জিভ দেখে যায় চেনা

ছবি: সাটারস্টোক
জিহ্বাকে অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। মানুষের জন্য কথাটা আরও বেশি প্রযোজ্য। স্বাদ গ্রহণের জন্য জিহ্বার বিকল্প নেই। খাবার গিলতেও দরকার। তা ছাড়া এ অঙ্গ ছাড়া কথা বলাও সম্ভব নয়। মানুষ ছাড়া প্রাণিজগতের অন্যান্য প্রাণী কথা না বললেও স্বাদ গ্রহণ ও খাবার গেলার কাজে জিহ্বা ব্যবহার করে। কিছু প্রাণী জিহ্বার সাহায্যে আরও অনেক কাজ করে! কোনো কোনো প্রাণীর জিহ্বা এত বিচিত্র যে প্রাণীটা কী, তা না দেখে শুধু জিহ্বার সাহায্যেই চেনা যায়। চলুন, এমন ৭টি প্রাণীর কথা জানা যাক।

১. জিরাফ

ছবি: শাটারস্টোক

আপনার চোখ বা মুখের কোথাও চুলকালে কী করেন? হাত দিয়ে চুলকে নেন। কিন্তু জিরাফ নিজের জিহ্বা দিয়ে চুলকায়—বলা ভালো, চেটে নেয়! এদের জিহ্বা প্রায় ৫৩ সেন্টিমিটার লম্বা। উচ্চতার হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জীবিত এ প্রাণীর জিহ্বার রং গাঢ় বেগুনি। আসলে বেগুনি, নীল ও কালো রং মেশালে যে রং তৈরি হবে, জিরাফের জিহ্বার রং সেরকম। প্রাণীটির জিহ্বা এত লম্বা যে এই অঙ্গের সাহায্য ওরা কানও পরিষ্কার করে।

২. গিলা দানব

ছবি: শাটারস্টোক

দেখতে অনেকটা ঘড়িয়াল বা ছোট কুমিরের মতো। নাম, গিলা দানব। বৈজ্ঞানিক নাম হেলোডার্মা সাসপেক্টাম (Heloderma suspectum)। এদের জিহ্বার ডগায় ঘোড়া বা গরুর খুরের মতো কাটা থাকে। জিহ্বার সাহায্যে এরা বাতাস থেকে গন্ধ নিতে পারে। টিকটিকি প্রজাতির এই প্রাণী ক্ষুধার্ত হলেই বারবার জিহ্বা বের করে। এতে আশপাশে কোনো ছোট প্রাণী, যেমন ব্যাঙ, টিকটিকি, ইঁদুর বা পোকামাকড় পেলে ওরা টের পায়। তারপর জিহ্বার সাহায্যে খপ করে ধরে ফেলে।

৩. প্যাঙ্গোলিন

ছবি: শাটারস্টোক

পৃথিবীর একমাত্র আঁশযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে পরিচিত প্যাঙ্গোলিন। প্রাণীটির মতোই এদের জিহ্বাও অত্যন্ত অদ্ভুত। তবে জিরাফ বা গিলা দানবের মতো এদের জিহ্বা চওড়া নয়, বরং অনেক সরু। জিহ্বা বের হয় মুখের নিচের অংশ থেকে। প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার লম্বা হতে পারে প্যাঙ্গোলিনের জিহ্বা।

৪. সূর্য ভালুক

ছবি: শাটারস্টোক

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুসারে, সান বিয়ার বা সূর্য ভালুকের জিহ্বা ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা। এদের জিহ্বার রং গোলাপি। এই জিহ্বার সাহায্যে কৌশলে মৌচাক থেকে মধু চুরি করতে পারে এরা। এ কারণে এদের মধু ভালুক বা হানি বিয়ার নামেও ডাকা হয়। প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম হেলারক্টোস মালায়ানাস (Helarctos malayanus)।

৫. জলহস্তী

ছবি: গেটি ইমেজ

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মতে, জলহস্তীর ইতিহাস নিয়ে অনেক রহস্য আছে। এদের দৈত্যাকার জিহ্বাও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০১০ সালে জলহস্তী নিয়ে গবেষকেরা কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন। সে সময় একটা বৃদ্ধ ও একটা বাচ্চা জলহস্তীর জিহ্বার দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হয়। সেই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় দ্য অ্যানাটমিক্যাল জার্নালে। সেখানে বলা হয়েছে, ৪৯ বছর বয়সী বৃদ্ধ স্ত্রী জলহস্তীর জিহ্বার দৈর্ঘ্য ছিল ৬০ সেন্টিমিটার। আর ৪ বছর বয়সী পুরুষ জলহস্তীর জিহ্বার দৈর্ঘ্য ছিল ৪৫ সেন্টিমিটার।

৬. পেঙ্গুইন

ছবি: শাটারস্টোক

পেঙ্গুইনের জিহ্বা বেশ অদ্ভুত। অনেকটা ব্রাশের মতো দেখতে। জিহ্বার ওপরের স্তর অনেকটা টুথব্রাশের ব্রেসেলের (ব্রাশের যে অংশটা দিয়ে দাঁত মাজা হয়) মতো। পেঙ্গুইনের জিহ্বায় টেস্ট বাড নেই, কিন্তু প্রচুর ব্রেসেল রয়েছে। এই ব্রেসেলগুলো তন্তুযুক্ত প্রোটিন, যা দিয়ে মানুষের চুল ও নখ তৈরি। স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের মতে, এই ব্রেসেল পেঙ্গুইনকে মাছ ধরতে সাহায্য করে।

৭. সাইমোথোয়া এক্সিগুয়া

ছবি: আলামাই

এ মাছের জিহ্বাটা আসল নয়। জিহ্বার জায়গায় থাকে একটা পরজীবী। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত। একধরনের পরজীবী আছে, যা এ মাছের ফুলকা দিয়ে প্রবেশ করে। তারপর পরজীবীটি তার সাত জোড়া পা দিয়ে মাছের জিহ্বা আটকে ফেলে। ধীরে ধীরে শুকিয়ে ঝরে যায় জিহ্বা। আর জিহ্বার জায়গা দখল করে পরিজিবীটি।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স ও অ্যানিমেল ফান ফ্যাক্টস