রাতের আঁধারে নিঃশব্দে উড়ে বেড়ায় প্যাঁচা। এই পাখি শিকার ধরতে যেমন দক্ষ, তেমনই রহস্যময়। প্যাঁচার শান্ত চোখের তীক্ষ্ণ চাহনি মানুষের মনে কিঞ্চিৎ ভয় সৃষ্টি করতে পারে। রহস্যময় চেহারার কারণে অনেকে পাখিটিকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন বলেও মনে করেন!
কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য প্যাঁচাকে অন্য সব পাখি থেকে আলাদা করেছে। নিঃশব্দে উড়তে পারা তেমনই এক বৈশিষ্ট্য। বিবিসি আর্থের এক ভিডিওতে দেখা যায়, কবুতর ও পেরিগ্রিন ফ্যালকন পাখির ওড়ার যে শব্দ হয়, সে তুলনায় প্যাঁচা প্রায় নিঃশব্দে উড়তে পারে। কিন্তু প্যাঁচার এত নিঃশব্দে ওড়ার পেছনে রহস্য কী?
বাতাসের প্রবাহ থেকে সৃষ্টি হয় শব্দ। এই প্রবাহ যত বেশি, শব্দও হয় তত বেশি। কবুতরের ক্ষেত্রে যেমন এর শরীরের তুলনায় ডানা ছোট, তাই কবুতরকে ভেসে থাকতে ডানাগুলো দ্রুত ঝাপটাতে হয়। ফলে বাতাসে অনেক বেশি প্রবাহ তৈরি হয়, তাই শব্দ সৃষ্টি হয় বেশি। পেরিগ্রিন ফ্যালকনের ডানা শরীর থেকে বড় হওয়ায় এরা উড়তেও পারে খুব দ্রুত। এদের গতির কারণে বাতাসের প্রবাহ বেশি হয়, সঙ্গে শব্দও সৃষ্টি হয় বেশি, যা খুব সহজেই আমাদের কানে আসে।
কিন্তু প্যাঁচার ডানাগুলো বেশ লম্বা ও প্রশস্ত। আর শরীরও খুব হালকা ও ছোট। তাই শুধু আলতোভাবে ডানা ঝাপটানোর মাধ্যমে প্যাঁচা অনায়াসে নিঃশব্দে বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। শুধু ডানার আকারই নয়, প্যাঁচাদের পালকের বিশেষ গঠনও তাদের নিঃশব্দে ওড়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এদের ডানার সামনের প্রান্তে ছোট ছোট খাঁজ থাকে, যা বাতাসের প্রবাহকে ভেঙে দেয়। ফলে সাধারণ পাখিদের মতো শোঁ শোঁ শব্দ তৈরি হয় না। এ ছাড়া প্যাঁচার পালক অত্যন্ত নরম ও তুলতুলে, যা বাকি সব শব্দকে আরও বেশি শোষণ করে। ফলে প্যাঁচাদের উড্ডয়ন প্রায় পুরোপুরি নিঃশব্দ হয়ে যায়।
গবেষকেরা মনে করেন, প্যাঁচাদের এই বিশেষ অভিযোজন মূলত শিকার ধরার সুবিধার্থে ধীরে ধীরে হয়েছে। রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দে উড়তে পারা তাদের জন্য বড় ধরনের সুবিধা দেয়। কারণ এতে তারা সহজে শিকারকে ফাঁকি দিতে পারে। পাশাপাশি, তাদের উন্নত শ্রবণশক্তি ও নিখুঁত অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষমতা আরও কার্যকর হয়। কারণ তারা নিজেরা কোনো শব্দ তৈরি না করেই শিকারের আওয়াজ শুনতে পারে ভালোভাবে।
প্যাঁচাদের ডানার গঠন, পালকের বিশেষত্ব এবং শব্দ শোষণ করার ক্ষমতা তাদের অন্যান্য পাখিদের চেয়ে আলাদা করেছে। প্রকৃতির এই নিখুঁত অভিযোজন সত্যিই বিস্ময়কর।