বইমেলায় বিজ্ঞানের বই ১

ফেব্রুয়ারি বইপ্রেমীদের জন্য বছরের অন্যতম বড় উৎসব। নতুন বইয়ের মোড়কে আনন্দের ঢল নামে। মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। এ মাসে প্রকাশিত হয় বছরের প্রায় সব বিজ্ঞানের বই। ২০২৫ বইমেলায় প্রকাশিত এরকম দারুণ সব বই থেকে বাছাইকৃত কিছু বই নিয়ে এ আয়োজন।

বিজ্ঞান নামের ব্যতিক্রমী মহাকাব্য

মুহাম্মদ ইব্রাহীম

প্রকাশক: অনন্যা

মূল্য: ৪০০ টাকা

পৃষ্ঠা: ২০৭

বিজ্ঞান শুধু জ্ঞান নয়, এক অনন্ত মহাকাব্য। যেমন মহাকাব্যে থাকে বৃহৎ নীতি, সংগ্রাম ও ট্র্যাজেডি, তেমনি বিজ্ঞানও এক ধারাবাহিক কাহিনি—যার এক প্রান্তে ক্ষুদ্রতম মৌলিক কণা, আর অন্য প্রান্তে বিশাল মহাবিশ্ব। বিজ্ঞানীর কল্পনা ও বাস্তব পরীক্ষার যুগলবন্দীতে গড়ে ওঠে প্রকৃতির সঙ্গীত, যা জটিলতার মাঝে লুকিয়ে থাকা সরল ও সুন্দর নিয়মকে প্রকাশ করে। কণা, তরঙ্গ ও চার্জের মতো অদৃশ্য ধারণা যখন বাস্তবতার নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে, তখন সেই কল্পনাই বাস্তব হয়ে ওঠে। এই মহাকাব্য শুধু জ্ঞানচর্চায় সীমাবদ্ধ নয়, প্রযুক্তির মাধ্যমে জীবনকে সহজতর করেও তুলছে।

জামার স্যারের মহাবিশ্ব

প্রদীপ দেব

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন

মূল্য: ৩৮০ টাকা

পৃষ্ঠা: ১৪৪

বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম বিশ্বের সম্পদ, বাংলাদেশের গৌরব। কিন্তু তাঁকে নিয়ে যে প্রবল আগ্রহ-উদ্দীপনা, এর বেশির ভাগই দেখা যায় আবেগাক্রান্ত। এভাবে তাঁর গবেষণা আড়ালে পড়ে যায়। ফলে খুবই কম জানা যায় তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্পর্কে। এই বইয়ে বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর পরিচয় ও স্বরূপ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশদ আলোচনা করা হয়েছে তাঁর গবেষণাকর্মগুলো সম্পর্কে। এই বিজ্ঞানীর জীবনযাপন ও কর্মোদ্দীপনার কৌতূহলোদ্দীপক বয়ান ও বিশ্লেষণ থেকে তরুণ প্রজন্ম বিজ্ঞানশিক্ষায় অনুপ্রেরণা পাবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী সব পাঠক পাবেন বুদ্ধিবৃত্তিক আনন্দ।

নক্ষত্রবীথির গহিনে

রউফুল আলম

প্রকাশক: জ্ঞানকোষ প্রকাশনী

মূল্য: ৪০০ টাকা

পৃষ্ঠা: ১৪৩

মহাবিশ্বের সীমা খুঁজে পাইনি আমরা আজও। সে অর্থে মহাবিশ্ব হয়তো অসীম। মহাবিশ্ব বাড়ছে। সম্প্রসারিত হচ্ছে। নক্ষত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে পরস্পর থেকে। দূরে সরে যাচ্ছে গ্যালাক্সিগুলো। কখনো কি থামবে এই সম্প্রসারণ? আমরা জানি না এখনো। এই সীমাহীন মহাবিশ্বের মাঝেও মানুষ ডুব দেয়। খুঁজে ফেরে কত কত প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর। দূর নক্ষত্রপানে খোঁজে প্রাণের অস্তিত্ব। এই বই পড়ে পাঠক মহাবিশ্ব নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে পাবেন। আর পাঠক হয়ে উঠবেন আরও কৌতূহলী।

শক্তি ও জ্বালানি: আধুনিক রূপরেখা

ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী

প্রকাশক: অনুপম প্রকাশনী

মূল্য: ২০০ টাকা

পৃষ্ঠা: ৮০

জ্বালানি কেন প্রয়োজনীয়? জ্বালানির উৎস কী কী? কেমন তাদের ঘনত্ব? ফসিল ফুয়েল, নবায়নযোগ্য শক্তি কি ভালো? কেন ভালো? সৌরশক্তির দক্ষতাই-বা কেমন? দিনের কত অংশে ভালো ‘সোলার’ বা সৌরশক্তি পাওয়া যায়? কখন দরকার পড়ে নবায়নযোগ্য শক্তি? জ্বালানি নিয়ে মাথাব্যথা কি বাংলাদেশের একার? ভূ-রাজনীতির সঙ্গে জ্বালানির কী সম্পর্ক? জ্বালানি নিয়ে যে সত্যগুলো আপনার জানা দরকার, তা নিয়েই এই বই।

হাউ টু বিল্ড আ টাইম মেশিন

মূল: পল ডেভিস

অনুবাদ: আবুল বাসার

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন

মূল্য: ৩০০ টাকা

পৃষ্ঠা: ১৪৪

টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? এ ব্যাপারে বিজ্ঞান কী বলে? টাইম মেশিন কি সত্যিই বানানো সম্ভব? যদি সম্ভব হয়, তাহলে, যন্ত্রটা কীভাবে বানাতে হবে? সেই মেশিন ব্যবহার করে কীভাবে যাওয়া যাবে অতীতে, কিংবা ভবিষ্যতে? সব উত্তর পাওয়া যাবে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ পল ডেভিসের হাউ টু বিল্ড আ টাইম মেশিন বইতে।

