মানুষের ঘাম না হলে কী হতো?

বসন্তকাল শুরু হয়েছে। কদিনের মাঝেই পুরোপুরি বিদায় নেবে শীত। শুরু হবে গরমের মৌসুম। গরমে ঘাম মানুষের একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় ব্যাপার। শুধু কি গরম? শারীরিক পরিশ্রম, ভয়, আতংক এমনকি ঝাল খাবারের কারণেও মানুষ ঘামে। ঘাম ব্যাপারটা শরীরের জন্য উপকারী। দেহের অতিরিক্ত তাপ বের হয়ে যায় ঘামের মাধ্যমে। তবে, ঘামের কিছু বিরক্তিকর দিকও আছে। যেমন শরীর ভিজে যাওয়া, দুর্গন্ধ তৈরি হওয়া ইত্যাদি। ঘামে শরীর ভিজে যাওয়ার বিষয়টি উপেক্ষা করা গেলেও, ঘামের কারণে যে গন্ধ তৈরি হয়, তা অগ্রাহ্য করা কঠিন। কিন্তু মানুষের ঘাম যদি একেবারেই না হতো, তাহলে কেমন হতো?

ঘাম দেহকে শীতল রাখতে সাহায্য করে। মানবদেহে প্রায় ২০ থেকে ৪০ লাখ ঘামগ্রন্থি আছে। এসব গ্রন্থিতে তৈরি হয় লবণাক্ত পরিষ্কার তরল। একেই আমরা বলি ঘাম। ঘাম বের হওয়ার পর তা বাষ্পীভূত হতে শুরু করলে, দেহের তাপমাত্রা কমতে থাকে। শরীর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘামের কোনো দুর্গন্ধ থাকে না। ব্যাকটেরিয়া ঘামের পানিতে অ্যাসিড ভেঙে ফেললে মূলত গন্ধ ছড়াতে থাকে। গড়পড়তা একজন মানুষের দেহ থেকে বছরে ১২ হাজার ৬৩ লিটার পর্যন্ত ঘাম ঝরা স্বাভাবিক। কঠোর শরীরচর্চা করলে দিনে ঘামের পরিমাণ হাফ লিটার থেকে ৪ লিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর বেশি হলে তখন সেটা অস্বাভাবিক বলে ধরা হয়।

এর চেয়ে বেশি হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অতিরিক্ত ঘাম বন্ধ করার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই প্রচলিত আছে।

অর্থাৎ চাইলেই ঘাম বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু দাঁড়ান! বন্ধ করার পর কী হতে পারে সেটুকুও জানা প্রয়োজন।

শরীর ঘাম না হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রথমে অতিরিক্ত গরম লাগতে শুরু করবে। হাঁটাচলা বা উচ্চশক্তির খাবার গ্রহণ করার মতো কাজে বেড়ে যাবে শরীরের তাপমাত্রা। এর সঙ্গে যদি পরিবেশের তাপমাত্রাটাও বেশি থাকে কিংবা অতিরিক্ত পরিশ্রম করা হয়, তাহলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে আরও দ্রুত। অতিরিক্ত এই তাপমাত্রার ফলাফল হিসেবে খুব শিগগিরই জ্বরে আক্রান্ত হবে মানুষ।

সময় যত গড়াবে ত্বক ততই শুষ্ক হবে। আরও বেশি গরম লাগবে। কান লাল হয়ে যেতে পারে এ সময়। দেহের তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকলে বিশেষ একধরণের ক্লান্তি গ্রাস করবে মানুষকে। যাকে বলে তাপীয় ক্লান্তি বা Heat exhaustion। এ সময় শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে, বমি বমি ভাবও হতে পারে। বেড়ে যেতে পারে হৃৎপিণ্ডের গতিও।

শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য এ অবস্থায় প্রয়োজন শীতল পরিবেশ। যেহেতু ঘামের মাধ্যমে শরীর ঠান্ডা হতে পারছে না, তাই বাইরের পরিবেশকেই ঠান্ডা হতে হবে। যেন অতিরিক্ত তাপ পরিবেশ শুষে নিতে পারে। তা না হলে, শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে একসময় হিট স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইটের ওপরে গেলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি শুরু হয়।

এর বেশি তাপমাত্রায় রক্তনালী ও মস্তিষ্কের মধ্যকার পর্দা ফেটে যেতে পারে। ফলে, অবাঞ্চিত বিভিন্ন কোষ ও ব্যাকটেরিয়া মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে। হতে পারে মস্তিষ্কের ভয়াবহ ক্ষতি। এমনকি মস্তিষ্কের কোষও মারা পড়তে পারে এ কারণে, বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এসবের ফলাফল হিসেবে মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। এমনকি প্রাণনাশের আশঙ্কাও আছে ষোলআনা। তাই, ঘাম না হলে বা হঠাৎ ঘাম বন্ধ হয়ে গেলে সেটা মোটেও মানুষের জন্য ভালো কিছু হতো না। অন্তত বর্তমান পৃথিবীতে তা অনেকের জন্য প্রাণঘাতি হয়ে দাঁড়াত। কারণ সবার হাতের নাগালে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকলে, না ঘামার বিষয়টি তেমন প্রাণঘাতি নয়। বরং কিছু দিক থেকে সুবিধারও বটে।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: হোয়াটইফ শো, লাইভ সায়েন্স, উইকিপিডিয়া