মধুবাজের মধু চুরি

এ দেশে কত রকম, কত ধরনের পাখি। রং-বেরঙের এসব পাখি নিয়ে লিখেছেন পাখিবিশারদ ও প্রকৃতিবিদ শরীফ খান…

মধুবাজ

পথের হাত দশেক ওপর দিয়ে চলে গেছে আমগাছের মোটামোটা ডালপালা। ওই ডালেই বড়মতো একখানা মৌচাক। বেশ মধু জমেছে। আমগাছটি যাদের, তারাই মৌচাকটির মালিক। রাতদিন পাহারা থাকে—নইলে রাতে এসে পাড়ার দুষ্টু ছেলেরা মৌচাক কেটে নিতে পারে চুরি করে। চাক-কাটা মধুর স্বাদই আলাদা।

অমাবস্যা ও পূর্ণিমার আগে আগে মৌচাক মধুতে টইটম্বুর হয়ে ওঠে। মৌচাক কাটার সময় বা গোন হচ্ছে ওটা। অন্য সময়েও চাক কাটা যায়, কিন্তু মধু কম মেলে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় মৌমাছিরা সব মধু নাকি খেয়ে ফেলে। চারদিন পরেই পূর্ণিমা। চাকের মালিকেরা তাই হুঁশিয়ার খুব। পাড়ার ছোট ছেলেগুলো দূর থেকে মৌচাকে ঢিল ছুড়ে মজা পায়। ঢিল বেশি পড়লে মৌমাছিরা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে অনেক সময় মৌচাক ছেড়ে চলে যায়। বাগে পেলে ছেলেপুলেদের আচ্ছামতন হুলও ফোটায়।

একটি বাজপাখি কিছুদিন ধরে ঘুরঘুর করছে মৌচাকটির চারপাশে। কিন্তু ও উড়ে এলেই বাড়ির হাঁস-মুরগিগুলো চিৎকার জুড়ে দেয়। বাড়ি মালিকেরা দৌড়ে আসে। বাজটির স্বভাব জানে তারা। ঢিল ছুড়ে তাড়িয়ে দেয় ওকে।

মধুবাজ
অলংকরণ: হাশেম খান (২০০৮)

মাঠ পাড়ি দিয়ে বাজটি আজ সকাল সকাল চলে এল। দূরের জামগাছটিতে বসে উঁকিঝুঁকি মেরে দেখল কিছুক্ষণ। তারপর সাবধানে উড়ে এসে বসল পথের পাশের কাঠবাদাম গাছটিতে। ঘাড় মাথা টানটান করে দেখতে লাগল মৌচাকখানাকে। মাথার পেছনের ছোট খোপাটা জেগে গেছে উত্তেজনায়। চোখ হয়ে গেছে লাল।

পথের দুই পাশজুড়েই এখানে সারি সারি গাছ। দুই পাশ থেকেই বড় বড় গাছগুলো ডালপালার হাত মেলে দিয়ে পথের মাথার ওপরে যেন সবুজ চাঁদোয়া তৈরি করেছে। নিচের ফাঁকা জায়গাটা টানেলের মতো হয়ে উঠেছে। ওই টানেল ধরেই বেরিয়ে যাবার পরিকল্পনা আঁটছে বাজটি। চোখে লোভ জ্বলছে।

এই যে বাজটি, তার নামও মধুবাজ। ইংরেজি Oriental Honey-Buzzard। সার্থক নাম। মৌচাক ভাঙে খুব কৌশলে। একখানা বড় চাকে বারবার হামলা করে নানাভাবে। আমি বেশ কয়েকবার ওদের মৌচাক ভেঙে মাটিতে ফেলার আশ্চর্য কৌশল দেখেছি।

