ইলেকট্রিক ঈল মাছ স্পর্শ করলে শক লাগে কেন

ইলেকট্রিক ঈল মাছছবি: সংগৃহীত

ইলেকট্রিক ঈল মাছ নিজেদের শরীরে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে। তাই স্পর্শ করলে শক লাগে। এটাই এই প্রশ্নের সবচেয়ে সহজ উত্তর। কিন্তু কীভাবে মাছগুলো নিজেদের শরীরে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে?

ঈল মাছ পাওয়া যায় দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনে। সাধারণত নদীর নিচের স্তরে থাকা কাদামাটিতে এদের বাস। তবে মাঝেমধ্যে ওপরের স্তরেও দেখা যায়। মূলত খাবার সন্ধানে ওপরের দিকে আসে। শিকারকে সামনে পেলে ইলেকট্রিক শক দিয়ে আহত করে। তারপর শিকারকে গিলে খায়। নিজেদের দেহে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ তৈরির জন্য মাথা ও লেজ বাঁকিয়ে কাছাকাছি নিয়ে আসে। অনেকটা ইংরেজি ইউ (U) অক্ষরের মতো। মাথার অংশ ধনাত্মক এবং লেজের অংশ ঋণাত্মক দিক হিসেবে কাজ করে। এতে ঈল মাছের শরীরে প্রায় ৬০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। শিকারকে আহত বা মেরে ফেলার জন্য এই পরিমাণ বিদ্যুৎই যথেষ্ট। যেকোনো মানুষও এই শকে মারা যেতে পারে। ৬০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ কতটা মারাত্মক তার একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। আমরা বাসাবাড়িতে সাধারণত যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি, তা ২২০ ভোল্টের। বুঝুন তাহলে!

কিন্তু ঈল মাছের শরীরে কেন বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়? আসলে বিদ্যুৎ তৈরির জন্য ঈল মাছের শরীরে তিন জোড়া অঙ্গ থাকে। অঙ্গগুলোর নাম প্রধান অঙ্গ, হান্টারস বা শিকারী অঙ্গ ও স্যাচস অঙ্গ। এই অঙ্গগুলো ঈল মাছকে দুই ধরনের বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। বেশি ভোল্টের বিদ্যুৎ ও কম ভোল্টের বিদ্যুৎ। এই অঙ্গগুলো ঈল মাছের শরীরের হাজার হাজার বৈদ্যুতিক সেল দিয়ে তৈরি। কোষগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত থাকে। ফলে মাথা ও লেজ কাছাকাছি নিলেই ধণাত্মক ও ঋণাত্মক দিক মিলে তৈরি হয় বিদ্যুৎ।

ইলেকট্রিক ঈল মাছ
ছবি: উইকিপিডিয়া

তবে নিজেদের শরীরে তৈরি বিদ্যুতে ঈল মাছের কোনো ক্ষতি হয় কিনা বা তারা নিজেরাই এ বিদ্যুতে শখ খায় কিনা, তা এখনো আবিষ্কার করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। অনেক বিজ্ঞানীই সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তাঁদের মতে, ঈল মাছের শরীরে আছে চর্বির স্তর। হয়ত সেই চর্বিই ঈলকে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের হাত থেকে রক্ষা করে।

সাধারণত বিদ্যুৎ ২০ মিটারের বেশি দূরে কাজ করে না। কিন্তু ওই ২০ মিটারের ক্ষেত্রের মধ্যে কোনো মাছ চলে এলে সেগুলো শক খায়।

আরেকটি প্রশ্ন আপনার মাথায় আসতে পারে। ঈল মাছের তৈরি এ বিদ্যুৎ কি পানিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে? বৃষ্টি হলে বিদ্যুতের তার ছিড়ে পানিতে পড়লে যেমনটা হয়, সেরকম। আসলে ঈল মাছের তৈরি বিদ্যুৎও পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তা খুব বেশি জায়গা জুড়ে নয়। সাধারণত বিদ্যুৎ ২০ মিটারের বেশি দূরে কাজ করে না। কিন্তু ওই ২০ মিটারের ক্ষেত্রের মধ্যে কোনো মাছ চলে এলে সেগুলো শক খায়। তবে ওই ক্ষেত্রের বাইরে থাকলে কোনো সমস্যা নেই। আপনি যদি বিদ্যুতের তার ছিড়ে নদীতে ফেলে দেন, তাহলে নদীর সব মাছ কিন্তু মারা যাবে না। কারণ সব পানি তো বিদ্যুতায়িত হবে না। ঈল মাছের বিষয়টাও অনেকটা সেরকম।

ঈল মাছের ব্যাপারে সব রহস্য বিজ্ঞানীরা এখনো সমাধান করতে পারেননি। তাই সব বিষয় এখনো স্পষ্ট নয়। হয়তো ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: সায়েন্টিফিক আমিরিকান, উইকিপিডিয়া