কম বয়সীদের মধ্যে কেন ছড়িয়ে পড়ছে ক্যানসার

৫০ বছরের নিচে যাদের ক্যানসার ধরা পড়ছে, তাঁদের ক্যানসারকে বলা হচ্ছে প্রারম্ভিক ক্যানসার বা আর্লি-অনসেট ক্যানসার

ক্যানসার আক্রান্তের ঘটনা সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে দেখা যেত। তবে ইদানীং কম বয়সীদের মধ্যেও ক্যানসার ধরা পড়ছে। আমাদের আশপাশেই এমন পরিচিত মানুষ আছেন, যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন অল্প বয়সে। কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থও হয়েছেন। তাঁদের ক্যানসার আক্রান্ত হওয়া কিংবা ক্যানসার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার গল্পগুলো সংগ্রামের।

৫০ বছরের নিচে যাদের ক্যানসার ধরা পড়ছে, তাঁদের ক্যানসারকে বলা হচ্ছে প্রারম্ভিক ক্যানসার বা আর্লি-অনসেট ক্যানসার। এই ক্যানসারের হার বাড়ছে। যদিও আক্রান্তের মোট সংখ্যা এখনো তুলনামূলক কম। তবে এ ধরনের ক্যানসারগুলো সাধারণত বেশি আক্রমণাত্মক হয়। সংবাদমাধ্যমে যারা ক্যানসার নিয়ে লেখা পড়েছেন বা জেনেছেন, তাঁরা অনেক সময় বিভ্রান্ত থাকেন। আমাদের কি ক্যানসার নিয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত? আদৌ ভয়ের কিছু আছে কিনা বা আমাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আছে কিনা, আমরা তা নিশ্চিত হতে পারি না। কারণ আমাদের দেশে সুস্থ থাকা অবস্থায় ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের প্রচলন নেই বা খুব সামান্য পরিমাণে আছে। কীভাবে ক্যানসারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, তা নিয়েও আমাদের সচেতনতা কম।

তরুণদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ বলছেন গবেষকেরা। যেগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির সম্পর্ক রয়েছে। তবে আলাদা করে নির্দিষ্ট কারণ বলা কঠিন। যেমন, প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ক্যানসার বাড়ায় এমন অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস একটি কারণ হতে পারে।

এই প্রশ্নগুলো এমন এক সময়ে করা হচ্ছে, যখন বিজ্ঞান গবেষণার ভবিষ্যৎ অনেকটা অনিশ্চিত। ক্যানসার গবেষণার অনেকটাই হয় যুক্তরাষ্ট্রে। আবার অনেক গবেষণার ‘ফান্ড’ আসে ওই দেশ থেকে। ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানাবিধ ফান্ড কমিয়ে দিয়েছে। আগামী চার বছর গবেষণায় কতটা ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।

গবেষকেরা মনে করেন, প্রারম্ভিক ক্যানসার সম্ভবত অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অস্বাস্থ্যকর জীবনধারার সঙ্গে জড়িত। গবেষকেরা বলছেন, তরুণদের মধ্যে ক্যানসার ধরা পড়ার হার বাড়ছে। এর কারণ কেবল বেশি বেশি স্ক্রিনিং করানো নয়। আগে কম স্ক্রিনিং হতো, এখন বেশি হয়—এ ধারণা সঠিক নয়।

আরও পড়ুন

কম বয়সে ক্যানসার আক্রান্তের এই বৃদ্ধি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। এই প্রবণতাকে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ব্রিগহ্যাম অ্যান্ড উইমেন’স হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট ও মহামারিবিদ শুজি ওগিনো বলেছেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক এক্সপোজার।’ এর মানে, আমরা এমন কিছুর সংস্পর্শে বারবার আসছি, যা আমাদের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। একবার দুবার নয়, এই এক্সপোজার চলছে বছরের পর বছর ধরে।

প্রারম্ভিক ক্যানসার সম্ভবত অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অস্বাস্থ্যকর জীবনধারার সঙ্গে জড়িত

শুজি ওগিনোর গবেষণায় দেখা গেছে, সব পরের প্রজন্ম আগের প্রজন্মের চেয়ে কম বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকছে। এখনকার ৪০ বছর বয়সী কারও শিগগিরই ক্যানসার ধরা পড়ার আশঙ্কা তাঁর বাবা-মায়ের চেয়ে বেশি।

তরুণদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ বলছেন গবেষকেরা। যেগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির সম্পর্ক রয়েছে। তবে আলাদা করে নির্দিষ্ট কারণ বলা কঠিন। যেমন, প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ক্যানসার বাড়ায় এমন অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস একটি কারণ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি অ্যালকোহল গ্রহণও ডিএনএতে ক্ষতিকর পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি অলস জীবনযাপন এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত স্থূলতারও ভূমিকাও থাকতে পারে। প্লাস্টিক পণ্যের রাসায়নিকের সংস্পর্শ নিয়েও উদ্বেগ আছে। যদিও এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫-৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ২০ শতাংশেরও কম কোলোরেক্টাল ক্যানসার নিয়মিত স্ক্রিনিং করেন। ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকেই কাজ থেকে ছুটি পেতে অসুবিধায় পড়েন। কেউ কেউ খরচ নিয়ে চিন্তিত থাকেন।

এই সমস্যার সমাধান শুধু প্লাস্টিকের কাপ এড়িয়ে চললেই সমাধান হয়ে যাবে না। এটি আমাদের সম্মিলিত আচরণ ও পরিবেশগত এক্সপোজারের ফল। প্রতিটি ক্যানসারের ঘটনার পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। শুধু ফাস্ট ফুড বা পরিবেশ দূষণ নয়, জেনেটিকস এবং কিছু সময় দুর্ভাগ্যও ক্যানসার আক্রান্তের পেছনে ভূমিকা রাখে।

যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫-৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ২০ শতাংশেরও কম কোলোরেক্টাল ক্যানসার নিয়মিত স্ক্রিনিং করেন

ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ও প্রয়োজনীয়তা নিয়েও গবেষকদের মধ্যে কিছু প্রশ্ন রয়েছে। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন—গড় ঝুঁকির মানুষেরা ৪০ বছর বয়স থেকে স্তন ক্যানসার এবং ৪৫ বছর বয়স থেকে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের স্ক্রিনিং করানো শুরু করুন। কিন্তু বাস্তবে এই পরামর্শ মানেন এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। আমাদের দেশে এই সংখ্যা সামান্য।

যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫-৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ২০ শতাংশেরও কম কোলোরেক্টাল ক্যানসার নিয়মিত স্ক্রিনিং করেন। ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকেই কাজ থেকে ছুটি পেতে অসুবিধায় পড়েন। কেউ কেউ খরচ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। গবেষকেরা এখনো বিতর্ক করছেন, স্ক্রিনিং শুরু করার সর্বোত্তম বয়স কোনটি? কীভাবে পরীক্ষা আরও সহজলভ্য করা যায়, এ নিয়েও কাজ চলছে। অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ বা ক্যানসার পরীক্ষার ঝুঁকি এড়ানো যাবে কীভাবে, তা নিয়েও আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা তৈরি হলে বেশ কিছু জীবন রক্ষা পাবে।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

আরও পড়ুন