একজন-কৃষক তার গরুর পাল তাড়িয়ে ওই পথেই চলেছে মাঠের দিকে। একটু বাদেই বাজটির নিচ বরাবর এসে পড়বে। এত কম দূরত্বে বসে থাকা নিরাপদ নয় জেনেই বাজটি তড়িঘড়ি তার অপারেশনটা চালাতে মনস্থ করল। ডাল থেকে ঝাঁপ দিয়ে নেমে সে টানেল ধরে চলল সাঁ সাঁ বেগে। মৌচাকটির পাশ কেটে বেরিয়ে যাবার সময় সে একটি পা বাড়িয়ে ধাক্কা মারল। চাকের বিশাল একটা অংশ ভেঙে পড়ল মাটিতে মৌমাছিসহ। মৌমাছি প্রচণ্ড গুঞ্জন তুলে ধর ধর করে পিছু নিল বাজটির। বাজটি বিমানের বেগে পাখা দিয়ে মৌমাছি তাড়াতে তাড়াতে টানেল ধরে বেরিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। এদিকে আগুয়ান কৃষক ও তার গরুর পালকে শত্রু ভেবে ছেঁকে ধরল মৌমাছিরা। আচমকা আক্রান্ত কৃষক আকাশ ফাটানো চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ল ধপাস করে। গরুর পাল লেজ তুলে ছুটল দিকবিদিকে। মৌমাছি ঘিরে ফেলেছে কৃষককে। উঠে দাঁড়াল সে, চেচাঁতে চেঁচাতে ছুটল কাছের পুকুরটার দিকে। পুকুরে নেমে ডুব দিয়ে থেকেও রক্ষা পেল না। ডুব দিয়ে আর কতক্ষণ থাকা যায়! মাথা তুলতেই ক্রুদ্ধ মৌমাছিরা হুল ফোটাতে লাগল। ওরা জলের ওপরে ঘুরপাক খাচ্ছে মহাগুঞ্জন তুলে।

মধুবাজের বৈজ্ঞানিক নাম Pernis ptilorhyncus। শরীরের মাপ ৬৫ থেকে ৭২ সেন্টিমিটার। ওজন ১ থেকে ১.৭৫ কেজি।

ওই কৃষক বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিল। ডাঙায় উঠে তার শরীর থেকে তোলা হয়েছিল অসংখ্য মৌমাছির হুল। বেহুঁশের ঘোরে ভুল বকছিল সে। হাসপাতালে সাত দিন থেকে তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিল লোকটি।

এদিকে বাজটি কিন্তু সেদিনই ঘণ্টাখানেক পরে চোরের মতো ফিরে এসেছিল ঘটনাস্থলে। লোভাতুর চোখে সে দেখেছিল পথের ওপরে পড়ে আছে মধুভরা মৌচাক। চাক থেকে গড়ানো মধুতে পিঁপড়ে লেগেছে। আমের ডালের চাকের মৌমাছিরা শান্ত হয়েছে। তখন সে সাবধানে নেমেছিল মাটিতে। কিছুটা হেঁটে গিয়ে নখরে গেঁথে ছিল ভেঙে পড়া মৌচাকটুকু, উড়ে গিয়ে বসেছিল নিরাপদ জায়গায়। তারপর প্রাণ ভরে খেয়েছিল মরা মৌমাছি, মৌমাছির ডিম-বাচ্চা ও মধু।

আরও পড়ুন
মধুবাজের বৈজ্ঞানিক নাম Pernis ptilorhyncus। শরীরের মাপ ৬৫ থেকে ৭২ সেন্টিমিটার। ওজন ১ থেকে ১.৭৫ কেজি। বছরের বিশেষ বিশেষ ঋতুতে এদের শরীরের রং বদলে যায়। আবার বাচ্চারা জন্মে সাদা রং নিয়ে। রং বদলের কারণে এদের শনাক্ত করতে বেশ বেগ পেতে হয়।

