অদ্ভুত হলেও সত্যি
প্রজাপতি যা দেখে, আমরা তা দেখি না
প্রকৃতির সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ও সুন্দর প্রাণীগুলোর মধ্যে প্রজাপতি অন্যতম। পৃথিবীতে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া অন্য ৬ মহাদেশে এগুলো কম-বেশি দেখা যায়। চলুন, এই চমৎকার প্রাণীটি সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
১. অতিরিক্ত ঠান্ডায় উড়তে পারে না প্রজাপতি
স্বাচ্ছন্দ্যে ওড়ার জন্য প্রজাপতির দেহের তাপমাত্রা থাকতে হয় ৮২-১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অর্থাৎ ২৭-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এরা ভালো উড়তে পারে। কিন্তু তাপমাত্রা কমে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৫৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে নামলে এরা আর উড়তে পারে না। কারণ, প্রজাপতি শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। অর্থাৎ এদের দেহের ভেতরে তাপ উৎপাদনের মাধ্যমে শরীরের প্রয়োজনীয় তাপ ধরে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই কোনো এক শীতের সকালে হয়তো দেখবেন প্রজাপতি রোদ পোহাচ্ছে, ডানা কাঁপছে। এভাবে নিজেদের শরীর গরম করার চেষ্টা করে প্রজাপতি।
২. প্রজাপতি মাত্র ১ মাস বাঁচে
প্রজাপতির জীবনের ৪টি ধাপ। ডিম, লার্ভা, পিউপা ও প্রাপ্তবয়স্ক। পিউপা থেকে বের হওয়ার পর সর্বোচ্চ এক মাস বাঁচে প্রজাপতি। তবে সব প্রজাপতির জীবন এত দীর্ঘ হয় না। কোনোটা আবার মাত্র ১৪ দিনেই মারা যায়। কিছু ক্ষুদ্র নীল রঙের প্রাজপতি বাঁচে কেবল কয়েক ঘণ্টা। তবে ব্যতিক্রমও আছে। যুক্তরাজ্যে পেইন্টেড লেডি নামে এক প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া যায়। এরা ৯ মাস পর্যন্ত বাঁচে। কিন্তু সাধারণত এদের জীবনকাল ২-৪ সপ্তাহ মাত্র। জীবনের এই স্বল্প সময়ে এরা শুধু খাদ্য খোঁজে এবং আরও প্রজাপতি উৎপাদনের, অর্থাৎ সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করে।
৩. প্রজাপতি যা দেখে, তা আমরা দেখতে পাই না
প্রজাপতি সাধারণত ১০-১২ ফুটের মধ্যে থাকা ফুল বা অন্যান্য জিনিস সবচেয়ে ভালো দেখে। সঙ্গী ও সঠিক ফুল খুঁজে পেতে অতিবেগুনি রশ্মি ব্যবহার করে এরা। আমরা এই অতিবেগুনি রশ্মি খালি চোখে দেখতে পাই না। মূলত প্রজাপতির চোখে ৬ বা তারচেয়ে বেশি রঙের ফটোরিসেপ্টর বা আলোকগ্রাহী স্নায়ু রয়েছে। এর মধ্যে আছে অতিবেগুনি রশ্মি, বেগুনি, নীল, সবুজ ও লাল। মানুষের রেটিনায় যেমন নীল, সবুজ ও লাল রঙের কোন কোষের সঙ্গে রড কোষ থাকে, তেমনি প্রজাপতির থাকে এই ছয় বা তার চেয়ে বেশি রঙের ফটোরিসেপ্টর।
৪. প্রজাপতিরা শুধু তরল পান করে!
প্রাপ্তবয়স্ক প্রজাপতি শুধু তরল পান করতে পারে। আরও স্পষ্ট করে বললে, এরা শুধু ফুলের অমৃত পান করে। কারণ, প্রজাপতির মুখ এমনভাবে থাকে যে পান না করে চিবানোর কোনো উপায় নেই। তবে ব্যতিক্রমও আছে। বিশ্বের মাত্র ১ ভাগ প্রজাপতি মাঝেমধ্যে মাংস খায়। হেলিকোনিয়াস ক্যারিথোনিয়া (Heliconius charithonia) প্রজাতির প্রজাপতি অনেক সময় শুঁয়োপোকা হত্যা করে খায়। এই শুঁয়োপোকাই পরিণত হলে রূপান্তরিত হয় প্রজাপতিতে।
৫. প্রজাপতির ডানা স্বচ্ছ
পৃথিবীর সবচেয়ে রঙিন প্রাণীদের মধ্যে প্রজাপতি অন্যতম। প্রায় প্রতিটি প্রজিপতির ডানায় বাহারি রঙ দেখা যায়। ফলে দূর থেকে প্রজাপতি দেখলে মনে হয়, এদের ডানা অনেকটা পুরু। আসলে তা নয়। প্রজাপতির ডানা আসলে স্বচ্ছ (তবে, যেমনটা বললাম, বর্ণিল)। ডানার একপাশ থেকে অন্য পাশ স্পষ্ট দেখা যায়। অনেকগুলো রঙের মিশ্রণে প্রজাপতির ডানা তৈরি বলে এমনটা মনে হয়।