শক্তি উৎপাদকের খোঁজে

তাপগতিবিদ্যার সবচেয়ে বিখ্যাত নীতি হলো শক্তির সংরক্ষণশীলতা। এ নীতি অনুযায়ী, মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ সব সময় এক। তিল পরিমাণ শক্তিও যেমন ধ্বংস করা যায় না, তেমনি ধ্বংসও করা যায় না এত্তটুকু শক্তি। তবে শক্তিকে এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় রূপান্তর করা যায়। রূপান্তরের সময় পদার্থবিদ্যার ক্রিয়াকৌশলের হাত ধরে নানা রকম কাজ করিয়ে নেওয়া যায় একে দিয়ে। ফলে মহাবিশ্বের এনট্রপি দিন দিন বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু শক্তির হেরফের হয় না এতটুকুও।

এবার প্রশ্ন উঠতে পারে, তা–ই যদি হয়, তাহলে দুনিয়ায় এত এত শক্তি উৎপাদক যন্ত্র, সেগুলো থেকে এত এত শক্তি আমরা পাই, তাদের কেরামতি কোথায়? আসলে শক্তি উৎপাদক যন্ত্রগুলো ঠিক উৎপাদক নয়, কনভার্টার। শক্তিকে এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় রূপান্তরের কাজ করে এই যন্ত্রগুলো। তাই এদের নাম রিঅ্যাক্টর। আর রিঅ্যাক্টর বললে প্রথমেই আপনার চোখে কোন জিনিসটি চোখে ভাসে, বলুন তো। নিশ্চয়ই পারমাণবিক চুল্লি!

রিঅ্যাক্টরের ইতিকথা আলেক্সাই ক্রিলোভ রূপান্তর: বিজয় পাল প্রকাশক: রাফাত পাবলিকেশন্স পৃষ্ঠা: ৬৪ দাম: ১২০ টাকা

রিঅ্যাক্টর মানে শুধুই পারমাণবিক চুল্লি নয়। রিঅ্যাক্টর হলো শক্তি তৈরির যন্ত্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি হয়, সেটাও যেমন রিঅ্যাক্টর, নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়, সেই বাঁধটাও একটা রিঅ্যাক্টর। অর্থাৎ রিঅ্যাক্টর যেমন আছে কারখানায়, তেমন আছে বায়ুতে, আকাশে, সমুদ্রে। আবার রিঅ্যাক্টর শুধু যন্ত্রই নয়। জৈব রিঅ্যাক্টরই বেশি প্রকৃতিতে। আমাদের শরীরটাও একটা আস্ত রিঅ্যাক্টর। তেমনি গাছপালা, পশু-পাখির দেহ, যেখানে জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়—এগুলোও আসলে একেকটা রিঅ্যাক্টর।

তাই রিঅ্যাক্টরের ইতিকথায় শুধু পারমাণবিক চুল্লি বা রিঅ্যাক্টরের গল্পই বলা হয়নি, শক্তি কী, এর বিচিত্র রূপ, ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মোটকথা, প্রাকৃতিক ও যান্ত্রিক শক্তির বিষয়ে এক পরিপূর্ণ আখ্যান হলো এই বই।

মোট ৯টি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে বইটি। প্রথম অধ্যায়েই অদৃশ্য শক্তির তত্ত্ব তালাশ করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে শক্তির স্বরূপ। তৃতীয় অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে তাপশক্তি নিয়ে। সেই সঙ্গে শক্তি উৎপাদনের যত রকম জৈবিক ও কৃত্রিম রিঅ্যাক্টর রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ে উঠে এসেছে ইউরেনিয়ামের শক্তি আলোচনা। যেখানে লেখক সত্যিকারের রিঅ্যাক্টর, অর্থাৎ পারমাণবিক শক্তি ও চুল্লির সরল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এরপর একে একে পানির শক্তি, সৌরশক্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ–শক্তি ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা করার পর বইটি লেখক শেষ করেছেন শক্তির বিভিন্ন অবস্থায় কীভাবে রূপান্তরিত হয়, সেগুলোর সাতসতেরো জানিয়ে।

সোভিয়েত ক্ল্যাসিক বইটির লেখক আলেক্সেই ক্রিলোভ। ১৯৮৪ সালে বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিল মস্কোর বিখ্যাত রাদুগা প্রকাশন। সহজ-সরল ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন বিজয় পাল। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েতের পতনের পর এই বই প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল, সম্প্রতি রাফাত পাবলিকেশন্স নতুন করে বইটি প্রকাশ করেছে। সারা দেশে বুকস্টলগুলোর পাশাপাশি বইটি মিলবে অনলাইনেও।