এই যে বাজটি, তার নামও মধুবাজ। ইংরেজি Oriental Honey-Buzzard। সার্থক নাম। মৌচাক ভাঙে খুব কৌশলে। একখানা বড় চাকে বারবার হামলা করে নানাভাবে। আমি বেশ কয়েকবার ওদের মৌচাক ভেঙে মাটিতে ফেলার আশ্চর্য কৌশল দেখেছি। চাকের তলায় পৌছে সার্কাসম্যানের মতো উল্টে গিয়েও চাক ভাঙতে পারে। চাকে আঘাত করার আগেই মৌমাছিরা টের পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে ওরা ডানার আঘাতে বহু মৌমাছিকে কুপোকাত করে। এই যে মৌচাক ভেঙে মাটিতে ফেলার কৌশল, তা দেখলে মুগ্ধ হতেই হয়। বোঝা যায়, কতটা বুদ্ধিমান এই পাখি। লেখার শুরুতে যে ঘটনাটার কথা বলেছি, গ্রাম-বাংলায় ওরকম দুর্ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটায় মধুবাজরা। জাতীয় দৈনিকগুলোর পাতায় মাঝেমধ্যে এ ধরনের খবর আমরা দেখতে পাই। এ রকম দুর্ঘটনায় পড়ে মানুষ মরেছে, গরু-ছাগলও মরেছে। আমার গ্রামেই এভাবে আশির দশকে ৬৫ বছর বয়সী একজন কৃষক মারা গিয়েছিল। কিন্তু মধুবাজরা দুর্ঘটনা ইচ্ছে করে ঘটায় না, ওরা ছোঁ মারে খাবার জন্য। ও রকম সময়ে যে কোনো মানুষ বা প্রাণী পড়ে যেতে পারে ক্ষ্যাপা মৌমাছির কবলে।

মধুবাজের ডানার আঘাতে বহু মৌমাছিকে কুপোকাত করে। এই যে মৌচাক ভেঙে মাটিতে ফেলার কৌশল, তা দেখলে মুগ্ধ হতেই হয়।
অলংকরণ: হাশেম খান (২০০৮)

এ তো গেল কান্দিচাক বা গাছের ডালে ঝুলন্ত মৌচাকের কথা। গাছের খোঁড়লে যে অন্য প্রজাতির মৌমাছি মৌচাক গড়ে, ওই চাকও ডাকাতের মতো লুট করে মধুবাজরা। কিশোর ও তরুণ বয়সে খোঁড়লের মৌমাছিদের আকৃষ্ট করার জন্য গাছে মাটির ঠিলা-কলস বেঁধে রাখতাম মাঘ মাসে, ওই ঠিলা-কলস বারোমাসই বাঁধা থাকত (আজও বহু শিশু-কিশোর-তরুণ এই কাজটি করে, মৌচাকও হয়), মৌচাকও হতো। ফিঙেরা মৌমাছি ও ডিমের লোভে কোনো সময় ঢুকে পড়ত ভেতরে।

ফাল্গুন থেকে আষাঢ়ের শুরু পর্যন্ত চাক থাকত—বহুবারই মৌচাক লুট করেছে মধুবাজরা। লম্বা ঠ্যাং ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে একখানা চাক (এই মৌমাছি চিতই পিঠা সাইজের ৫-৭ খানা আলাদা আলাদা চাক বানায়) টেনে এনেই ভোঁ-কাট্টা। এদের পায়ে পালকের গাদা। মৌমাছি হুল ফোটাবে কীভাবে? তবুও ফুটাত চোখের পাশে, ডানার তলায়। কী আর হবে? মধু খেতে গেলে তো হুল খেতেই হবে। ওই মৌচাক লুটের অপরাধে আমি কমপক্ষে ১১ বার মধুবাজকে গুলি করে মেরেছি।

তবে শুধু এরাই নয়, বাংলাদেশের আরও দুটি-চারটি বাজ-ঈগলের মৌচাক ভেঙে মধু খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। মধুবাজেরও প্রধান খাদ্য মধু, মৌমাছি বা মৌমাছির ডিম-বাচ্চা নয়। ওরা মূলত খায় ইঁদুর, ব্যাঙ, তক্ষক, কাঁকড়া, মাছ, মৃত ছোট ও মাঝারি পাখি, ফড়িং ও গিরগিটি। শিকারের জন্য এরা বিল-ঝিল-নদী-হাওড় বা খোলা মাঠের পাশের গাছে বসে থাকে চুপচাপ। চারদিকে চোখ ঘুরায়। শিকার দেখলে হয় ডাইভ দেয়, না হয় আস্তে গিয়ে শিকারের পাশে নামে। শিকার আওতার ভেতরে (গাছে বসে যেটুকু জায়গা ওর নজরে আসে) অন্য কোনো পাখি বা প্রাণী ভয় পেয়ে যদি একটি ইঁদুর বা ব্যাঙ লুকিয়ে পড়ে, তাহলে মহাখাপ্পা হয় মধুবাজ। তেড়ে যায়। অবশ্য ফিঙেকে সমীহ করে চলে।

