শীত এলেই শীতপ্রধান দেশগুলোতে খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর বা হ্রদে বরফ জমাট বাঁধতে দেখা যায়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তার মধ্যেও মাছ বা জলজ প্রাণীরা দিব্যি বেঁচে থাকে। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব হয়?
উত্তরটা লুকিয়ে আছে পানির বিশেষ এক ধর্মের মধ্যে। সবাই নিশ্চয়ই জানেন, ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় পানি জমে বরফ হয়ে যায়। এখানে একটা বিশেষ ব্যাপার আছে। সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানে মনে হতে পারে, পানির চেয়ে বরফের ঘনত্ব বেশি। কারণ প্রায় বেশির ভাগ পদার্থের জন্যই কথাটা সত্যি। কিন্তু পানির জন্য তা আসলে সত্য নয়। বেশির ভাগ পদার্থ তরল অবস্থা থেকে জমাট বাঁধলে তার ঘনত্ব বাড়ে। কিন্তু পানির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ব্যতিক্রম।
পানির এই বিশেষ ধর্মের কারণে শীতপ্রধান দেশের খাল-বিল, নদী-নালা বা হ্রদের পানি জমে বরফ হয়ে গেলেও তার নিচে তরল পানি থাকে। সেই পানিতে মাছ বা অন্য প্রাণীদের বেঁচে-বর্তে থাকতে কোনো সমস্যা হয় না
হিসেবে দেখা গেছে, পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। আর পানি জমে বরফ হয় প্রায় শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রায়। শীতকালে পানির তাপমাত্রা কমতে কমতে একসময় ০ ডিগ্রি তাপমাত্রা বা তার নিচে নেমে যেতে থাকে। কিন্তু ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পর তাপমাত্রা কমে গেলেও পানির ঘনত্ব আর বাড়ে না। বরং ঘনত্ব কমতে থাকে, কিন্তু আয়তন বাড়ে। অর্থাৎ একই পরিমাণ পানির চেয়ে বরফ বেশি জায়গা দখল করে। (পানি ছাড়াও এই ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য দেখা যায় সিলিকন, গ্যালিয়াম ও প্লুটোনিয়ামে মৌলে।)
পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৪ ডিগ্রির চেয়ে শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রায় পানির আয়তন বাড়ে প্রায় ৯ শতাংশ। কাজেই পানি জমে বরফ হয়ে গেলেও তা স্বাভাবিকভাবে পানির ওপর ভেসে ওঠে। এ কারণেই বরফ পানিতে ভাসে। একই কারণে রেফ্রিজারেটরে বোতলে কানায় কানায় পানি ভরে রাখলে, তা জমে বরফ হলে বোতলটা ফেটেও যেতে পারে।
পানির এই বিশেষ ধর্মের কারণে শীতপ্রধান দেশের খাল-বিল, নদী-নালা বা হ্রদের পানি জমে বরফ হয়ে গেলেও তার নিচে তরল পানি থাকে। সেই পানিতে মাছ বা অন্য প্রাণীদের বেঁচে-বর্তে থাকতে কোনো সমস্যা হয় না।
পানির এই ধর্ম না থাকলে কী হতো? মানে তাপমাত্রা কমতে কমতে হিমাঙ্ক বা তার নিচে নেমে যে বরফ জমাট বাঁধত, তা যদি তরল পানির চেয়ে কম ঘনত্বের না হতো, তাহলে খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর বা হ্রদের তলদেশে জমা হতো।এভাবে একসময় সাগর বা নদীর সব পানিই ধীরে ধীরে পরিণত হতো জমাট বরফে।তাতে পানির তলের কোনো প্রাণীই টিকে থাকতে পারত না।শুধু তাই নয়, পানির ধর্ম অমন হলে, পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশও কখনো সম্ভব হতো না।