যারা জুরাসিক পার্ক সিনেমা দেখে বড় হয়েছেন, তাঁদের ডাইনোসরের প্রতি এক অন্যরকম আগ্রহ ও মুগ্ধতা থাকার কথা। কারণ, এই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি নির্ভর সিনেমাগুলো আমাদের কল্পনার জগতে ডাইনোসরদের জীবন্ত করে তুলেছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে যদি এক বিশাল ডাইনোসরের ফসিল খুঁজে পেতাম!—তাহলে দুর্দান্ত হতো। তবে এটা নিছকই কল্পনা। এই কল্পনা থেকেই কিন্তু একদিন খোঁজ মিলেছিল সত্যিকার ডাইনোসরের ফসিলের।
খ্রিষ্টপূর্ব ৬৬৫-৩১৬ সালে এক চৈনিক ঐতিহাসিক ডাইনোসরের ফসিলের কথা লিখে গেছেন। তবে তাঁরা একে বলতেন ড্রাগনের হাড়। চীনাদের কাছে ড্রাগন ছিল এক পৌরাণিক প্রাণী, যা একই সঙ্গে ভয়ংকর এবং শ্রদ্ধার। তাঁদের কল্পনায় ড্রাগন ছিল এমন এক বিস্ময়কর জীব, যার মুখ দিয়ে বের হতো আগুনের হলকা। শক্তিশালী ডানা মেলে অনায়াসে উড়তে পারত আকাশে। চীনাদের বিশ্বাস ছিল, ড্রাগনের হাড় বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের মহৌষধ। এই বিশ্বাস থেকেই ড্রাগনের হাড় স্থান করে নেয় ইতিহাসের পাতায়। কালের আবর্তে সেখান থেকে এসেছে জুরাসিক পার্কের মতো বিজ্ঞান কল্পগল্প।
আমাদের মনে উঁকি দেওয়া এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে সাজানো হয়েছে উচ্ছ্বাস তৌসিফের বিজ্ঞানবিশের খসড়া খাতা।
এটা তো গেল ডাইনোসরের খোঁজ পাওয়ার শুরুর দিকের গল্প। কিন্তু কীভাবে পৃথিবী থেকে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায় এ বিস্ময়কর প্রাণীগুলো? কেমন ছিল পৃথিবীতে ডাইনোসরদের শেষ দিনটি? কীভাবে এখনো মাটির নিচে অক্ষত আছে ডাইনোসরের ফসিল? বিজ্ঞানীরা কীভাবে এই ফসিল পরীক্ষা করে বলে দিতে পারছেন, কত বছর আগে এরা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াত?
আমাদের মনে উঁকি দেওয়া এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে সাজানো হয়েছে উচ্ছ্বাস তৌসিফের বিজ্ঞানবিশের খসড়া খাতা। ডাইনোসরের ব্যাপারে এসব আলাপ হয়েছে বইটির ‘ম্লান নীল বিন্দুটি’ নামের অধ্যায়ে। লেখক এই শিরোনাম দিয়ে আমাদের পৃথিবীকে বুঝিয়েছেন। কারণ এই অধ্যায়ে তিনি পৃথিবীর শুরু থেকে বর্তমান অবস্থা নিয়ে লিখেছেন। ২৫৬ পৃষ্ঠার এই বইয়ে এমন ৬ ধাপ আছে। প্রতিটি ধাপে আবার আছে কয়েকটি করে অধ্যায়।
একনজরে
বিজ্ঞানবিশের খসড়া খাতা
লেখক: উচ্ছ্বাস তৌসিফ
প্রকাশক: জ্ঞানকোষ
পৃষ্ঠা: ২৫৬
দাম: ৫০০ টাকা
প্রথম প্রকাশক: ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদ: এআই আর্ট/ লেখক
মাধ্যমিক থেকেই পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় হয় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর একটা অধ্যায় তেমন গুরুত্ব দিয়ে পড়ে না। কারণ এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে কালেভদ্রে। অধ্যায়টির নাম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। লেখক এই অধ্যায়টি দিয়ে তাঁর বই শুরু করেছেন। এই পদ্ধতি ছাড়া বৈজ্ঞানিকভাবে জ্ঞান অনুসন্ধান করা সম্ভব নয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ছয়টি ধাপ কীভাবে গ্রিক দার্শনিক থেলিসের হাত ধরে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে, তা এই অধ্যায়ে জানা যাবে। আমরা কীভাবে নিজেদের মধ্যে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা খুদে বিজ্ঞানীকে সামনে নিয়ে আসতে পারি, কীভাবে নিজেরা গবেষণা করতে পারি, তা জানা যাবে এই অধ্যায়ে।
প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি বছর আগে মহাবিশ্বের সব পদার্থ, শক্তি ও সবটুকু জায়গা মিলেমিশে একটি ছোট বিন্দুর আকারে ছিল। সে বিন্দুটিই আদি মহাবিশ্ব—বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় সিঙ্গুলারিটি বা পরম বিন্দু। সেই বিন্দু কীভাবে আজকের মহাবিশ্বে পরিণত হলো? ‘মহাবিশ্বের সূচনা’ অধ্যায়ে এ বিষয়ে খুঁটিনাটি আরও অনেক কিছু জানা যাবে।
পুরো বইটি জুড়ে বিজ্ঞানের এমন নানা বিষয়ে কথা বলেছেন লেখক। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত বিজ্ঞানীদের মতো। তাঁরা যেভাবে বিশ্বকে জানতে চান, বুঝতে চান; আমাদের উচিত সেভাবে মহাজাগতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সবকিছু দেখা। এতে আমাদের মস্তিষ্ক উন্মুক্ত হয়।
বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে ইনফোগ্রাফ সংবলিত ছবি দেওয়া হয়েছে, যা দেখে সহজে বিষয়বস্তু বোঝা যায়। লেখাগুলোর মধ্যে দেওয়া হয়েছে ফুট নোট। বিজ্ঞানে যাদের একটু হলেও কৌতূহল জাগে, তাদের জন্য এই বই।
জ্ঞানকোষ থেকে প্রকাশিত বইটি পাওয়া যাবে অনলাইন ও অফলাইনের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