হোয়াট ইজ টাইম

আবদুল গাফফার রনি

প্রকাশক: পাঞ্জেরী

মূল্য: ৪৫০ টাকা

পৃষ্ঠা: ১৬০

পৃথিবী, মহাবিশ্ব থেকে আমাদের দেহের জৈবিক ক্রিয়া—সবই চলে ঘড়ি ধরে, সময় মেনে। কিন্তু সময় আসলে কী? তার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানও ঠিকঠাক দিতে পারেনি আজ পর্যন্ত। অবশ্য প্রশ্নের শুরুটা হয়েছিল গ্রিক যুগেই। বড় দার্শনিকেরা এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন নিজেদের মতো করে। তাতে ব্যাখ্যা-যুক্তি ছিল, তর্ক ছিল। ছিল না শুধু বিজ্ঞান। নিউটনীয় বলবিদ্যা, আপেক্ষিকতা, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা হয়ে সময়ের ব্যাখ্যায় মজেছে হালের স্ট্রিং থিওরিও। সময়ের দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাত-সতেরো নিয়ে হোয়াট ইজ টাইম

হিগস বোসন বা গড পার্টিকেল

হাসান তারেক চৌধুরী

প্রকাশক: ভাষাচিত্র

মূল্য: ৫৫০ টাকা

পৃষ্ঠা: ২০৬

২০১২ সালে বিজ্ঞানীরা ‘হিগস বোসন’ বা ‘গড পার্টিকেল’ আবিষ্কার করেছেন। কণাপদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে এটি ছিল ঐতিহাসিক এক ঘটনা। এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে হিগস বোসন কী, কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ। জানতে পারবেন, কেন একে গড পার্টিকেল ডাকা হয়? আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা বইটিতে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন, কণা তত্ত্ব থেকে কীভাবে তরঙ্গ তত্ত্বের সূচনা হলো, ধাপে ধাপে কীভাবে কণাপদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেলটি গড়ে ওঠে, কীভাবে এর সাহায্যে হিগস ফিল্ড ও হিগস বোসন সম্পর্কে অনুমান করা হয়েছিল এবং কীভাবে হিগস বোসন আবিষ্কার হলো, তার ধারাবাহিক ইতিহাস।

রহস্যময় অতিভারী মৌলের খোঁজে

ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী

নাঈমুল আবরার গালিব

প্রকাশক: অন্বেষা

মূল্য: ৪৭০ টাকা

পৃষ্ঠা: ১৬৮

একসময় বিজ্ঞানীরা ভাবতেন, ইউরেনিয়ামই পর্যায় সারণির সর্বশেষ সদস্য। কিন্তু না। দেড়শ বছরেরও বেশি সময়ের অপেক্ষা শেষে ১৯৪০ সালে খোঁজ মেলে নতুন দুই ভারী মৌলের। আর তাতে বদলে যায় ইতিহাসের গতিপথ। ইউরেনিয়াম ও প্লুটোনিয়ামের তৈরি দুটো পারমাণবিক বোমার আঘাতে চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি ঘটে রক্তক্ষয়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। মৌল আবিষ্কারের নেশায় মগ্ন মার্কিনিরা ল্যাবরেটরির গণ্ডি ছাপিয়ে তখন পৌঁছে গিয়েছিলেন পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে উদ্ভুত ভয়ংকর মাশরুম ক্লাউডের গহিন পর্যন্ত। বিজ্ঞানের ইতিহাসের সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলোর নানান ঘটনাপ্রবাহ এবং ভারী মৌলিক পদার্থ আবিষ্কারের কাহিনি নিয়ে এই বই।

জীবন: কী, কেন, কীভাবে

তৌহিদুর রহমান উদয়

প্রকাশক: পুঁথি

মূল্য: ১০০০ টাকা

পৃষ্ঠা: ৪৮৮

জীবন যেমন জটিল, তেমনি জীববিজ্ঞানের বিষয়গুলোও অত্যন্ত বিস্তৃত। বিজ্ঞানীরা প্রতিদিনই নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার করে চলেছেন। এর সব পড়া কঠিন। তবে চাইলে জীববিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনেও জীবন নিয়ে একটা ভালো ধারণা পাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে কোষের মলিকিউলার বায়োলজি। এই বইতে কোষের মলিকিউলার বায়োলজির ওপর ভিত্তি করে জীবনকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে জেনেটিকস, এপিজেনেটিকস এবং জীববিজ্ঞানের আধুনিক শাখাগুলো থেকে পাওয়া জ্ঞানের সমন্বয়। 

জিরো: দ্য বায়োগ্রাফি অব আ ডেঞ্জারাস আইডিয়া

লেখক: চার্লস সিফ

অনুবাদক: আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

মূল্য: ৪৫০ টাকা

পৃষ্ঠা: ২০০

শূন্যের ইতিহাস নিয়ে এ বই। শূন্যবিহীন জীবন ও তার পদে পদে অসুবিধার গল্প। এবং শূন্যের সংখ্যা হয়ে ওঠার কাহিনি। ভারতে শূন্যের আবিষ্কার, আরব ও স্পেনের মুসলিম বিশ্বে শূন্যের আগমন ও ব্যাপকতা, ইউরোপে নতুন যুগে শূন্যের ব্যবহার, কোয়ান্টাম শূন্য, আপেক্ষিকতা ও স্ট্রিং তত্ত্বে শূন্যের ভূমিকা। পাঠক দেখবেন, কেন মহাবিশ্বের জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে শূন্য। নিমেষেই পড়ে শেষ করে ফেলার মতো এক বই।