ডাইনোসর আকারে যতটা বড় ছিল, বয়স তাদের সে হিসেবে অত বেশি নয়। বিশাল দেহের এই প্রাণী কতদিন বাঁচত, তা নিয়ে বিস্ময়কর তথ্য জানিয়েছেন গবেষকেরা। আগে মনে করা হতো, ডাইনোসরের দেহের বিশালাকৃতি পেতে অনেক বছর সময় লাগত। এক শতাব্দী বা তারও বেশি সময় নিয়ে বড় হতো প্রাণীগুলো। কুমিরের মতো ধীরে ধীরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেত ডাইনোসর। কিন্তু আমরা এখন জানি, ডাইনোসরের বয়স এভাবে বাড়েনি। শরীরও ধীরে ধীরে বিশালাকার হয়নি। এরা দ্রুত বেড়ে উঠত। আর মারা যেত মোটামুটি অল্প বয়সেই।
গবেষকেরা ডাইনোসরের জীবাশ্মের বয়স বের করেন এদের হাড় কেটে। হাড় গবেষণা করে বয়স নির্ণয় করা যায়। কারণ, গাছের মতো ডাইনোসরেরও প্রতি বছর হাড়ের বৃদ্ধির একটা বলয় তৈরি হয়। এই বলয় গণনা করে জানা যায়, টি-রেক্স প্রায় ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে পূর্ণ আকৃতি পেত। আর মারা যেত ২৭ থেকে ৩৩ বছর বয়সের মধ্যে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া ফসিল থেকে জানা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডাইনোসর ছিল আর্জেন্টিনোসরাস। এর ফসিল প্রথম আর্জেন্টিনায় পাওয়া গেছে বলে এমন নাম রাখা হয়েছে। ১৯৮৮ সালে তেল খনির একজন শ্রমিক ফসিলটি খুঁজে পান। গবেষকদের মতে, এই প্রজাতির ডাইনোসর দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনাতেই বাস করত। এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৩০-১৪০ ফুট। ওজন ৭৭-১১০ টন।
গবেষকেরা ডাইনোসরের জীবাশ্মের বয়স বের করেন এদের হাড় কেটে। হাড় গবেষণা করে বয়স নির্ণয় করা যায়। কারণ, গাছের মতো ডাইনোসরেরও প্রতি বছর হাড়ের বৃদ্ধির একটা বলয় তৈরি হয়। এই বলয় গণনা করে জানা যায়, টি-রেক্স প্রায় ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে পূর্ণ আকৃতি পেত।
ওই ফসিল পাওয়ার পর প্রত্নতত্ত্ববিদেরা সেখানে আরও খোঁড়াখুঁড়ি করে ১৫০টি জীবাশ্ম পেয়েছেন। গবেষকদের ধারণা, এই জীবাশ্মগুলো মোট সাতটি আর্জেন্টিনোসরাসের। ক্রিটেশিয়াস যুগের এই ডাইনোসর সর্বকালের সবচেয়ে বড় ডাইনোসর ছিল।
অন্যান্য ডাইনোসরের মধ্যে বিশালাকৃতির দাঁতালো ডাইনোসরের গ্রুপ হলো কার্চারোডন্টোসরিড (Carcharodontosaurid)। এরা ৩৯ থেকে ৫৩ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচত। সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডাইনোসর ব্রন্টোসরাস এবং ডিপলোডোকাসের মতো লম্বা গলার সরোপডের আয়ুও ছিল একই। যদিও এ প্রজাতির মধ্যে কেউ কেউ এক বা দুই দশক বেশি বাঁচত। সম্ভবত ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচতে পারত এরা।
প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গেল কীভাবে? বিজ্ঞানীদের ধারণা, ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে মহাকাশ থেকে আসা একটি বিশাল উল্কাপিণ্ডের কারণে।
মহাকাশ থেকে একটি বিশাল উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে এসে আছড়ে পড়েছিল। এটা প্রায় ৬.৬ কোটি বছর আগের কথা। এই আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় মেক্সিকোর ইউকাতান পেনিনসুলায়। বিশাল একটি খাদ রয়েছে সেখানে। এই খাদের নাম চিক্সুলুব খাদ।
পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম আরও অন্তত চারবার ঘটেছে বলে মনে করা হয়। এগুলোকে বিজ্ঞানীরা বলেন গণবিলুপ্তি। যেসব প্রাণী এই অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি, আকাশ পরিষ্কার হওয়ার আগেই তারা মারা গেছে।
উল্কাটি যখন পৃথিবীতে আঘাত হানে, তখন এটি বায়ুমণ্ডল ধুলাবালু দিয়ে ভরিয়ে দেয়। বিশালাকারের বিস্ফোরণ হলে চারপাশ যেভাবে ধুলায় ঢেকে যায়, অনেকটা তেমন। ফলে বিশাল আকারের এ গর্ত তৈরি হয়। ধুলাবালু চারদিকে অনেক বেশি ছড়িয়ে যাওয়ায় ঢাকা পড়ে গিয়েছিল আকাশ। ফলে সূর্যের আলো মাটি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। এ কারণে পৃথিবীর তখনকার বেশির ভাগ উদ্ভিদ ও প্রাণী মারা যায়, তাপমাত্রা কমে যায় মারাত্মকভাবে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম আরও অন্তত চারবার ঘটেছে বলে মনে করা হয়। এগুলোকে বিজ্ঞানীরা বলেন গণবিলুপ্তি। যেসব প্রাণী এই অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি, আকাশ পরিষ্কার হওয়ার আগেই তারা মারা গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এভাবেই বিলুপ্ত হয়েছে ডাইনোসর। এটি এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ধারণা, যদিও এখনো এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ভূতাত্ত্বিকেরা এই চিক্সুলুব খাদ আবিষ্কার করেছেন। ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ডাইনোসর বিলুপ্ত হওয়ার সময়ে উল্কাপিণ্ডের প্রভাবে তৈরি হয়েছে।