প্লাস্টিক ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনা করা কঠিন। এটা আমাদের জীবন অনেক সহজ করে দিয়েছে, সত্যি। কিন্তু নিজেদের সাময়িক স্বস্তির জন্য প্রকৃতিকে ফেলা হচ্ছে ধ্বংসের মুখে। প্লাস্টিক সহজে মাটিতে মেশে না, পানিতে পচে না। পরিবেশে স্বরূপে থেকে যায় বহুবছর। ধীরে ধীরে পরিণত হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক বা ন্যানোপ্লাস্টিকে। হয়ে ওঠে আরও মারাত্মক। এ সমস্যা সমাধানে অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। আবিষ্কার করেছেন বায়োডিগ্রেডেবল বা পচনশীল প্লাস্টিক। সাধারণ প্লাস্টিকের সঙ্গে এর বেশ কিছু পার্থক্য আছে। পচনশীল প্লাস্টিক পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। কিন্তু ঠিক কীভাবে এ প্লাস্টিক মাটির সঙ্গে মিশে যায়? আরও সহজ করে বললে, পচনশীল প্লাস্টিক পচে আসলে কীসে পরিণত হয়?
বায়োডিগ্রেডেবল বা পচনশীল প্লাস্টিকে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক মেশানো থাকে। বিশেষ এ রাসায়নিক মূলত দুভাবে কাজ করে। এক, সরাসরি বিশেষ কিছু অণুজীবকে আকৃষ্ট করে। আর দুই, পরিবেশে প্লাস্টিকের স্বাভাবিক ক্ষয় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এ ক্ষেত্রেও অণুজীবই প্লাস্টিককে ভাঙে, তবে এ জন্য তুলনামূলক বেশি সময় লাগে। যাহোক, এই দুইয়ে মিলে বিশেষ কিছু অণুজীব এ ধরনের প্লাস্টিক গ্রহণ করে খাদ্য হিসেবে। এসব অণুজীবের দেহের এনজাইমের প্রভাবে প্লাস্টিকের রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে যায়।
প্লাস্টিক পচে গেলে, মানে প্লাস্টিকের কণা পুরোপুরি ভেঙে গেলে তৈরি হয় পানি, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেন গ্যাস। তবে প্লাস্টিকের পচন মোটেও সহজ নয়। বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক পচনের জন্য বিশেষ পরিবেশ প্রয়োজন। সাধারণত ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রায় পর্যাপ্ত আর্দ্রতা, বাতাস ও অণুজীবের উপস্থিতি ছাড়া এগুলো পচে না। অর্থাৎ সাগরে বা বাসাবাড়ির আবর্জনার মধ্যে এসব প্লাস্টিক সাধারণ প্লাস্টিকের মতোই অক্ষত থাকে।
আবার কিছু প্লাস্টিক আছে, যেগুলো বাতাসের সংস্পর্শে এলে ভেঙে যায়। এগুলোকে অনেক সময় বায়োডিগ্রেডেবল বলে চালানো হলেও এরা পুরোপুরি পচে না। বরং ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়।
বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক আসলে মন্দের ভালো। প্লাস্টিকের তুলনায় পরিবেশের জন্য ভালো। কিন্তু একেবারে নিরাপদ দাবি করার সুযোগ নেই।
সূত্র: সায়েন্স ফোকাস
লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা