ডাইনোসর নামটি যেভাবে পেলাম

প্রাচীনকাল থেকেই ডাইনোসরের জীবাশ্ম সম্পর্কে জানত মানুষ। চীনারা একে তাদের পুরাণের কল্পিত প্রাণী ড্রাগনের হাড় বলে মনে করত। তবে এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরু হয় ১৭ শতকের দিকে।

১৬৭৬ সালের ঘটনা। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডের কাছে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। হঠাৎ সেখানে কিছু ফসিল বা জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হলো। এর মধ্যে ছিল অজানা এক প্রাণীর চোয়াল ও দাঁত। চোয়ালটা বেশ বড়, আর দাঁতগুলো ছিল ড্যাগারের মতো বড় ও চোখা। ফসিলটি কোনো মেরুদণ্ডী প্রাণীর চোয়ালের বলে ধারণা করা হলো। যার চোয়ালই এত বড়, তার পুরো আকার-আকৃতি আন্দাজ করে অনেকেরই চোখ সেদিন কপালে উঠেছিল। এত বড় আকৃতির কোনো প্রাণী শুধু রূপকথার গল্পেই হয়তো সম্ভব। কিন্তু পরীক্ষা করে বোঝা গেল, আদিম কোনো এককালে এ ধরনের বিশাল প্রাণীরাই পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াত। ১৮২৪ সালে ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক উইলিয়াম বাকল্যান্ড এসব জীবাশ্মের পরীক্ষা করে প্রাণীটির নাম দিলেন মেগালোসেরাস (Megalosaurus)। শব্দটি তিনি ধার করেছিলেন গ্রিক শব্দ মেগাস (megas) এবং সোরাস (sauros) থেকে। গ্রিক ভাষায় মেগাস অর্থ অনেক বড় এবং সোরাস অর্থ টিকটিকি বা সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী।

এর এক বছর পর ইংল্যান্ডের সাসেক্সের জঙ্গলে আবিষ্কৃত হলো আরেক সরীসৃপের দাঁত আর হাড়ের ফসিল। এ প্রাণীটির দাঁতের সঙ্গে আধুনিক ইগুয়ানার বেশ মিল পেয়েছিলেন ইংরেজ ভূতত্ত্ববিদ ও জীবাশ্মবিদ গিডিওন ম্যানটেল। সে কারণে অজানা প্রাণীটির নাম দেওয়া হয়েছিল ইগুয়ানোডন (Iguanodon)। ১৮৩৩ সালে আরেকটি প্রাণীর জীবাশ্মের নাম হাইলোসেরাস (Hylaeosaurus) বা জঙ্গলের টিকিটিকি দেন তিনি।

ব্রিটিশ মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা ইংরেজ প্রকৃতিবিদ ও জীবাশ্মবিদ স্যার রিচার্ড ওয়েন এই তিনটি জীবাশ্ম একসঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তিনি বেশ অবাক হয়ে লক্ষ করেন যে অজানা রহস্যময় এই তিন প্রাণীরই বৈশিষ্ট্যে বেশ কিছু মিল রয়েছে। সে কারণে এই তিন প্রজাতিকে সাধারণ একটি শ্রেণিতে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এই তিন প্রজাতির সাধারণ নাম দেন ডাইনোসেরিয়া (Dinosauria)। গ্রিক শব্দ ডাইনোস (deinos) অর্থ ভয়ংকর রকম বড়, আর সেরাস অর্থ টিকটিকি। কাজেই ডাইনোসেরাস অর্থ দাঁড়ায় ভয়ংকর টিকটিকি।