ফটোফিচার
প্রাচীন আরও ৭ জলদানব
একসময় পৃথিবী দাপিয়ে বেড়িয়েছে ডাইনোসরের মতো বিশালাকার সব প্রাণী। তারপর হঠাৎ উল্কাপিণ্ডের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায় ডাইনোসর। এগুলো ছিল মূলত স্থলজ প্রাণী। তবে ডাইনোসরের মতো কিছু দানবাকৃতির জলজ প্রাণীও ছিল এককালে। বহু বহুকাল আগেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেগুলো। এরকম ৭টি প্রাগৈতিহাসিক সামুদ্রিক দানবকে নিয়েই এ আয়োজন।
সামুদ্রিক বিচ্ছু
প্রাচীনকালের এই প্রাণী ইউরিপ্টেরিডস নামে পরিচিত। দেখতে বিচ্ছুর মতো বলে সামুদ্রিক বিচ্ছুও বলা হয়। এরা ছিল আর্থোপোডা পর্বের প্রাণী। ছবিতে আধুনিক বিচ্ছুর মতো ছোট দেখালেও এরা ছিল আকারে বিশাল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ইউরিপ্টেরিডসের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। সেটা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আকারে এগুলো পূর্ণবয়স্ক মানুষের চেয়েও বড় ছিল। কোনো কোনোটা দৈর্ঘ্যে ছিল ৮ ফুটের বেশি। এরা পার্মিয়ান যুগে (২৯.৮৯ কোটি - ২৫.১৯ কোটি বছর পর্যন্ত) পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে বিলুপ্ত হওয়ার আগে ২০ কোটি বছর দাপিয়ে বেড়িয়েছে পৃথিবীর সমুদ্র।
ইথিওসোরাস
একটা ডলফিন ও একটা ঘড়িয়ালের কথা কল্পনা করুন। এবার ভাবুন, ডলফিনের মাথার জায়গায় যদি ঘড়িয়ালের মাথাটি কেটে লাগানো হয়, তাহলে কেমন দেখাবে? ইথিওসোরাস দেখতে অনেকটা সেরকম ছিল। হতে পারে, এই ইথিওসোরাস থেকে পরিবর্তন হয়ে ধীরে ধীরে ডলফিন এসেছে। এই ভয়ঙ্কর প্রাণী প্রায় ২৫ কোটি বছর আগের পৃথিবীতে ছিল। প্রায় ৯ কোটি বছর আগে এটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা ইথিওসোরাসের শুধু মুখের হাড়ের জীবাশ্ম পেয়েছেন। হাড়টা প্রায় ৮৫ ফুট লম্বা ছিল। ভাবুন, যে প্রাণীর শুধু মুখটা নীল তিমির আকারের, তার পুরো দেহটা কত বড় হবে!
টুলি দানব
টুলি দানবের বৈজ্ঞানিক নাম টুলিমনস্ট্রাম গ্রেগারিয়াম (Tullimonstrum gregarium)। তবে এই প্রাণীটি ছিল বেশ অদ্ভুত দেখতে। দেখে মনে হচ্ছে, দেহটি ছিল নরম তুলতুলে। লেজের কথা বাদ দিলে অনেকটা তিমির মতো। তবে এর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, চোখগুলো মুখে নয়, রয়েছে পিঠের কাছে। তাও আবার ৫টা চোখ! আর লেজটা যদি দেখেন, শরীরের তুলনায় একদম চিকন, গরুর লেজের মতো। তবে লেজের শেষ প্রান্তটা কাঁকড়ার পায়ের মতো, কাঁকড়া যে পা দিয়ে চিমটি দিয়ে ধরে, অনেকটা সেরকম। দেখতেই যেন ভয় লাগে, বিশেষ করে এর চোখের অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট মিউজিয়ামের তথ্য মতে, আজ থেকে প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে এ প্রাণী পৃথিবীতে ছিল।
এলিয়েন গোল্ডফিশ
যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওবায়োলজির ইমেরিটাস অধ্যাপক সাইমন কনওয়ে মরিস ২০০৫ সালে অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড জিওফিজিকস জার্নালে একটা নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। সেখানে মরিস এই প্রাণীটিকে ‘এলিয়েন গোল্ডফিশ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি মজা করে বলেছিলেন, ‘এই প্রাণীটি কোনো গ্যালাক্সি থেকে অন্য গ্যালাক্সিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ক্লান্ত হয়ে এলিয়েনরা পৃথিবীতে ফেলে গেছে।’ কার্বনিফেরাস যুগে (৩৫.৮৯ কোটি বছর থেকে ২৯.৮৯ কোটি বছর আগে) এগুলো পৃথিবীতে ছিল। দেখতে অনেকটা নীল তিমির মুখের মতো। প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম টাইফ্লোয়েসাস ওয়েলসি (Typhloesus wellsi)।
ব্যাসিলোসরাস
ব্যাসিলোসরাস ৩.৭৪ কোটি থেকে ৩.৩৯ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে ছিল। সামুদ্রিক এই দৈত্য দেখতে সাপের মতো, অনেকটা মোসাসরের মতোও বলা যায়। এর শরীর ৮৯ ফুট প্রসারিত ছিল। ব্যাসিলোসরাস অর্থ ‘রাজ টিকটিকি’।দেখতে যেমনই হোক না কেন, এরা মোটেও সরীসৃপ ছিল না। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়াম অব প্যালিওন্টোলজি অনুসারে, ব্যাসিলোসরাস স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং এরা ছিল তিমির আত্মীয়।
ফানজিংশানিয়া রেনোভাটা
পটকা মাছ দেখে থাকবেন হয়তো। খালে-বিলে প্রায়ই এ মাছ ধরা পড়ে। প্রাচীন যুগের এই প্রাণী দেখতে পটকা মাছের মতোই। তবে এটা পটকা মাছের মতো ছোট প্রাণী নয়। এদের শরীরে পাখনার জায়গায় রয়েছে বড় বড় কাঁটা। এরা আসলে ছিল হাঙর প্রজাতির মাছ। সিলুরিয়াম যুগে (৪৪.৩৮ কোটি থেকে ৪১.৯২ কোটি বছর আগে) বর্তমানের দক্ষিণ চীন সাগরে এই দানবীয় প্রাণীটি ছিল।
মেগালডন
দেখতে হাঙরের মতো। হাঙরের প্রাচীন প্রজাতিই এই মেগালডন। সম্প্রতি সমুদ্রে ঘুরতে গিয়ে এক কিশোর মেগালডনের দাত খুঁজে পেয়েছে। সেই দাঁতের জীবাশ্ম থেকে জানা গেছে, প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে এরা সমুদ্রে রাজত্ব করে বেড়াত। তবে বর্তমানের হাঙরের চেয়ে মেগালডন ছিল অনেক বড়—দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। প্রায় ৮০ ফুট দীর্ঘ ছিল লম্বায়। এদের প্রিয় খাবারের মধ্যে ছিল বর্তমানের তিমি।