তেলাপোকা কি পারমাণবিক বিস্ফোরণে বাঁচতে পারে?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ লগ্ন। ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের ওপর আক্ষরিক অর্থেই যেন ভেঙ্গে পড়লো নরক। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পারমাণবিক বোমায় সে সময় দুটি শহরের প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার থেকে ২ লাখ ২৬ হাজার নিরীহ মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। ধুলোয় মিশে গিয়েছিল শহরের অন্যান্য স্থাপনা, প্রাণ বৈচিত্র্য। কথিত আছে, এই ধ্বংসযজ্ঞের মাঝে টিকে গিয়েছিলো ক্ষুদ্র এক পতঙ্গ। যাকে আমরা তেলাপোকা নামে চিনি।

তেলাপোকা অনেকের কাছেই বিভীষিকার নাম। নিরীহ এই পতঙ্গ আমাদের তেমন ক্ষতি করে না। কিন্তু ফড়ফড় করে উড়ে এসে গায়ে পড়লে চমকায় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তেলাপোকা মারার জন্য তাই নানা কীটনাশকের ব্যবহার দেখা যায় পৃথিবীজুড়ে। এসব কীটনাশকের কাছে কুপোকাতও হয় তেলাপোকা। প্রশ্ন হলো, তেজস্ক্রিয় বোমার মাঝে কি আদৌ বেঁচে ছিল? থাকলে তা কীভাবে সম্ভব হলো?

এসব প্রশ্নের উত্তরও তখনই খুঁজেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তেলাপোকা কতোটা তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সহ্য করতে পারে, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন তাঁরা। জাপানে ফেলা দুটি বোমা থেকে প্রায় ১০,০০০ রেডন শক্তি বিকিরণ নির্গত হয়েছিল। গবেষণাগারে যখন এই পরিমাণ শক্তি বিকিরণের মাঝে তেলাপোকা রাখা হলো, তখন দেখা গেল সেটা দিব্যি বেঁচে আছে। পরে শক্তি বিকিরণের পরিমাণ ১০ গুণ বাড়িয়ে ১ লাখ রেডনে নেওয়া হল। তখন আর তেলাপোকা বাঁচেনি। মানুষের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সহ্যক্ষমতা অবশ্য এত বেশি নয়। সর্বোচ্চ ৮০০ রেডন পর্যন্ত মানুষ নিতে পারে। এর বেশি হলে আর বেঁচে থাকা সম্ভব হয় না।

তেলাপোকার এই অবিশ্বাস্য সহ্য ক্ষমতার পেছনে কারণও আছে। এদের কোষচক্র খুবই সরল এবং ধীরগতি সম্পন্ন। অর্থাৎ, মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় তেলাপোকার দেহে কোষ বিভাজনে প্রক্রিয়াটি ধীরে হয়। কোষ যখন বিভাজিত হয়, তখন সেটা সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় থাকে। তেলাপোকায় বেলায় এই পদ্ধতিটি ধীর হওয়ায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণ এদের তেমন ক্ষতি করতে পারে না।

এ তো গেল তেজস্ক্রিয় বিকিরণের কথা। কোনো সন্দেহ নেই মানুষের চেয়ে তেলাপোকার এই বিকিরণ সহ্যক্ষমতা অনেক বেশি। কিন্তু পারমাণবিক বোমাতে তেলাপোকার কিছু হয় না, এটা অতিরঞ্জিত। বিকিরণ ছাড়াও পারমাণবিক বোমার থেকে প্রচণ্ড তাপ ও কম্পন সৃষ্টি হয়। যা তেলাপোকার মতো অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের নিমিষেই পুড়িয়ে বা ছিন্নভিন্ন করতে সক্ষম।

বর্তমান পৃথিবীর পারমাণবিক বোমাগুলো জাপানে ফেলা বোমার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। এসব বোমা থেকে নির্গত বিকিরণের পরিমাণও কয়েক গুণ বেশি। তাই এখন পারমাণবিক বিস্ফোরণের পর তেলাপোকা বাঁচতে পারবে কিনা সেটা এক প্রশ্ন।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস ম্যাগাজিন