একজন মানুষের চুল কতটা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তা বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন, ব্যক্তির বয়স, জাতি, ডায়েটসহ আরও কিছু বিষয় আছে। তবে সাধারণত সুস্থ মানুষের চুল প্রতিদিন গড়ে ০.০১ ইঞ্চি বা ০.৩৫ মিলিমিটার বাড়ে। সে হিসেবে এক মাসে বাড়ে প্রায় ০.৩ থেকে ০.৫ ইঞ্চি বা ১০ থেকে ১৩ মিলিমিটার। বছরে প্রায় ৩ থেকে ৬ ইঞ্চি বা ১২ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার। তবে চুলের বৃদ্ধির এই হার মূলত শ্বেতাঙ্গদের জন্য বেশি প্রযোজ্য। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষের চুলের ঘনত্ব, গঠনের কোণ এবং বৃদ্ধিতে পার্থক্য দেখা যায়। যেমন, এশিয়ান বা আফ্রিকানদের চুলের ঘনত্ব শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় ভিন্ন। এটা চুলের বৃদ্ধিতেও প্রভাব ফেলে।
ইউরোপের জার্নাল অব ডার্মাটোলজি অনুসারে, আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের চুল মাসে গড়ে ০.২ ইঞ্চি বা ৫ মিলিমিটার বাড়ে। কিন্তু এশীয়দের চুলের বৃদ্ধি তুলনামূলক দ্রুত, মাসে প্রায় ০.৮ ইঞ্চি বা ২০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ২০১৬ সালে জার্নাল অব ডার্মাটোলজি-তে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, এই পার্থক্যের মূল কারণ পরিবেশগত নয়, বরং জিনগত।
আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলের ফলিকলগুলো পাতলা চুল উৎপাদন করতে শুরু করে। ধীরে পাতলা হতে হতে একেবারে বন্ধ হয়ে যায় চুল উৎপাদন। হরমোনের পরিবর্তনেও চুলের বৃদ্ধির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
তবে কারও চুল একই গতিতে সারা বছর বাড়ে না। চুলের বৃদ্ধির তিনটি ধাপ আছে—অ্যানাজেন, ক্যাটাজেন ও টেলোজেন। চুল সবচেয়ে বেশি বাড়ে অ্যানাজেন পর্যায়ে। এই পর্যায় ২-৬ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এরপর ক্যাটাজেন পর্যায়ে বৃদ্ধি ধীর হয়ে আসে এবং টেলোজেন পর্যায়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এই পর্যায়ে প্রায় তিন মাস বিশ্রামের পর পুরনো চুল পড়ে গিয়ে নতুন চুল গজাতে শুরু করে।
ইংল্যান্ডের ক্যাডোগান ক্লিনিকের কনসালট্যান্ট ডার্মাটোলজিস্ট মিয়া জিং গাও। তিনি বলেন, ‘নানা জিনগত ও পরিবেশগত কারণে চুলের বৃদ্ধি প্রভাবিত হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চুলের বৃদ্ধির হার কমতে থাকে, চুল পাতলা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে নতুন চুল ওঠাও বন্ধ হয়ে যায়। নারী ও পুরুষদের টাক পড়ার অন্যতম কারণও এটি।’
আসলে চুলের বৃদ্ধির অন্যতম বড় কারণ হলো বয়স। আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলের ফলিকলগুলো পাতলা চুল উৎপাদন করতে শুরু করে। ধীরে পাতলা হতে হতে একেবারে বন্ধ হয়ে যায় চুল উৎপাদন। হরমোনের পরিবর্তনেও চুলের বৃদ্ধির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যেমন, গর্ভাবস্থায় শরীরে উচ্চমাত্রার ইস্ট্রোজেন থাকায় চুল দ্রুত বাড়তে পারে এবং ঘন দেখায়। তবে মানসিক চাপ বা অসুস্থতার কারণে চুলের বৃদ্ধি হঠাৎ থমকে যেতে পারে। সাধারণত সুস্থ মাথার ত্বকে ৮০ ভাগ চুল সক্রিয়ভাবে বেড়ে ওঠে। কিন্তু বড় ধরনের মানসিক বা শারীরিক ধাক্কা—যেমন বড় কোনো অস্ত্রোপচার, সংক্রমণ, হরমোনের পরিবর্তন, হঠাৎ ওজন কমানো বা আয়রনের ঘাটতি—এসবের ফলে ৭০ ভাগ চুলই বিশ্রাম পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এর ফলে বেশি বেশি চুল পড়া শুরু হয়।
বছরে প্রায় ৩ থেকে ৬ ইঞ্চি বা ১২ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার। তবে চুলের বৃদ্ধির এই হার মূলত শ্বেতাঙ্গদের জন্য বেশি প্রযোজ্য। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষের চুলের ঘনত্ব, গঠনের কোণ এবং বৃদ্ধিতে পার্থক্য দেখা যায়।
পাশাপাশি বছরের বিভিন্ন সময়ে চুলের বৃদ্ধির হার পরিবর্তিত হতে পারে। ১৯৯১ সালে ব্রিটিশ জার্নাল অব ডার্মাটোলজির এক গবেষণায় দেখা গেছে, মার্চ মাসে চুলের বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি থাকে। এরপর ধীরে ধীরে তা কমে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে এমনটা হতে পারে। ঠান্ডা আবহাওয়া চুলের গ্রোথ ফলিকলে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা বৃদ্ধির গতি কমিয়ে দেয়। তবে এই গবেষণাটি মূলত যুক্তরাজ্যের কিছু সংখ্যক শ্বেতাঙ্গ পুরুষের ওপর করা হয়েছিল, তাই এটি সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
এছাড়া, সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করলে চুলের বৃদ্ধির হার বাড়ে। বিশেষ করে, আয়রন, ভিটামিন ডি ও ভিটামিন সি-এর অভাব হলে চুলের বৃদ্ধি ধীর হয়ে যেতে পারে। তাই চুল ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।