জানা-অজানা
বন্ধ দরজা দেখলে বিড়াল ছটফট করে কেন
বিড়াল পোষার অভিজ্ঞতা থাকলে নিশ্চয়ই জানেন, দরজা বন্ধ করলে বিড়াল অস্থির আচরণ করে। দরজার নিচে থাবা দেয়, ডাকাডাকি ও ছটফট করে। এমন করে কেন বিড়াল?
বন্ধ দরজার সামনে বিড়াল দেখলে মনে হয় বুঝি খুব বিরক্ত। দরজার নিচের ফাঁকা জায়গায় বারবার পা বাড়িয়ে দেয়। দরজায় থাবা দেয়, অস্থির হয়ে ডাকাডাকি করে। মাঝেমধ্যে আক্রমণও করে বসে। বন্ধ দরজাকে এত অপছন্দ করে কেন বিড়াল?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিড়াল বহুকাল ধরেই পোষা প্রাণী। কিন্তু তবু এদের মধ্যে বন্য আচরণ রয়ে গেছে। এতে বিড়ালের মালিকেরও কিছুটা ভূমিকা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ডেভিসের ভেটেরেনারি আচরণবিদ কারেন সুয়েদা বলছেন, ‘বিড়াল একদিকে কৌতূহলী প্রাণী। আবার মালিকের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ও আছে। অন্যদিকে বিড়াল জানে না, বন্ধ দরজার ওপাশে কী আছে। সে দরজার অন্য পাশ দেখতে চায়। খুঁজে বের করতে চায়, কী আছে ওপাশে।’
প্রাকৃতিকভাবে কৌতূহলী আচরণ করা বিড়ালের চলাফেরার একটি নির্দিষ্ট সীমানা আছে। ঠিক বাঘের মতো। নিজের টেরিটরি বা এলাকা নিয়ে এই প্রজাতি অনেক সচেতন। বন্য পরিবেশে টিকে থাকতে হলে নিজের সীমানা নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এই সীমানার মধ্যে যা কিছু ঘটছে, তার ওপর নজর রাখতে পছন্দ করে বিড়াল। সাধারণত মালিকের বাড়িই বিড়ালের চলাফেরার এলাকা। বন্য অবস্থায় এরা নিজেদের সীমানায় নিয়মিত টহল দেয়। নিজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার মাধ্যমে বন্য পরিবেশে টিকে থাকার বিষয়টি এদের জিনে রয়ে গেছে। এই স্মৃতির প্রতিক্রিয়া বন্ধ দরজার সামনে এলে প্রকাশ পেতে পারে।
দরজা বন্ধ দেখলে এরা মনে করে, আর কোনো উপায় নেই। চারপাশ নিজের নিয়ন্ত্রণে না থাকাকে এরা ঘৃণা করে। আর পরিবর্তন অপছন্দ করে। দরজার ওপাশে যা ঘটছে, তার সঙ্গে বিড়াল নিজেকে জড়াতে চায় না।
বিড়ালের আচরণবিষয়ক পরামর্শক ইনগ্রিড জনসন বলেছেন, ‘নিজের এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা বিড়ালের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিড়াল এ কাজ পছন্দ করে। এটা ওদের জন্য বাজে আচরণ নয়। বিড়াল শিকারী প্রাণী। আবার শিকার হয়ে যাওয়ার ভয়ও আছে। তাই নিজের এলাকায় নজরদারি করতে থাকলে এরা পরিবেশে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত বোধ করে।’
দরজা বন্ধ থাকলে বিড়ালের অস্থির হওয়ার তিনটি কারণ বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার প্রাণী-আচরণবিদ জেন এরলিচ। দরজা বন্ধ দেখলে এরা মনে করে, আর কোনো উপায় নেই। চারপাশ নিজের নিয়ন্ত্রণে না থাকাকে এরা ঘৃণা করে। আর পরিবর্তন অপছন্দ করে। দরজার ওপাশে যা ঘটছে, তার সঙ্গে বিড়াল নিজেকে জড়াতে চায় না। তবে কী ঘটছে জানতে চায়।
অন্যদিকে নিজের প্রতি মালিকের মনোযোগ উপভোগ করে বিড়াল। দরজা বন্ধ করলে এতে ব্যাঘাত ঘটে। সায়েন্স ডিরেক্ট জার্নালে প্রকাশিত ২০১৭ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বেশির ভাগ বিড়ালের কাছে খাবার বা খেলনার চেয়ে মানুষের সঙ্গ বেশি পছন্দ। আবার বিড়াল বুঝতে পারে না দরজা বন্ধ হওয়াটা একটি সাময়িক ঘটনা।
এমন পরিস্থিতিতে বিড়াল সত্যিই বিচলিত হয়। বিড়ালের এ ধরনের উদ্বেগ কমাতে মালিকরা বিড়ালের চলাফেরার জায়গাটুকুতে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে পারেন। যেমন বাসায় মেহমান এলে অনেকে বিড়ালকে ঘরে আটকে রাখতে চান।
এরা শুধু জানে, এদের যে জায়গাটুকুতে নিজেদের অধিকার ছিল, সেটি আর নেই। যেখানে এরা নিরাপদে ঘুমাত, খেত বা খেলত, হঠাৎ এই সুবিধাটুকু সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই সুবিধাগুলো সরিয়ে নিলে বিড়ালের ভেতরে উদ্বেগ তৈরি হয়।
বন্ধ দরজার পেছনে বিড়ালের অস্বাভাবিক আচরণ বোঝা যায় যখন এরা উন্মত্ত হয়ে ডাকাডাকি করে, কান চ্যাপ্টা করে ফেলে বা হিসহিস শব্দ করে। এমন পরিস্থিতিতে বিড়াল সত্যিই বিচলিত হয়। বিড়ালের এ ধরনের উদ্বেগ কমাতে মালিকরা বিড়ালের চলাফেরার জায়গাটুকুতে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে পারেন। যেমন বাসায় মেহমান এলে অনেকে বিড়ালকে ঘরে আটকে রাখতে চান। সবার মধ্যে আসতে দিতে চান না। এটি বিড়ালকে অস্থির করে তুলতে পারে। এমন কাজ না করাই ভালো। এর পরেও নিজের বিড়ালের আচরণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলে পশুচিকিত্সকের পরামর্শ নিতে পারেন।