা। কীভাবে সেই যুগে থেলিস বিজ্ঞান চর্চা করেছিলেন, তাও আমাদের অজানা। কিংবা শীতকালে বাংলাদেশে বরফ পড়ে না কেন, টুথপেস্টে কী থাকে, প্লেনের জানালা কেন গোল, কীভাবে আবিষ্কৃত হলো অ্যান্টিবায়োটিক, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় রং কী, মোবাইল ফোনে কতটুকু স্বর্ণ থাকে—এরকম ১০টি প্রশ্ন নিয়ে শুরুতেই রয়েছে ‘সাধারণ জ্ঞান’ বিভাগ। সূচিতে একপলকেই দেখা যাবে এসব। এখানে জটিল না করে, সহজভাবে প্রশ্নগুলোর পেছনের কাহিনি ও কারণ ব্যাখ্যা করেছেন লেখক।

একনজরে

মাথায় যত প্রশ্ন আসে

লেখক: কাজী আকাশ

প্রকাশক: অনুপম প্রকাশনী

পৃষ্ঠা: ১১৮

দাম: ২৫০ টাকা

প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ: এআই আর্ট/ উচ্ছ্বাস তৌসিফ

সাধারণ জ্ঞানের পরের বিভাগটি ‘দেহঘড়ি’। অক্সিজেন ছাড়া মানুষ কতক্ষণ বাঁচতে পারে, আমাদের শরীর কোন কোন মৌল দিয়ে তৈরি, কতক্ষণ না ঘুমিয়ে থাকা সম্ভব—এরকম মজার কিছু প্রশ্ন নিয়ে এই বিভাগ। এ ছাড়াও বইটিতে প্রাণিজগৎ, পৃথিবী ও চাঁদ এবং মহাকাশের রহস্যময় ও মজার সব বিষয় নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। সূর্যের বয়স কত, মহাবিশ্বে কত গ্যালাক্সি আছে, কীভাবে মাপা হলো সূর্যের বয়স—এরকম নানা প্রশ্ন দেখে চমকে যেতে পারেন আপনি। পাঁচ বিভাগে এরকম মোট ৪০টি প্রশ্নের উত্তর রয়েছে বইটিতে।

যাঁরা একটানা পড়তে পারেন না, বইটি তাঁদেরও ভালো লাগবে। কারণ, এটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে পড়ার বাধ্যবাধকতা নেই। পাঠকের যে প্রশ্ন দেখে বেশি আগ্রহ জাগবে, সেখান থেকেই পড়তে পারবেন। তবে এসব প্রশ্ন সম্ভবত সবার মাথায়ই উঁকি দিয়েছে কখনো না কখনো। সূচিপত্রের ওপর চোখ বোলালেই মনে হবে, ‘এসব প্রশ্ন তো আমার মনেও জেগেছিল!’ হয়তো তখন উত্তর জানা হয়নি, বেশ, এখন সেসব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে।

মাথায় যত প্রশ্ন আসে বইটি আমাদের বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা ও জ্ঞানের পিপাসা মেটানোর জন্য দুর্দান্ত। লেখকের কথায় প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই শুরু হতে পারে যেকারো বিজ্ঞানচর্চা।

বইটির আরেকটি দিক ভালো লাগবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর দুকথায় দিয়ে প্রসঙ্গ জোর করে শেষ করে দেওয়া হয়নি। লেখক প্রতিটি প্রশ্নের গভীরে ঢুকেছেন। সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এগুলোর পেছনের বিজ্ঞান, কার্যকারণ, ভেতরের কথা ও নানা গল্প। তার ওপর, প্রতিটি প্রশ্নের সঙ্গেই রয়েছে মানানসই ছবি।

বইয়ের শেষে এসে খানিকটা আফসোসও হতে পারে। মনে হবে, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, প্রযুক্তিসহ অন্যান্য শাখার আরও কিছু প্রশ্ন থাকলে আরও ভালো হতো। বইটা যেন শুরু হতেই শেষ হয়ে গেল। আশা করি, এই ধারাবাহিকতায় লেখক বইটির পরবর্তী খণ্ডে বা অন্য কোনো বইতে এরকম আরও কয়েক শ প্রশ্ন নিয়ে আসবেন।

এক কথায় বললে, মাথায় যত প্রশ্ন আসে বইটি আমাদের বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা ও জ্ঞানের পিপাসা মেটানোর জন্য দুর্দান্ত। লেখকের কথায় প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই শুরু হতে পারে যেকারো বিজ্ঞানচর্চা। সব শ্রেণির পাঠকেরই এটি ভালো লাগবে। পাওয়া যাবে অনলাইন ও অফলাইনের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে। 

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