রহস্যময় প্রাণীদের জগতে

একনজরে: রহস্যময় তিমি ও ডলফিন | লেখক: এম এ আজিজ | প্রকাশক: প্রথমা | প্রথম প্রকাশ: জুন, ২০২৩ | প্রচ্ছদ: কানিজ ফাতেমা লাবণ্য | পৃষ্ঠা: ৭২ | দাম: ৩০০ টাকা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী তিমি। দেখতে মাছের মতো হলেও আসলে মাছ নয়। স্তন্যপায়ী প্রাণী। পানিতে বাস করে, আবার সন্তান প্রসব করে মানুষের মতো। বাচ্চাকে দুধ পান করায়। সব মিলে তিমি আমাদের কাছে রহস্যময় এক প্রাণী। কারণ তিমিকে সচরাচর দেখা যায় না। প্রাণীটির অনেক কিছুই আজও আমাদের অজানা।

তিমির মতো ডলফিনও স্তন্যপায়ী প্রাণী। তাদের আছে মানুষের মতো আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসা। এ ছাড়াও আছে শুশুক। একসময় আমাদের দেশের নদীতেও প্রায়ই শুশুক দেখা যেত। কিন্তু এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে প্রাণীগুলো। সাগর-মহাসাগরের গভীর জলরাশির এরকম নানা প্রাণী নিয়েই রহস্যময় তিমি ও ডলফিন বইটি।

বইতে মোট ১০টি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়ে উঠে এসেছে অদ্ভুত প্রাণী নারওয়ালের গল্প। রূপকথার ইউনিকর্নের মতো এদের লম্বা শিং। একসময় নামও হয়ে গিয়েছিল ‘ইউনিকর্ন অব দ্য সি’। পৃথিবীতে নারওয়ালের মতো অদ্ভুত দাঁতবিশিষ্ট প্রাণী দ্বিতীয়টি নেই। তবে এরকম দাঁত শুধু আছে পুরুষগুলোর। দূর থেকে হঠাৎ পুরুষ নারওয়াল দেখে সাবমেরিন ভেবে ভুলও হতে পারে। ২৫ মিনিট অন্তর এরা পানির ওপরে এসে বাতাসে শ্বাস নেয়। তারপর আবার ডুব। রহস্যময় প্রাণীটি নিয়ে এ অধ্যায়ে রয়েছে বিস্তারিত।

মহাবন আমাজনে আছে আরেক রহস্যময় প্রাণী বোটো। স্ত্রী বোটোদের আকর্ষণ করতে পুরুষগুলো এমন আবেদন-নিবেদন করে যে পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণীর মধ্যে এ গুণ দেখা যায় না।

বুড়িগঙ্গায় আগে মিনিটে মিনিটে শুশুক দেখা যেত। একটু পরপর লাফিয়ে উঠত পানির ওপরে। মূলত মাছ ধরার জন্য ওদের এই লাফালাফি। কিন্তু পানির নিচে কীভাবে এসব প্রাণী চলাফেরা করে, বিজ্ঞানীরা তা জানতেন না। একবার দুই জাপানি বিজ্ঞানী শুশুক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠলেন। জাপান থেকে ছুটে এলেন বাংলাদেশে, ঘাঁটি গাড়লেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। কারণ জাপানে এ প্রাণী দেখা যায় না। শুশুক দেখে তাঁরা ভাবলেন, এ প্রাণী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গবেষণা করতে হবে। কিন্তু কোথায় করবেন গবেষণা? বাংলাদেশে সে রকম ব্যবস্থা নেই। তাই বাধ্য হয়ে তিনটি শুশুক ধরে তুললেন বিমানে। নিয়ে গেলেন সূদুর জাপানে। শুশুক নিয়ে গবেষণা করে তাঁরা অবাক হয়ে গেলেন। কী এমন পেয়েছিলেন চিরচেনা শুশুকের মধ্যে? জানতে হলে পড়তে হবে দ্বিতীয় অধ্যায়।

মহাবন আমাজনে আছে আরেক রহস্যময় প্রাণী বোটো। স্ত্রী বোটোদের আকর্ষণ করতে পুরুষগুলো এমন আবেদন-নিবেদন করে যে পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণীর মধ্যে এ গুণ দেখা যায় না। মানুষের সঙ্গেও এদের দারুণ ভাব। নদীর পাড়ের স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে প্রায়ই খেলতে দেখা যায়। দারুণ বুদ্ধি এদের। দেহের অনুপাতে বোটোর মগজের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। মানুষের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি এ পরিমাণ। এ কারণে মাঝে মধ্যে এদের প্রেমাবেগ ছাড়িয়ে যায় মানুষকেও।

বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ে আছে রহস্যময় ও মজার এসব প্রাণীদের নিয়ে চমৎকার সব তথ্য। তবে শুধু তথ্য দিয়ে বইটি ভরিয়ে তোলেননি লেখক।

বিলুগা একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। তিমি ও ডলফিনজাতীয় প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শব্দ করে। বাচাল প্রাণী বলা যায় বিলুগাকে। নানা ধরনের শব্দ সৃষ্টিতে পটু। সূরের মূর্ছনায় প্রায়ই মোহিত করে দর্শনার্থীদের। শিস দেয়, কিচিরমিচির করে, এমনকি হাম্বা হাম্বাও করে! এই বিলুগারা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। খাদ্য, কাপড় ও হস্তশিল্প তৈরিতে অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে বিলুগা শিকার করে আলাস্কার আদিবাসীরা।

বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ে আছে রহস্যময় ও মজার এসব প্রাণীদের নিয়ে চমৎকার সব তথ্য। তবে শুধু তথ্য দিয়ে বইটি ভরিয়ে তোলেননি লেখক। প্রাণীগুলোর নামকরণ, কোথায় পাওয়া যায়, এখন কী অবস্থায় আছে—তুলে ধরেছেন এরকম খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয়, তবে গল্পের ছলে। বইটি তাই তথ্যের ভারে ভারী হয়ে ওঠেনি। তার ওপর পাতায় পাতায় ছবি জীবন্ত করে তুলেছে প্রাণীগুলোকে। বইটি আপনাকে নিয়ে যাবে এসব প্রাণীর জগতে। পড়তে পড়তে মনে হবে কোনো প্রাণী সম্পর্কে রূপকথার গল্প পড়ছেন বুঝি!

৭২ পৃষ্ঠার রয়্যাল সাইজের বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন।

বইয়ের লেখক এম এ আজিজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ডারেল ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ট্রাস্ট থেকে পেয়েছেন ডারেল ট্রাস্ট ফর কনজারভেশন বায়োলজি পুরস্কার। ফলে প্রাণিজগতের ব্যাপারে তাঁর লেখা নিয়ে কোনো সংশয় থাকার অবকাশ নেই। বিষদভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বইয়ে উল্লেখিত সব প্রাণীর বৈশিষ্ট্য।  

৭২ পৃষ্ঠার রয়্যাল সাইজের বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। পাওয়া যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অফলাইন ও অনলাইন বইয়ের দোকানে। 

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা