জলবায়ু বিপর্যয় প্রতিরোধে যা জানতে হবে

ঢাকার শীত কোথায় গেল? এ বছর ঢাকাবাসীর মনে এমন প্রশ্ন এসেছে নিশ্চিত। সাধারণত সারা দেশজুড়ে জানুয়ারিতে হাড় কাঁপানো শীত পড়ে। সে অনুযায়ী এবার শীতের তেমন একটা দেখা মেলেনি। আর ঢাকায় তো শীত নেই বললেই চলে। আবার ফেব্রুয়ারি শেষ হতেই শুরু হয়েছে গরম। কেন এমন হচ্ছে?

এ তো গেল বাংলাদেশের কথা। গোটা বিশ্বজুড়েই গত কয়েক বছরে এমন আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে। বছরের শুরুতেই বিশ্ব সাক্ষী হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলের। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে শুরু হয় এ দাবানল, তারপর ছড়িয়ে পরে দ্রুত। হাজার হাজার বাড়িঘরসহ পুড়ে ছাই হয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় সবকিছু। এ ভয়াবহ দাবানলে মারা গেছে ২৪ জন। যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশও যখন দাবানলের মতো দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায়, তখন বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কী হতে পারে, তা আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না। বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা দেখেছি, অনেক প্রাণহানি ঘটেছে।

মানুষের পাশাপাশি এ ধরনের দুর্যোগের প্রভাব প্রাণিকুলের ওপরও পড়ছে মারাত্মকভাবে। প্রায়ই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে, বন্যপ্রাণী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বার্ড ফ্লুর মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে একের পর এক প্রাণী। এ ধরনের ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগেই অনেক প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। পাশের দেশে তাকালে দেখব, প্রায়ই স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয় দিল্লিতে। চারপাশ কুয়াশার মতো ঢেকে যায় বায়ু দূষণের ফলে। ঢাকাও কি ধীরে ধীরে এমন হয়ে উঠছে?

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ঝুঁকিগুলো তৈরি হচ্ছে, তা সবিস্তারে জানা যাবে দ্বিতীয় অধ্যায়ে। জানা যাবে বিভিন্ন দুর্যোগে নিজেকে রক্ষায় উপায়, হঠাৎ গরম ও ঢাকায় গরমের ইতিহাস, ভবিষ্যৎসহ আরও অনেক কিছু।

খবরগুলো দেখে হয়তো আমাদের মন খারাপ হয়, কিন্তু আমরা কজনই-বা এই বিষয়ে ভাবি? কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে, তা কি আমাদের জানা জরুরি নয়? হ্যাঁ, যেহেতু তেমন কিছু করতে পারছি না, আমাদের প্রথম কাজ হলো, জলবায়ু পরিবর্তন আসলে কী এবং এটা কতটা মারাত্মক, তা জানা-বোঝা এবং সচেতন হওয়া এবং এই বিপর্যয় প্রতিরোধে আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানা। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবারের বইমেলায় আহমাদ মুদ্দাসসেরের লেখা জলবায়ু বিপর্যয় আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে বইটি।

বইটি শুরু হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমান আবহাওয়ার উদ্ভট আচরণ দিয়ে। পৃথিবী কি আসলেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, অক্টোবরে মাউন্ট ফুজিতে তুষার পড়ল না কেন, দাবানল কেন ও কোথায় লাগে, দিল্লির বায়ু দূষণ কিংবা বায়ু দূষণের পর্যায় পরিমাপে ব্যবহৃত একিউআই মান সহ আরও অনেক কিছু উঠে এসেছে বইটির প্রথম অধ্যায়ে।

১২০ পৃষ্ঠার ৫ অধ্যায়ের ছোট্ট বই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ঝুঁকিগুলো তৈরি হচ্ছে, তা সবিস্তারে জানা যাবে দ্বিতীয় অধ্যায়ে। জানা যাবে বিভিন্ন দুর্যোগে নিজেকে রক্ষায় উপায়, হঠাৎ গরম ও ঢাকায় গরমের ইতিহাস, ভবিষ্যৎসহ আরও অনেক কিছু। জলবায়ু পরিবর্তন ও গরমে আপনি যা করতে পারেন এবং নিজেকে কীভাবে সুরক্ষা দেবেন—এই দুটি এ অধ্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। এর ধারাবাহিকতায় নিঝুম দ্বীপের বাস্তুতন্ত্র, হরিণ সংকটে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, শীতে প্রাণীদের জীবন নিয়ে সবিস্তারে জানা যাবে তৃতীয় অধ্যায়ে।

আরও পড়ুন

একনজরে

জলবায়ু বিপর্যয় আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে

আহমাদ মুদ্দাসসের

প্রকাশক: জ্ঞানকোষ

পৃষ্ঠা: ১২০

দাম: ৩০০ টাকা

প্রথম প্রকাশক: ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ: পরাগ ওয়াহিদ

চতুর্থ অধ্যায়ে কিছু আশার কথা জানা যাবে। জানতে পারবেন, কীভাবে বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা প্রাণ-প্রকৃতিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। কিছুটা সায়েন্স ফিকশনের মতো শোনাবে, তবু বলি—কিছুকালের মধ্যেই পৃথিবীতে আর কখনো কোনো প্রাণী হারিয়ে যাবে না। জিন সিকোয়েন্স প্রযুক্তি এই বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এভাবে হয়তো প্রাগৈতিহাসিক ম্যামথের মতো প্রাচীন প্রাণীদের দেখা মিলবে আবার। তবে যেসব প্রাণী আজও টিকে আছে, তাদের হারিয়ে যাওয়া ঠেকাতে হবে আমাদের। সে জন্য এখনো অনেক কিছু করা এখনো বাকি।

বইটির প্রতিটি উপশিরোনাম যেন একেকটি সংবাদের হেডলাইন—যা হয়তো আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখেছি, কিন্তু এর ভেতরের কথাগুলো ভালোভাবে জানা হয়নি। নিজে জানতে ও অন্যকে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাতে হলে বইটি পড়তে হবে।

কী করব? গোটা বিশ্ব কী করছে—এই আলাপে চলে আসে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন বা কপ। কিন্তু ‘কপ২৯’ জলবায়ু সম্মেলন কেন তেলরাষ্ট্র আজারবাইজানে আয়োজিত হলো? এসব প্রশ্নের জবাব তো মিলবেই, সঙ্গে জানা যাবে জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের ঠিক কী কী করতে হবে। জানা যাবে, এ জন্য কোন বিষয়গুলো জানা দরকার। প্লাস্টিকের বোতল, মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে টি-ব্যাগ—নিত্যদিনের অনেক কিছু নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে পঞ্চম অধ্যায়ের সমাপ্তি টানা হয়েছে।

আরও পড়ুন

পৃথিবীতে আরও কয়েক শ বছর ভালোভাবে বেঁচে থাকতে হলে জলবায়ু বিপর্যয়ের ভয়াবহতা এবং এ সমস্যা মোকাবিলায় যা যা করা দরকার, লেখক সেসব তুলে ধরেছেন বইটিতে। এ সব তুলে ধরার জন্য তিনি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন গত কয়েক বছরে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা। বইটির প্রতিটি উপশিরোনাম যেন একেকটি সংবাদের হেডলাইন—যা হয়তো আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখেছি, কিন্তু এর ভেতরের কথাগুলো ভালোভাবে জানা হয়নি। নিজে জানতে ও অন্যকে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাতে হলে বইটি পড়তে হবে। আর যেকোনো কিছু করার সূচনা তো এই জানা থেকেই হয়।

বইটিতে বিরামচিহ্ন বা এরকম ছোট্ট কিছু ভুল ছাড়া তেমন কোনো ভুল চোখে পড়বে না। লেখকের আরেকটি জলবায়ুবিষয়ক বই সহজ ভাষায় জলবায়ু পরিবর্তন: বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে যা জানা দরকার। দুটি বইতেই জলবায়ু বিপর্যয় রোধ করে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে প্রাথমিকভাবে যা যা জানা দরকার, সেসব বিষয় উঠে এসেছে সহজ ভাষায়। জ্ঞানকোষ থেকে প্রকাশিত বইটি পাওয়া যাবে অনলাইন ও অফলাইনের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

আরও পড়ুন