বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ৭ পাখি

পৃথিবীতে এমন কিছু পাখি আছে, যাদের আকার আমাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। আবার কিছু পাখি এত ছোট যে বিস্মিত না হয়ে উপায় থাকে না। এই ছোট্ট পাখিগুলো বর্ণিল, কোনো কোনোটি কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে সাহায্যও করে।

এ লেখায় বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ৭ পাখির কথা বলব। জানব এদের আকার, বৈশিষ্ট্য ও আবাসস্থল সম্পর্কে। তাহলে চলুন, উড়ে যাই ক্ষুদ্রতম পাখিদের বিস্ময়কর রাজ্যে।

১. মৌ হামিংবার্ড

মৌ হামিংবার্ড
ছবি: উইকিমিডিয়া

অনুমান করুন তো, একটি পাখি কত ক্ষুদ্র হতে পারে? বিশ্বের সবচেয়ে ছোট পাখি মৌ হামিংবার্ড। এদের পুরুষদের দৈর্ঘ্য মাত্র সাড়ে ৫ সেমি। আকারটা কত ছোট? উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, একটা সাধারণ আপেলের দৈর্ঘ্য হয় ৭ থেকে সাড়ে ৮ সেমি। মানে, এই পাখিগুলো আকারে আপেলের চেয়েও ছোট! এগুলোর ওজন ১.৯৫ গ্রাম। আর স্ত্রী পাখিরা প্রায় ৬.১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে, ওজন হতে পারে ২.৬ গ্রাম। এই আকার এদেরকে সবচেয়ে ছোট উষ্ণ রক্তের মেরুদণ্ডী প্রাণীর খ্যাতিও দিয়েছে। পুরুষ মৌ হামিংবার্ডদের পিঠ ও মাথা উজ্জ্বল নীল রঙের, আর স্ত্রী মৌ হামিংবার্ডের পিঠ ও মাথা ফ্যাকাশে ধূসর, সঙ্গে থাকে সবুজ রঙের ছোঁয়া। মৌ হামিংবার্ডের বৈজ্ঞানিক নাম মেলিসুগা হেলেনি (Mellisuga helenae)।

২. ক্যালিওপ হামিংবার্ড

ক্যালিওপ হামিংবার্ড
ছবি: উইকিমিডিয়া

ক্যালিওপ হামিংবার্ড যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সবচেয়ে ছোট দেশীয় পাখি। ঠোঁট থেকে লেজ পর্যন্ত মাত্র ৭ সেন্টিমিটার বা ২.৭৫ ইঞ্চি লম্বা—মানে, একটা আপেলের দৈর্ঘ্যের প্রায় সমান। এটি বেশির ভাগ হামিংবার্ডের মতো ফুলের মধু এবং ছোট পোকামাকড় খায়। এই ছোট পাখি উজ্জ্বল রঙের জন্য পরিচিত। এদের পিঠ সবুজ, সঙ্গে আছে চকচকে ম্যাজেন্টা পালকের গলা। ক্যালিওপ হামিংবার্ডের বৈজ্ঞানিক নাম সেলাসফরাস ক্যালিওপ (Selasphorus calliope)। 

৩. কস্টার হামিংবার্ড

কস্টার হামিংবার্ড
ছবি: উইকিমিডিয়া

এই তালিকার সর্বশেষ হামিংবার্ড হলো কস্টার হামিংবার্ড। পাখিবিদদের কাছে এটি ক্যালিপ্টে কস্টে (Calypte costae) নামে পরিচিত। কস্টার হামিংবার্ড ছোট প্রজাতির পাখি, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে দেখা যায়। উজ্জ্বল বেগুনি রঙের মাথার জন্য সুপরিচিত। প্রাপ্তবয়স্ক কস্টার হামিংবার্ডের দৈর্ঘ্য মাত্র ৩ থেকে ৩.৫ ইঞ্চি বা ৭.৬ থেকে ৮.৯ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। ডানা ১১ সেমি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পুরুষদের ওজন গড়ে ৩.০৫ গ্রাম, আর স্ত্রী পাখিদের ওজন ৩.২২ গ্রাম। কস্টার হামিংবার্ড খুবই চঞ্চল। ফুল থেকে ফুলে দ্রুত উড়ে মধু সংগ্রহ করে।

