আমাদের শরীরের এমন একটা অঙ্গ আছে, যা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অবিরাম কাজ করে। ঘুমের সময় পুরো শরীর স্থির হয়ে গেলেও তার কাজের বিরতি নেই। সেটা হলো হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ড সারাক্ষণ সংকুচিত-প্রসারিত হয়ে দেহে রক্ত সরবরাহ করছে। পুরো দেহ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত রক্ত এনে তা ফুসফুসে পাঠায় হৃৎপিণ্ড। ফুসফুসেই এই রক্ত অক্সিজেন মিশ্রিত হয়ে বিশুদ্ধ হয়। এরপর এই রক্ত আবারও হৃৎপিণ্ডের মাধ্যমে পুরো দেহের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে।
যা-ই হোক, হার্ট অ্যাটাক শব্দটা আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। এটা কিন্তু এমন নয় যে কিছু একটা হৃৎপিণ্ডকে আক্রমণ করে বসল। বরং ব্যাপারটা হলো, হার্ট অ্যাটাক হলে হৃৎপেশির কোষগুলো মারা যায়, কারও আক্রমণে নয়, অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্তের অভাবে। আর হৃৎপেশির এই মৃত্যুর জন্য দায়ী আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, যেমন চর্বিযুক্ত খাবার অতিরিক্ত খাওয়া, শরীরচর্চা না করা, ধূমপান করা। এসব কাজের জন্য করোনারি ধমনিতে কোলেস্টেরল জমা হয়, তৈরি হয় ফ্যাটি প্লাক।
অক্সিজেনযুক্ত রক্ত তখন আর হৃৎপেশিতে পৌঁছাতে পারে না। শুরু হয় বুকে ব্যথা, যাকে বলে অ্যাজাইনা। এরপর আস্তে আস্তে হৃৎপেশির কোষগুলো মারা যেতে থাকে, এরপর হয় হার্ট অ্যাটাক। পুরো শরীরে বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ সচল রাখতে হৃৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে।
এ জন্য বিভিন্ন চিকিত্সাপদ্ধতি আছে। প্রথমে ওষুধ দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করা হয়। তাতে কাজ না হলে সরু হয়ে যাওয়া ধমনিতে বেলুন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। রক্ত বেলুনের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে। এ পদ্ধতিকে বলে অ্যানজিওপ্লাস্টি। এতেও কাজ না হলে কাটাছেঁড়ার আশ্রয় নিতে হয়। রক্ত চলাচলের জন্য বিকল্প পথ তৈরি করা হয়, অর্থাৎ রক্তকে বাইপাস করানো হয়। শরীরের অন্য কোনো জায়গার ধমনি কেটে এনে নির্দিষ্ট জায়গায় জোড়া লাগিয়ে নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিশুদ্ধ রক্ত সহজেই হৃৎপেশিতে পৌঁছে যায়। সার্জারি করার সময় হৃৎপিণ্ড পাম্পিং বন্ধ করে নেওয়া হয়। এ সময় হৃৎপিণ্ডের কাজটা করে হার্ট-লাং বাইপাস মেশিন।
বাইপাস গ্রাফটিং
আমাদের শরীরে এমন অনেক ধমনি আছে যা না থাকলেও সমস্যা হয় না। সেসব ধমনি বাইপাস সার্জারিতে ব্যবহূত হয়। গোড়ালি থেকে কুঁচকির দিকে আসা স্ফ্যানাস ধমনি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া পাঁজরের পেছনের দিকে ছোট ধমনি (ইন্টারনাল ম্যামারি আর্টারি) অথবা বাহুর রেডিয়াল ধমনি ব্যবহার করা হয়।
অচল হৃৎপিণ্ড
কার্ডিওপালমোনারি বাইপাস সার্জারিতে একধরনের মেশিন ব্যবহার করা হয়। মেশিনটি যেমন হার্টের পাম্পিং কাজ করতে পারে, তেমনি গ্যাস আদান-প্রদানও করতে পারে। এরপর মহাধমনিতে ক্ল্যাম্প লাগিয়ে, পটাশিয়াম মিশ্রণ ব্যবহার করে হার্টের সংকোচন-প্রসারণ বন্ধ করা হয়। সার্জন এবার নিশ্চিন্তে নতুন ধমনি জোড়া লাগানোর কাজটা করতে পারেন।