কণাদের আশ্চর্য জগতে

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে পদার্থবিজ্ঞানে এক নতুন সমস্যার জন্ম হলো। কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ কিছুতেই ব্যাখ্যা করতে পারছিল না তাপগতিবিদ্যা কিংবা বর্ণালিতত্ত্ব। সেই সময় আলোর তরঙ্গতত্ত্ব প্রবল বিক্রমে রাজত্ব করছে। আছে ম্যাক্সওয়েলের বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তত্ত্ব, বিদ্যুৎ-গতিবিদ্যাও তত দিনে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু কোনো তত্ত্বই শেষমেশ ব্যাখ্যা করতে পারেনি কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণের চরিত্র। জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক তখন বিকিরণের এই রহস্যময় চরিত্র নিয়ে কাজ করছিলেন। হঠাৎ একদিন তাঁর মাথায় এসে যায় এক অভিনব পন্থা। তিনি এই বিকিরণকে বললেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তির প্যাকেট। প্ল্যাঙ্কের এই তত্ত্বের নাম কোয়ান্টাম তত্ত্ব। ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন আলোক তড়িৎক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে হাত বাড়ালেন প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্বের দিকে। এত দিন আলোক তড়িৎক্রিয়াও ঠিকঠাকমতো ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল না চিরায়ত তত্ত্বের সাহায্যে।

প্ল্যাঙ্ক-আইনস্টাইনের দেখানো পথে হাঁটলেন ডেনিশ বিজ্ঞানী নিলস বোর। তবে একটু অন্যভাবে। প্ল্যাঙ্ক-আইনস্টাইন বিকিরণ ও আলোর চরিত্র বোঝার জন্য ব্যবহার করেছিলেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব, তবে নিলস বোর ব্যবহার করলেন পরমাণুর অন্দরমহলের খবর জানার জন্য। সেই খবর তিনি পেলেনও। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি। পতপত করে উড়িয়েছেন কোয়ান্টামের জয়পতাকা। বোরের নেতৃত্বে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছিল কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার উর্বর ভূমি। একঝাঁক তরুণ তাঁর কাছে দীক্ষা নিতে আসেন। তাঁরাই কোয়ান্টাম তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেন সত্যিকারের এক বলবিদ্যায়। কোয়ান্টাম মেকানিকস কতটা সফল হয়েছিল, বোরের ছাত্রদের দক্ষতাই বা কেমন—একটা পরিসংখ্যান এই প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিতে পারে। বোরের ১১ জন ছাত্র কণাপদার্থবিদ্যায় অবদানের জন্য নোবেল পেয়েছিলেন।

একনজরে

কোয়ান্টাম জগৎ

লেখক: হায়দার আকবর খান রনো

প্রকাশক: বাংলা একাডেমি

প্রথম প্রকাশ: জুন ২০১৩

পৃষ্ঠা: ১৮৪

দাম: ২৫০ টাকা

আরও পড়ুন

কণাপদার্থবিজ্ঞান সত্যিকারের একটা বলবিদ্যা পেয়ে গেল, কিন্তু সেই সঙ্গে হাজির হলো অদ্ভুত কিছু নিয়ম। যেমন অনিশ্চয়তা নীতি, কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্টের মতো কিছু তত্ত্ব আমদানি করলেন হাইজেনবার্গ, শ্রোডিঙ্গারের মতো কণাবিজ্ঞানীরা। খাতা-কলমে গণিতের ছাঁচে যেমন সফল এসব তত্ত্ব, তেমনি পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও প্রশ্নাতীত সাফল্য এঁদের। তবু আইনস্টাইন মানতে পারলেন না কোয়ান্টামের অদ্ভুত নিয়মগুলোকে। যে আইনস্টাইন কোয়ান্টামের ভিত্তি রচনাকারীদের একজন, সেই আইনস্টাইন পরে আবির্ভূত হলেন কোয়ান্টামের সবচেয়ে বড় সমালোচক হিসেবে। তাঁর সঙ্গে নিলস বোরের বিরোধ উঠল তুঙ্গে। কিন্তু বিজ্ঞান চলে তার নিজের গতিতে, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী বিরোধিতা করলেও প্রকৃতির নিয়মগুলো তার নিজের গতিতেই চলবে। কোয়ান্টাম মেকানিকস তাই আইনস্টাইনের বিরোধিতায় থমকে থাকেনি।

লেখক হায়দার আকবর খান রনো ২০১৩ সালে প্রকাশ করেছিলেন কোয়ান্টামের সাত-সতেরো নিয়ে বাংলা ভাষার সবচেয়ে সহজবোধ্য এ বই। নিছক তত্ত্বে ঠাসা কোনো বই নয়, বরং বিজ্ঞানের মানবীয় দিকগুলোও তিনি তুলে এনেছেন বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক প্রশ্নের আদলে। এ-জাতীয় বই যত বেশি প্রকাশিত হবে, তত বেশি সমৃদ্ধ হবে বাংলা বিজ্ঞান সাহিত্য।