চিতা কীভাবে এত দ্রুত দৌড়ায়

চিতার শারীরিক গঠনের কারণেই এরা এত দ্রুত ছুটতে পারে

ফর্মুলা ১ রেসিং কার দেখেছেন নিশ্চয়ই। রেসিংয়ের জন্য গাড়িগুলো বিখ্যাত। চিতাকে এই রেসিং কারের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম স্তন্যপায়ী প্রাণী এটি। ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে পারে। কিন্তু কেন চিতা এত দ্রুতগামী? এমন কী বৈশিষ্ট্য আছে এর, যে কারণে এতটা দ্রুত দৌড়াতে পারে?

চিতার শারীরিক গঠনের কারণেই এরা এত দ্রুত ছুটতে পারে। দ্রুত দৌড়ানোর পেছনে এদের ওজনও বড় ভূমিকা রাখে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ চিতার গড় ওজন ৪১-৪৫ কেজি। আর নারী চিতার ওজন ৩৬-৩৭ কেজি। এর পাশাপাশি চিতার দ্রুত দৌড়ানোর আরও ৫টি কারণ রয়েছে। সেগুলো হলো: 

১. লম্বা লেজ

চিতার লেজের দৈর্ঘ্য ৬০-৯০ সেন্টিমিটার। এদের পেশীবহুল লেজটি মাথা ও শরীরের দৈর্ঘ্যের অর্ধেক। লেজের এই ভারসাম্যের কারণে চিতা অতি দ্রুত দৌড়াতে পারে।

চিতার ফুসফুস অনেক বড় থাকে

২. নমনীয় মেরুদণ্ড

চিতার মেরুদণ্ড অত্যন্ত নমনীয়, অনেকটা চাবুকের মতো। ফলে সহজেই যেকোনো দিকে বাঁকতে পারে প্রাণীটি। দৌড়ানোর সময় শিকার যে দিকে ছোটে, চিতাও সেদিকে বাঁক নেয় অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে। ছোটার মাঝে লাফ দেওয়ার সময় নমনীয় মেরুদণ্ড এদের সহায়তা করে। 

আরও পড়ুন
মাথা থাকে একদম সোজা। শরীর যেদিকেই ঘুরে যাক না কেন, মাথা ঘোরায় না এরা। শিকারীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দৌড়ায়। এরা ৩ সেকেন্ডের মধ্যে ০ থেকে প্রায় ৯৬ কিলোমিটার গতি তুলে ফেলতে পারে দৌড়ানোর সময়।

৩. বড় ফুসফুস

চিতার ফুসফুস অনেক বড় থাকে। আমরা কিছুটা দৌড়ালেই হাঁপিয়ে যাই। কিন্তু আমাদের ফুসফুস যদি আরও বড় হতো, তাহলে এত সহজে হাঁপাতাম না। দীর্ঘ সময় শ্বাস ধরে রাখতে পারতাম, পাশাপাশি শ্বাস-প্রশ্বাসের বিষয়টি আরও সহজ হতো। ফলে একটানা আরও অনেক সময় দৌড়ানো যেত। চিতার জন্য বিষয়টা তা-ই। দৌড়ানোর সময় এরা মিনিটে প্রায় ৬০-১৫০ বার শ্বাস নেয়। 

দুই পা একসঙ্গে মাটিতে থাকে না। মাঝেমধ্যে এদের দুই পা-ই শূন্যে ভেসে থাকে

৪. পা ও নখর

চিতার পা হালকা। এ ছাড়া নখের কারণে এরা দ্রুত দৌড়াতে পারে। কারণ, দ্রুত দৌড়ানোর সময় পিছলে যায় না। নখের সাহায্যে মাটি আঁকড়ে ধরতে পারে। ফলে দৌড়াতে পারে স্বাচ্ছন্দ্যে। 

আরও পড়ুন

৫. লম্বা পা

অন্যান্য বিড়াল জাতীয় প্রাণীর তুলনায় (যেমন বাঘ, জাগুয়ার, সিংহ) চিতার পা লম্বা। এদের পায়ের হাড়ও বেশি প্রসারিত। খেয়াল করলে দেখবেন, দ্রুত দৌড়ানোর সময় চিতার হয় সামনের পা, নয়তো পেছনের পা মাটিতে থাকে। দুই পা একসঙ্গে মাটিতে থাকে না। মাঝেমধ্যে এদের দুই পা-ই শূন্যে ভেসে থাকে। তবে সেটা মাত্র ১ সেকেন্ডের মতো।

ব মিলিয়ে চিতার মতো এমন বৈশিষ্ট্য অন্য কোনো প্রাণীর নেই

এর পাশাপাশি চিতার মাথাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাথা থাকে একদম সোজা। শরীর যেদিকেই ঘুরে যাক না কেন, মাথা ঘোরায় না এরা। শিকারীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দৌড়ায়। এরা ৩ সেকেন্ডের মধ্যে ০ থেকে প্রায় ৯৬ কিলোমিটার গতি তুলে ফেলতে পারে দৌড়ানোর সময়। মূলত এ সব বৈশিষ্ট্যের কারণেই এরা অত দ্রুত দৌড়ায়।

অন্য কোনো প্রাণীর বৈশিষ্ট্য এরকম নয়। কোনো প্রাণীর লেজ লম্বা, কিন্তু ফুসফুস ছোট। আবার কোনোটার হয়তো পা লম্বা, কিন্তু লেজ ছোট। এমন অনেক প্রাণী দেখবেন, যেগুলোর এর মধ্যে প্রায় সব বৈশিষ্ট্যই আছে, কিন্তু ওজন অনেক বেশি। কিন্তু সব মিলিয়ে চিতার মতো এমন বৈশিষ্ট্য অন্য কোনো প্রাণীর নেই। চিতা এ ক্ষেত্রে অনন্য। তাই চিতাই পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী স্তন্যপায়ী প্রাণী। 

সূত্র: ডিসকভার ওয়াইল্ড লাইফ ডট কম ও হাউ স্টাফ ওয়ার্কস  

আরও পড়ুন