দেহঘড়ি
মাথায়-ঘাড়ে নিজে ব্যান্ডেজ করবেন যেভাবে
মাঝেমধ্যে আমরা সবাই দুর্ঘটনার মুখে পড়ি। পড়ে গিয়ে ব্যথা পাই, রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করা গেলে বড় ধরনের সমস্যার হাত থেকে বাঁচা যায়। ‘দুর্ঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসা’ বইয়ে সেরকমই কিছু তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সম্পর্কে বলা হয়েছে। ক্ষত সৃষ্টি, রক্তপাত, হাড় ভাঙ্গা, পুড়ে যাওয়া কিংবা সামান্য আহত হওয়ার ফলে যা যা হতে পারে, সেগুলোর প্রাথমিক চিকিৎসার উপায় বাতলে দেওয়া হয়েছে এই বইয়ে। বইটি ১৯৭৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে। এরপর ১৯৮২ সালে মির পাবলিশার্স মূল বইটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে। ১৯৮৬ সালে দ্বিজেন শর্মার বাংলা অনুবাদে বইটি প্রকাশ করে মির প্রকাশন। বইয়ের লেখক ভ. ভ. ইউদেনিচ। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।
বৃত্তাকার প্যাঁচানো ব্যান্ডেজ
বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলে ব্যান্ডেজ বাঁধা জায়গায় ব্যান্ডেজের এক পাশ চেপে ধরে ডান হাতে ব্যান্ডেজটি খুলে প্যাঁচাতে হবে। প্যাঁচগুলোর প্রতিটি আগের প্যাঁচের কিছুটা ঢেকে সেটাকে শক্ত করবে নিচের ছবির মতো।
শরীরের যেসব অংশ সুষম নয়, যেমন উরু বা পুরোবাহু; সেখানে ক্ষতসজ্জা ভালোভাবে খাপ খাওয়ানো ও আটকে রাখার জন্য উল্টেপাল্টে প্যাঁচ দিয়ে ব্যান্ডেজ বাঁধতে হবে। নিচের ছবিটি খেয়াল করুন।
মাথার খুলি, পেছনের অংশ ও নিচের চোয়ালের ক্ষতে ব্যান্ডেজ বাঁধা
রোলার ব্যান্ডেজ থেকে ৭০-৮০ সেন্টিমিটার লম্বা একটা টুকরা এমনভাবে মাথার খুলিতে রাখুন, যাতে কানের সামনে সমান লম্বা দুটি ফিতা ঝুলে থাকে। রোগী নিজে বা সাহায্যকারী ফিতা দুটি শক্ত করে টেনে ধরবে। মাথায় কপালের সমতলে কয়েক প্যাঁচ রোলার ব্যান্ডেজ লাগান। ফিতা দুটির প্রান্ত নিচের দিকে টেনে একটির প্রান্ত দিয়ে ব্যান্ডেজটি প্যাঁচান। তারপর তা কিছুটা কোনাকুনিভাবে মাথার পেছনের দিকে ফিতার অন্য মুখের কাছে নিয়ে সেটাও প্যাঁচিয়ে আবার ফিরিয়ে এনে কপালের কাছে মাথার সামনের দিকে চেপে ধরুন। প্রথম ফিতাটি আবার প্যাঁচাতে হবে এবং প্রথমবারের তুলনায় কিছুটা উঁচুতে মাথার পেছনে ব্যান্ডেজটা চেপে ধরতে হবে। এবারে দ্বিতীয় ফিতাটি প্যাঁচান এবং ব্যান্ডেজটিকে মাথার সামনের দিকে বাঁধতে থাকুন। ব্যান্ডেজের প্যাঁচগুলো মাথার খুলির ওপরে মিলতে থাকবে এবং মাথায় টুপির মতো পুরোপুরি ঢেকে দেবে। তারপর খাড়াভাবে প্যাঁচানো ফিতাগুলোর প্রান্ত দুটি থুতনির নিচে বাঁধুন নিচের ছবিটির মতো করে।
ডান চোখের ব্যান্ডেজ
