সময়ের সাতসতেরো

সময় মহাবিশ্বের গভীর প্রহেলিকার নাম। সময় কী? দেখা যায় না, ধরা যায় না, রূপ-রস-গন্ধের অনুভূতিও তৈরি করে না। শুধুই সামনে বয়ে চলে। সেই বয়ে চলাটা আবার বুঝতে হয় পরোক্ষভাবে। আমাদের কাছে সময় মানে ঘণ্টা-মিনিট-সেকেন্ডের ব্যাপার। ভোরে সূর্য ওঠে, সন্ধ্যায় অস্ত যায়। সূর্যের এই আসা-যাওয়ার কারণেই মানুষের, প্রাণীর, উদ্ভিদের দেহের হ্রাস-বৃদ্ধির কারণেই সময় বলে যে কিছু আছে, সে ব্যাপারটা বুঝতে পারি। কিন্তু অসীম মহাবিশ্বের অন্ধকারে, যেখানে রাত নেই, দিন নেই, আলো নেই—সেখানে সময় বলে যে কিছু আছে, সেটাও বোঝা কঠিন। হাতে ঘড়ি থাকলে অবশ্য আলাদা কথা।

পদার্থবিজ্ঞানে সময় বা কালের গুরুত্ব বিরাট। কিন্তু সময়কে ধরে বলবিদ্যার হিসাব যে হতে পারে সে কথা আগে জানা ছিল না বিজ্ঞানীদের। মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন পর্দাথবিদ্যার সঙ্গে সময়ের যোগসূত্র তৈরি করেন। তার সবই অবশ্য গতিবেগের বর্ণনায়। কিন্তু মহাকর্ষের মতো বলগুলোতে সময় ভূমিকা রাখতে পারে, সে চিন্তা নিউটনের মাথায় আসেনি। তাই নিউটনীয় মহাকর্ষে সময়ের রাশি যোগ করা হয়নি। বিদ্যুৎ, আলো কিংবা চুম্বকবিদ্যায়ও সময় নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। ম্যাক্সওয়েল বিদ্যুত্ ও আলোক গতিবিদ্যায়, সময়ের গুরুত্ব যে কত ব্যাপক, সেটা সামনে নিয়ে আসেন। আগেকার বিজ্ঞানীরা মনে করতেন বিদ্যুত্ বা চুম্বকীয় প্রভাব তাত্ক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে। অর্থাত্ এগুলোর প্রভাব এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়াতে সময়ই লাগে না। মহাকর্ষ বলও যে তাত্ক্ষণিক ক্রিয়া নয়, সেটা আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি প্রকাশের আগে কেউ অনুধাবন করতে পারেনি।

পদার্থবিজ্ঞানে সময় বা কালের গুরুত্ব বিরাট। কিন্তু সময়কে ধরে বলবিদ্যার হিসাব যে হতে পারে সে কথা আগে জানা ছিল না বিজ্ঞানীদের। মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন পর্দাথবিদ্যার সঙ্গে সময়ের যোগসূত্র তৈরি করেন।

১৯০৫ সালে আইনস্টাইন সময় নিয়ে সাধারণের এমনকি বিজ্ঞানীদের চিরায়ত ধারণার ওপর আঘাত হানলেন। বিশেষ আপেক্ষিকতা দিয়ে ধসিয়ে দিলেন সময়ের সর্বজনীনতাকে। বললেন, সময়ের প্রবাহ সবার জন্য এক রকম নয়। এটা স্থান ও তার বেগনির্ভর। অর্থাত্ স্টেশনে দাঁড়িয়ে যে পর্যবেক্ষক সময়ের হিসাব কষছেন, তাঁর সময়, আর চলন্ত ট্রেনের ভেতর বসে যে পর্যবেক্ষক সময়ের হিসাব কষছেন, তাঁর সময় এক নয়। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক সময়ের ধারণা ঝড় তুলেছিল বিজ্ঞানের জগতে। সেই ঝড় থেকেই জন্ম হয়েছিল সময়ের আরও বিস্ময়কর আরও রহস্যময় চরিত্রের। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার সমাধান ভবিষ্যদ্বাণী করে সময় ভ্রমণের সম্ভাবনার, স্থান-কালের ভ্রমণের জন্য এসেছিল ওয়ার্মহোলের ধারণার। সেসব নিয়ে লেখা হলো কত কত কল্পবিজ্ঞান, বানানো হলো কত শত সিনেমা।

সময় প্রসঙ্গ

লেখক: ড. আলী আসগর

প্রকাশক: অনিন্দ্য প্রকাশ

প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০৭

পৃষ্ঠা: ১৬০

মূল্য: ১৬০ টাকা

বাংলাদেশের বিজ্ঞানচর্চায় ও বিজ্ঞান লেখনীতে অগ্রণী পুরষদের একজন ড. আলী আসগর। বিজ্ঞানের নানা বিষয় সাধারণের বোধগোম্য হয়ে উঠে এসেছে তাঁর বিজ্ঞান লেখনীতে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে লিখেছেন সময় নিয়ে হূদয়গ্রাহী এই বইটি। সময়ের হদিস করতে, সময় নিয়ে গবেষণার ইতিহাস খুঁজতে তিনি ঢুঁ মেরেছেন ইতিহাসের ছত্রে ছত্রে, প্রাচীন সভ্যতার অলিগলিতে। মিসরীয় কিংবা ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় কিংবা প্রাচীন ভারতীয় বা চৈনিকেরা সময়ের হিসাব কী করে রাখত, আরব কিংবা গ্রিক পণ্ডিতদের কাছেইবা কেমন সময়ের স্বরূপ—ইতিহাস সন্ধান করে লেখক সেসব তুলে এনেছেন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে। গ্যালিলিও-নিউটন থেকে আইনস্টাইন-হকিং পর্যন্ত সময়ের পর্যক্রমিক বৈজ্ঞানিক বর্ণনা, রহস্যময়তা আর গুরুত্ব অত্যন্ত সুচারুভাবে লেখক তুলে ধরেছেন তাঁর সময় প্রসঙ্গ বইটিতে।