দ্য থ্রি বডি প্রবলেম

ধরুন, আপনি একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। এক সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনলেন, তিনটি ভিন্ন দেশে বসানো পার্টিকেল অ্যাকসিলারেটরে একই পারিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে করা একই পরীক্ষার ফলাফল এসেছে তিনরকম। কী করবেন আপনি? সব দেখেশুনে আবার পরীক্ষা করবেন৷ তারপর আবার। তারপরেও যদি দেখেন, কণাত্বরক যন্ত্রগুলো ভিন্ন ফলাফল দিচ্ছে, নিশ্চিত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে আপনার। কারণ, এরকম ভিন্ন ফলাফলের একটাই অর্থ হতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো কাজ করছে না!

একটু খোঁজখবর করে বিষয়টার একদম গোড়া থেকে যাচাই করতে গিয়ে যদি দেখেন, বিগ ব্যাংয়ের অবশেষ—কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন (সিএমবি) আর মাইক্রোওয়েভ নেই, আলোর তরঙ্গ ওঠানামা করছে প্রচণ্ডভাবে, অর্থাৎ জ্বলজ্বল করছে সিএমবি পুরো মহাবিশ্বের তটে, কেমন লাগবে আপনার? মাথা খারাপ হয়ে যাবে না?

একের পর এক খ্যাতিমান পদার্থবিজ্ঞানী আত্মহত্যা করছেন। তদন্ত করতে নেমে খেই হারিয়ে ফেলেছে চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পুলিশ। আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠন করেও কোনো কুল-কিনারা পাচ্ছে না তারা।

ওদিকে, একদল মানুষ এমন এক কম্পিউটার গেম নিয়ে মেতে আছেন, যে গেমে অস্থিতিশীল এক গ্রহে বাঁচার উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন সেই গ্রহের অধিবাসীরা। ট্রাইসোলারিস নামের এই গ্রহটি অস্থিতিশীল, কারণ, গ্রহটি একইসঙ্গে তিনটি সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে৷ সূর্য কাছে চলে এলে উত্তাপে সেদ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে ওই গ্রহের অধিবাসীরা। সূর্য দূরে সরে গেলে মারা যাচ্ছে প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে গিয়ে।

মূল: লিউ সিশিন ।। ভাষান্তর: কৌশিক জামান ।। প্রচ্ছদ: সজল চৌধুরী ।। প্রকাশক: ভূমিপ্রকাশ ।। দাম: ৭৮০ টাকা

দুটি বস্তুর মহাকর্ষকে আমরা নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র দিয়ে প্রকাশ করতে পারি৷ কিন্তু তিনটি বস্তুর মহাকর্ষকে একসঙ্গে সাধারণভাবে প্রকাশের কোনো উপায় জানা নেই আমাদের। কোনো সাধারণ সূত্রের শেকলে একে বাঁধা যায়নি আজও।

ট্রাইসোলারিস নামে গেমের ভেতরের সেই সভ্যতার কি আসলেই অস্তিত্ব আছে? জ্ঞানে-বিজ্ঞানে প্রচণ্ড উন্নত এই সভ্যতা কি ত্রিমাত্রিক কোনো বস্তুকে এগারোমাত্রায় রূপান্তর করতে পারে? কিংবা নামিয়ে আনতে পারে দুইমাত্রায়? এরকম একটি সভ্যতার সঙ্গে যদি যুদ্ধ বেঁধে যায় মানবজাতির, কী করবে মানুষ? যদি পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেওয়ার চাবিটি চলে আসে মানুষের হাতের মুঠোয়, কী ঘটবে? কেনইবা পদার্থবিজ্ঞানের এতদিনের জানা সূত্রগুলো আজ বারবার ভুল বলে প্রমাণিত হচ্ছে বিজ্ঞানীদের কাছে?

এসব প্রশ্নের জবাব মিলবে লিউ সিশিনের 'দ্য থ্রি বডি প্রবলেম' নামের এই কল্পবিজ্ঞান উপন্যাসে। মহাজাগতিক সভ্যতা, বিজ্ঞান ও দর্শনের মিশেলে অসাধারণ রোমাঞ্চকর এক কল্পবিজ্ঞান রচনা করেছেন চৈনিক এই লেখক। মোট তিন খণ্ডে সমাপ্য এই মহাজাগতিক মহাকাব্যের আসল নাম 'রিমেমব্রেনস অব আর্থ'স পাস্ট'। অর্থাৎ, পৃথিবীর অতীত স্মরণে। তবে সিরিজটি পরিচিত প্রথম খণ্ডের নামেই, দ্য থ্রি বডি প্রবলেম। বাকি দুটো বইয়ের নাম, 'দ্য ডার্ক ফরেস্ট' এবং 'ডেথ'স এন্ড'।

সিরিজের প্রথম বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন সুঅনুবাদক কৌশিক জামান। কঠিন বিষয়গুলোকেও সহজ ভাষায় তুলে এনেছেন তিনি, পাশাপাশি চেষ্টা করেছেন গল্পেট জমাট বুনট ও উত্তেজনার অনুভবটুকু অটুট রাখতে৷ তবু অনিচ্ছায় কিছু জায়গা খানিকটা কঠিন হয়ে গেছে, কোথাওবা বাক্যের গঠন এলোমেলো হয়ে গেছে সামান্য। তাতে অবশ্য মূল গল্প উপভোগে সমস্যা হবে না পাঠকের।

বিশাল কলেবরের এই বইটি প্রকাশ করেছে ভূমিপ্রকাশ। প্রচ্ছদ করেছেন সজল চৌধুরী। বিজ্ঞান ও কল্পবিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য এই বইকে বলা চলে অবশ্যপাঠ্য। পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় ভূমিপ্রকাশের স্টলে এবং অনলাইন-অফলাইন বইয়ের দোকানগুলোয়।