আমি সুঁইচোরা, নীলকণ্ঠ, পোষা-বিড়াল, খেঁকশিয়াল, শালিক ও সোয়ালো পাখিদের দিকে তেড়ে যেতে দেখেছি মধুবাজকে। ওদের জন্যই ইঁদুর-ব্যাঙ-মাছ ঘাপটি মেরে ছিল। এমনিতে মধুবাজ অলস প্রকৃতির। মানুষকে বেশ কাছে যেতে দেয়। ক্যামেরা দিয়ে ভালো রেঞ্জে পৌঁছে ছবিও তোলা যায়। ওরা মাটিতে নেমে পা দিয়ে মাটি সরিয়ে সরিয়েও শিকার খোঁজে। বোলতার চাকেও মধুবাজকে হানা দিতে দেখেছি আমি। 

আরও পড়ুন
বাঁশের সরু কঞ্চি, সরু পাটকাঠি, মোটা লতা, ধানের নাড়াও থাকে। বাসার মাপ ৩০ সেন্টিমিটার × ২৭ সেন্টিমিটার, গভীরতা ৫-১০ সেন্টিমিটার। কোনো রকম বিঘ্ন না ঘটলে একই বাসায় বছর বছর ওরা ফিরে আসে। ডিম সাধারণত ২টি, ৩টি ও ১টি দৈবাৎ।

বয়স্ক মধুবাজকে খাঁচায় আটকে পোষা হয়। সর্বশেষ যে খাঁচাবন্দি পোষা মধুবাজটিকে আমি ও তানভীর খান নরসিংদী জেলার চরসিন্ধুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখেছিলাম, ওটা ছিল কম বয়সী। অনুমান করি, উড়তে শেখার মাসখানেক পরেই বিলের পাড়ের গাছে বসা অবস্থায় এক তরুণের এয়ারগানের গুলিতে মাটিতে পড়ে। অকারণে গুলি করায় মনস্তাপে তরুণ ওকে বাড়িতে এনে চিকিৎসা করে খাঁচায় রাখে। মধুবাজটি সুস্থ হয়ে ওঠে এবং খাঁচায় বসে রোজ রোজ সে আধা কেজি করে গরুর মাংস খেতে থাকে। ওই তরুণ আমাকে খবর দেন। আমি চরসিন্ধুর যাই। তরুণ পর্যবেক্ষক পাখিটির মাপ-জোকসহ খুঁটিনাটি সব তথ্য টুকে রাখেন। আনুষ্ঠানিকভাবে আমি ও তানভীর পাখিটিকে উড়িয়ে দিই মুক্ত আকাশে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মধুবাজটি ভালো ছিল, শিকার করছিল। ওর বুকে রঙ মাখানো হয়েছিল, ওই তরুণ তাই পর্যবেক্ষণে রাখতে পারছিল ওকে।

এখানে শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে দুটি কথা বলতে চাই। খেয়ালের বশে অকারণে এয়ারগানের গুলিতে বহু পাখি মারা পড়ে। অনেক শিশু-কিশোর আছে—ভালো গুলতিবাজ। তারাও অহেতুক পাখি মারে। আহত পাখিরা পরে ধুকে ধুকে মরে। পাখিরা কত সুন্দর! সব পাখিই প্রকৃতির বন্ধু আর প্রকৃতি না থাকলেও কোনো প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারবে না।

এরা বাসা বাঁধে মাঝারি বা উঁচু গাছে। দুইজনে মিলে বাসা সাজায়। উপকরণ মূলত কাঁচা বা শুকনো গাছের সরু ডাল-পালা।
ছবি: উইকিপিডিয়া

মধুবাজটির যে মাপ-জোক চরসিন্দুর থেকে নেওয়া হয়েছিল, তা থেকে কিছুটা উল্লেখ করছি। ঠোঁটের আগা থেকে মাথা-পিঠ হয়ে লেজের ডগা পর্যন্ত লম্বা ৫৮ সেন্টিমিটার। মেলা অবস্থায় ডানপাখার শেষ প্রান্ত থেকে পিঠ হয়ে বাম পাখার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ৪৮ সেন্টিমিটার। সেই মধুবাজটিকে মুক্ত করা হয় ২০০১ সালে।