একটি রোলার ব্যান্ডেজ মাথায় বৃত্তাকারে, ডান থেকে বাঁয়ে প্যাঁচিয়ে নিয়ে সেটা আটকাতে হবে। তারপর কোনাকুনিভাবে মাথার পেছনে নিয়ে, ডান কানের নিচ দিয়ে সামনে এনে ডান চোখের ওপরে রাখুন। পাকগুলো যাবে একান্তরভাবে চোখের ওপর দিয়ে ও মাথা প্যাঁচিয়ে, নিচের ছবিটির মতো।
বাঁ চোখের ব্যান্ডেজ
বাঁ চোখের ক্ষতের ক্ষেত্রে ব্যান্ডেজ বাঁধার সুবিধার জন্য বাঁ থেকে ডানে, বাঁ কানের নিচ দিয়ে সেটা আবার সামনে এনে এবং পরে গালের ওপর দিয়ে আহত চোখটি ঢাকতে হবে। চোখের ওপর দিয়ে কোনাকুনি প্যাঁচগুলো বৃত্তাকার প্যাঁচের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে হওয়া প্রয়োজন। ত্রিপত্রিক ব্যান্ডেজ মুখের পাশ ও কান ঢাকতে বা আহত চোয়াল ঠেকানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে ব্যান্ডেজের একপাশ দিয়ে মাথা ঘিরে ২-৩ টি প্যাঁচ দিতে হয়। ব্যান্ডেজ মাথার পেছনে কোনাকুনিভাবে নিয়ে নিচের চোয়ালের নিচ দিয়ে অন্যপাশে বের করুন। তারপর মাথার খুলিতে লম্বালম্বি কয়েকটি প্যাঁচ দিন এবং ব্যান্ডেজটিকে মাথার পেছন থেকে সামনে আনুন। মাথা ঘিরে কয়েকটি বৃত্তাকার প্যাঁচ দেয়ার পর তা মজবুত হবে নিচের ছবির মতো।
ঘাড়ের ব্যান্ডেজ
শ্বাসকষ্ট এড়ানোর জন্য শিথিল ও অপ্রয়োজনীয় প্যাঁচ না দেওয়াই ভালো। ঘাড়ের পেছন ও মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধার জন্য ইংরেজি ‘আট’ সংখ্যার মতো কাঠামোই সবচেয়ে সুবিধাজনক। এটা মাথার সামনের দিকে কোনাকুনি নামিয়ে ঘাড়ের সামনে দিয়ে নিয়ে, ঘাড় প্যাঁচিয়ে কোনাকুনি কপালের ওপর দিয়ে ফিরিয়ে আবার মাথার পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে এনে মাথা ঘিরে গোল প্যাঁচ দিয়ে আটকাতে হয়।
ঊর্ধ্ব প্রত্যঙ্গগুলোর ব্যান্ডেজ
কাঁধের এলাকা ও বাহুর হাড়ের (হিউমেরাস) জন্য একটি স্পাইকা (চার-ব্যান্ডেজ) ব্যান্ডেজ ব্যবহৃত হয়। কাঁধের জন্য স্পাইকা ব্যান্ডেজ বাঁধা হয় এভাবে: ব্যান্ডেজটি সুস্থ দিকের বগলের নিচ দিয়ে বুকের সামনের উপরিভাগে ও আহত কাঁধের পাশ দিয়ে এনে সামনে থেকে পেছনে পাক দিয়ে বগলের সামনে দিয়ে বের করে আবার কাঁধ প্যাঁচিয়ে দিতে হবে। কিন্তু এবার ব্যান্ডেজ বুক প্যাঁচিয়ে পেছনে যাবে। ব্যান্ডেজের প্যাঁচগুলো আগের প্যাঁচের চেয়ে কিছুটা ওপরে ও তার অর্ধেকটা ঢেকে প্যাঁচাতে হবে। কাঁধের গ্রন্থির পুরোটা ও তার ওপরের অংশটি ঢাকা না পড়া পর্যন্ত প্যাঁচ দিতে হবে এবং ব্যান্ডেজের এক প্রান্ত বুকের ওপর আটকানো থাকবে। অনেকটা নিচের ছবির মতো।
কব্জির পেছনে 8 সংখ্যার মতো ব্যান্ডেজ
এটা শুরু করা হয় কব্জির জোড়ার ওপরে চক্রাকার আঁটসাঁট প্যাঁচ দিয়ে। তারপর ব্যান্ডেজ কোনাকুনিভাবে নামিয়ে কব্জির পেছনে নিয়ে করতালুতে আঙুলগুলোর গোড়া দিয়ে কব্জি প্যাঁচিয়ে আবার কব্জিতে এনে মনিবন্ধর (কার্পাস) ওপর দিয়ে কড়ে আঙুলের গোড়ায় আগের প্যাঁচ পেরিয়ে, তারপর কোনাকুনি ওপরে ও আবার কব্জি প্যাঁচিয়ে বাঁধতে হবে। নিচের ছবিটি দেখুন।