৪. মেটেঠোঁট ফুলঝুরি

মেটেঠোঁট ফুলঝুরি
ছবি: উইকিমিডিয়া

মেটেঠোঁট ফুলঝুরির বৈজ্ঞানিক নাম ডাইসিয়াম ট্রাইগোনোস্টিগমা (Dicaeum trigonostigma)। এই ছোট পাখি দেখা যায় ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায়। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৮ সেমি, ওজন হতে পারে ৪ গ্রামের মতো। গায়ের রং ধূসর—জলপাই পিঠ, দেহের নিচের অংশ হালকা জলপাই রঙের, গলায় ময়লা হলদেটে, ফিকে বাদামী পেট। মেটেঠোঁট ফুলঝুরি ফুলের মধু ও ছোট পোকামাকড় খায়। এরা উদ্ভিদের পরাগায়ন ও বীজ ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।

৫. ফায়ারক্রেস্ট

ফায়ারক্রেস্ট
ছবি: উইকিমিডিয়া

ফায়ারক্রেস্ট ছোট, উজ্জ্বল বর্ণের গায়ক পাখি। যুক্তরাজ্যে পাওয়া যায়, তবে ইউরোপের বেশির ভাগ অংশ এবং উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশেও দেখা যায়। দেখা পাওয়া অবশ্য খুব কঠিন, বিরল ঘটনা বলা চলে। এটি রেগুলিডে পরিবারের সদস্য। দ্রুত ডানা নাড়ায়। লম্বা, সরু ঠোঁট রয়েছে। সাধারণ ফায়ারক্রেস্ট খোলা বনভূমি ও বাগানে বাস করে, মধু এবং ছোট পোকামাকড় খায়। লম্বায় ৯.৩ সেন্টিমিটার, ওজন হতে পারে ৫.৫ গ্রামের মতো। পাখি পর্যবেক্ষণকারীরা ফায়ারক্রেস্টের বৈজ্ঞানিক নাম রেখেছেন রেগুলাস ইগনিকাপিলা (Regulus ignicapilla)। এদের গায়ের উজ্জ্বল বর্ণ থেকে এসেছে নামটি। এর অর্থ, আগুনঘেরা ছোট্ট রাজা।

৬. পার্ডালোট

পার্ডালোট
ছবি: উইকিমিডিয়া

ছোপ ছোপ দাগযুক্ত পার্ডালোট পাখিটি পার্ডালোটিডি পরিবারের সদস্য। পূর্ব ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়। এটি ২ হাজার মিটার বা প্রায় ৬ হাজার ৫০০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বাস করে। দৈর্ঘ্যে ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার বা ৩.১ থেকে ৩.৯ ইঞ্চি। সবচেয়ে ছোট এবং সবচেয়ে রঙিন অস্ট্রেলিয়ান পাখিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। কখনও কখনও একে ‘ডায়মন্ড বার্ড’ নামেও ডাকা হয়। এই চটপটে পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম পারডালোটাস পাঙ্কট্যাটাস (Pardalotus punctatus)।

৭. উইবিল

উইবিল
ছবি: উইকিমিডিয়া

উইবিল অ্যাকান্থিজিডি পরিবারের ছোট্ট পাখি। অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডজুড়ে দেখা মেলে এর। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ছোট পাখির একটি এটি। পালকের বর্ণ ধূসর-হলুদ। দৈর্ঘ্যে ৮ থেকে ৯ সেমি বা ৩.১ থেকে ৩.৫ ইঞ্চি হতে পারে, ওজন মাত্র ৫ থেকে ৬ গ্রাম। উইবিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পাখি, কারণ এটি অনেক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম স্মাইক্রোর্নিস ব্রেভিরোস্ট্রিস (Smicrornis brevirostris)। 

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা

সূত্র: ডিসকভার ওয়ার্ল্ড লাইভ, উইকিপিডিয়া