মধুবাজের বৈজ্ঞানিক নাম Pernis ptilorhyncus। শরীরের মাপ ৬৫ থেকে ৭২ সেন্টিমিটার। ওজন ১ থেকে ১.৭৫ কেজি। বছরের বিশেষ বিশেষ ঋতুতে এদের শরীরের রং বদলে যায়। আবার বাচ্চারা জন্মে সাদা রং নিয়ে। রং বদলের কারণে এদের শনাক্ত করতে বেশ বেগ পেতে হয়। তবে মোটামুটি মধুবাজের বুজানো ডানার আগা বা প্রান্ত কালো। পিঠ, ডানার উপরিভাগ ও লেজের ওপরটা সাদাটে বাদামি, তার ওপরে কালচে রঙের টান জায়গায় জায়গায়। ঘাড়-মাথা সাদাটে বা সাদাটে বাদামি। পা সাদা। এদের মাথার পেছন দিকে খোপা আছে। উত্তেজিত হলেই ওই খোপা খাড়া হয়ে ওঠে। এমনিতে বোঝা যায় না। বুক-পেট সাদাটে বাদামি বা বাদামি ধূসর অথবা শুধু সাদাটে। এই রঙের ওপর সোজা বা পাথালি কালচে বাদামি টান থাকে। লেজে দুইটি স্পষ্ট ও তাতে একটি অস্পষ্ট সাদা রঙের বৃত্ত আছে। মধুবাজের মেয়ে ও পুরুষ দেখতে এক রকম। বাসা বাঁধার সময় ছাড়া সাধারণত দুটিকে একত্রে দেখা যায় না।

আরও পড়ুন
পিঠ, ডানার উপরিভাগ ও লেজের ওপরটা সাদাটে বাদামি, তার ওপরে কালচে রঙের টান জায়গায় জায়গায়।
ছবি: উইকিপিডিয়া

এরা বাসা বাঁধে মাঝারি বা উঁচু গাছে। দুইজনে মিলে বাসা সাজায়। উপকরণ মূলত কাঁচা বা শুকনো গাছের সরু ডাল-পালা। বাঁশের সরু কঞ্চি, সরু পাটকাঠি, মোটা লতা, ধানের নাড়াও থাকে। বাসার মাপ ৩০ সেন্টিমিটার × ২৭ সেন্টিমিটার, গভীরতা ৫-১০ সেন্টিমিটার। কোনো রকম বিঘ্ন না ঘটলে একই বাসায় বছর বছর ওরা ফিরে আসে। ডিম সাধারণত ২টি, ৩টি ও ১টি দৈবাৎ। ডিমের রঙ খড়িমাটির মতো সাদা তাতে বাদামি ও লালচে ছিটছোপ। দুজনে পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফোটে ২৫ থেকে ৩০ দিনে। বাচ্চা উড়তে শেখে ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর। ওড়ার কয়েকদিন আগে তারা বাসায় থেকে পাখার ব্যায়াম শুরু করে। এদের বাচ্চারা বেশ দুষ্টু হয়। মা-বাবার মুখের খাবার আগেভাগে নেওয়ার জন্য ডানা-ঠোঁট দিয়ে মারামারি করে, তাতে একটি বাচ্চা অনেক সময় বাসা থেকে পড়ে যায়। পড়ে-যাওয়া বাচ্চাটির দিকে খেয়ালই করে না মধুবাজরা। বাসা থেকে কেউ একটি ডিম চুরি করলেও বোধ হয় টের পায় না ওরা।

মধুবাজ বাংলাদেশে আজও সন্তোষজনক হারে আছে। খাদ্যসঙ্কট বা বাসা বাঁধার গাছের অভাব নেই। অভাব শুধু নিরাপত্তার।

মৌচাক ভাঙা অমন কুশলি এক শিকারি পাখিকে আমরা কী নিরাপত্তা দিতে পারি না? যে আমাদের পরম বন্ধু। বন্ধুকে ভালো রাখাই তো উচিত সকলের।

লেখক: প্রকৃতিবিদ ও পাখিবিশারদ

* লেখকের বাংলাদেশের পাখি (৩য় খণ্ড), শিশু একাডেমি (২০০৮) থেকে নেওয়া

আরও পড়ুন